Tuesday 19 March 2013

নীরব ঘাতক বিষণ্নতা


বিষণ্নতা

বিষণ্নতা খুবই বাস্তব এবং সাধারণ মানসিক রোগ। এই রোগটি চিকিৎসাযোগ্য। ডিপ্রেশন আপনার কোনো দোষ নয়, দুর্ভাগ্যও নয়। তাই আপনি একা নন এবং আপনি সেরে উঠতে পারবেন। তবে ডিপ্রেশনের ভয় একটাই তা হলো আত্মহত্যা করে বসা। মেজর ডিপ্রেশন যাদের হয় তাদের মধ্যে আত্মহত্যার ঝুঁকি থাকে প্রায় ২০ গুণ, যা অন্য সাধারণ মানুষের চেয়েও বেশি। যে ব্যক্তির ডিপ্রেশনের কয়েকবারের ইতিহাস থাকে তার উচ্চ মাত্রায় আত্মহত্যার ঝুঁকি থাকে সব সময়। আর যাদের জীবনে একবারই এ রোগের ইতিহাস থাকে তাদের অবশ্য আত্মহত্যার ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে কম থাকে এবং এরা তুলনামূলকভাবে দ্রুত চিকিৎসায় সাড়া দেয়।
আমাদের সমাজে আশপাশে এমন অনেক ব্যক্তি রয়েছেন যারা দীর্ঘদিন ধরে ডিপ্রেশনে ভুগছেন কিন্তু তারা হয়তো এ কথা জানেনও না যে তাদের চিকিৎসাযোগ্য একটি মনোরোগ হয়েছে। আবার অনেকেই এ রোগ সম্পর্কে জেনেও রোগকে এবং রোগীকে অনবরত অবহেলা করে, চিকিৎসা নেয়ার প্রতি কোনোরূপ আগ্রহ দেখায় না বা চিকিৎসার জন্য এগিয়ে আসে না। অথচ এ রোগটির কারণে আক্রান্ত ব্যক্তি-

  • কাজেকর্মে অবনতি করে
  • খাওয়া-দাওয়ায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলে
  • স্বাস্থ্য খারাপ হয়ে যায়
  • ঘুমের বাড়তি সমস্যা দেখা দেয়
  • সামাজিক দায়-দায়িত্ব এড়িয়ে চলে
  • কোনো কাজ শেষ করতে পারে না
  • লেখাপড়ায় নিয়মিতভাবে খারাপ করতে থাকে
  • সম্পর্কের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে না
  • দাম্পত্য কলহ দেখা দেয়
  • অর্থনৈতিক দৈন্য দেখা দেয়
  • শারীরিক নানা সমস্যায় আক্রান্ত হয়
  • একাকিত্বতায় ভোগার যাতনায় ব্যক্তি কষ্ট পায়
  • ভুল সিদ্ধান্ত নেয়
  • ঝুঁকি নেয়
  • ব্যবসা-বাণিজ্যে ক্ষতি করে বসে
  • বিরক্তি ও ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হয়
  • ভায়োলেন্স বা সমাজবিরোধী কাজকর্ম করতে শুরু করে
  • নেশার প্রতি আগ্রহাম্বিত হয়
  • নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে
  • নিজেকে নিজেই অবমূল্যায়ন করতে শুরু করে
আমেরিকানদের প্রতি ১০ জনে ১ জন ডিপ্রেশনে আক্রান্ত হয়। আমাদের দেশেও এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা কম নয়। এ রোগ কোনো পাগলামি নয়। এটি সাইকোসিস থেকে সম্পূর্ণ আলাদা রকমের। সাইকোসিস হলে অনেক সময় ব্যক্তি উন্মত্ততা শুরু করে, যাকে তাকে আঘাত হানতে পারে, কোনো কোনো সময় ডিপ্রেশনে আক্রান্ত ব্যক্তির বেলায় এমনটি হয় না। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ডিপ্রেশনে আক্রান্ত রোগী মাঝেমধ্যে প্রচণ্ড উত্তেজিত হয়ে উঠতে পারে। এতে করে সে ব্যক্তি অপরের ক্ষতি করার চেয়ে নিজের কোনো ক্ষতি করে ফেলতে পারে।
ডিপ্রেশন মস্তিষেকর অনেকগুলো রাসায়নিক ভারসাম্যহীনতার কারণে ঘটে থাকে। বিশেষ করে এদের মধ্যে নিউরোট্রান্সমিটার উল্লেখযোগ্য। এটি এমন একটি রাসায়নিক যা কিনা প্রভাব ফেলতে পারে ব্যক্তির-
  • মন-মেজাজে
  • রুচিতে
  • শক্তি-সামর্থ্যে এবং
  • ঘুমের সমস্যায় বা নিদ্রাহীনতায়
আবার কিছু কিছু শারীরিক রোগব্যাধির কারণেও ডিপ্রেশন রোগটি সংঘটিত হতে পারে। আবার ডিপ্রেশনের চিকিৎসার জন্য কিছু কিছু ওষুধ ব্যবহার করা হয়। এসব ওষুধ ব্যক্তির ডিপ্রেশন রোগটি সেরে উঠতে সাহায্য করে। তবে এসব কিছু কিছু ডিপ্রেশনবিরোধী ওষুধও উল্টো আরো বেশি ডিপ্রেশন সমস্যা তৈরি করে। তাই এ সময় দরকার উপযুক্ত চিকিৎসা গ্রহণ। কিছু কিছু হরমোন মানুষের মস্তিষেকর বিভিন্ন রাসায়নিকের ওপর নানা ধরনের প্রভাব ফেলে। এসব প্রভাবের কারণেও কোনো কোনো মানুষের ডিপ্রেশন রোগটি হয়। এটি বিশেষভাবে দেখা যায় মেনোপজের পরে নারীদের এবং নতুন মায়েদের। নারীদের মেনোপজ হলো সারা জীবনের জন্য মাসিক বা ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং এটি হয় সাধারণত ৪০ বছর বয়সের পরবর্তী সময়ে। এ সময় নারীর কোনো কিছু ভালো লাগে না, ক্ষুধা কমে যায়, শরীরের লাবণ্য কমে যায়, মেজাজ হয়ে যায় খিটখিটে।
আর নতুন মা অর্থাৎ যারা সন্তান প্রসবের কারণে একই নারীত্বের পরিবর্তনীয় রূপ ধারণ করে অর্থাৎ সন্তান প্রসবের পর নারীদেহের কিছু কিছু হরমোনের ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে যায়। এটা নারীর শরীর-মন উভয়কেই প্রভাবিত করে দেয়। এ সময় কোনো কোনো নতুন মা মানসিক যাতনায় ভুগতে শুরু করে, তার মন-মেজাজেরও দেখা দেয় ব্যাপক পরিবর্তন। এ সময় যারা ডিপ্রেশনে আক্রান্ত হয় তারা নিজের এবং তার নিজের সন্তানের জন্য কোনো কোনো সময় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।
ডিপ্রেশনের কারণ যাই হোক একটি কারণ হোক অথবা একাধিক চিকিৎসা গ্রহণ এসব কারণকে দূর করতে পারে। রোগকে ক্ষতিকর হয়ে ওঠার আগেই সারিয়ে তুলতে শুরু করে।
এখন দিন পাল্টেছে, সেই সাথে পাল্টেছে চিকিৎসাব্যবস্থাও। বিজ্ঞানের নব নব আবিষকারের ফলে আমরা চিকিৎসায় আপডেট থাকতে পারছি। রোগীদেরও এসব আপডেট চিকিৎসা দিতে পারছি। তবে দুর্ভাগ্যের কথা হলো, বাংলাদেশে এখন মানসিক রোগের ব্যাপারে রয়েছে নানা ধরনের কুসংস্কার ও অজ্ঞতা। আর এসব কারণই চিকিৎসাসেবাকে করে তুলছে কঠিন। তবে সবার সমিমলিত সহযোগিতায় মনোচিকিৎসা এগিয়ে চলতে শুরু করেছে।
বিষণ্নতায় আক্রান্ত ব্যক্তির জীবন
বিষণ্নতায় আক্রান্ত ব্যক্তির জীবন হয়ে পড়ে দুর্দশাগ্রস্ত ও গোলযোগপূর্ণ। সচরাচর ঘটে এমন একটি মানসিক স্বাস্থ্য গোলযোগপূর্ণ রোগ ডিপ্রেশন। সারা জীবনের কোনো না কোনো সময়ে এ রোগ হওয়ার ঝুঁকি থাকে ৬ থেকে ২৫ ভাগ। এনআইএমএইচের এক জরিপের অনুসারে, ৯.৫ অথবা ১৮.৮ মিলিয়ন আমেরিকান প্রাপ্তবয়স্ক জনগণ বছরের যে কোনো সময়ে ডিপ্রেশনে আক্রান্ত হয়।
ডিপ্রেশন সাধারণত দুই ধরনের। মেজর ডিপ্রেশন বা বড় ধরনের যেসব লক্ষণ বা সমস্যা ব্যক্তির দৈনন্দিন জীবনে ব্যাঘাত ঘটায় তা হলো-
জীবনের সবগুলো অংশে যেমন
  • কাজকর্মে
  • পরিবার ও সদস্যদের মাঝে
  • খাওয়া-দাওয়ায় ও
  • ঘুমে
অন্যদিকে ডিসথাইমিয়া, যা কিনা আরেক ধরনের ডিপ্রেশন, এটায় রোগী সমস্যাগ্রস্ত হয় তবে তা তেমন প্রকট নয়।
ডিপ্রেশন হলো সারা শরীরের রোগ। এ রোগ আক্রান্ত করতে পারে-
  • আপনার মনকে
  • শরীরকে
  • চিন্তা-ভাবনাকে এবং
  • আচার-আচরণকে
এটি আপনার নিয়মিত খাওয়া-দাওয়ার রুটিনে আঘাত হানতে পারে, আপনার সুখময় ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। আপনি আপনার নিজের সম্পর্কে কী ধারণা রাখেন তাও এ রোগ পাল্টে দিতে পারে এবং আপনি কোনো জিনিস সম্পর্কে কীভাবে চিন্তাভাবনা করেন তাও পাল্টে দিতে পারে।
ডিপ্রেশন রোগটি হালকা মনমরা অবস্থার মধ্য দিয়ে চলে যাওয়ার মতো কোনো সমস্যা নয় এবং এটি এমন কোনো ব্যক্তিগত দুর্বলতার চিহ্নও নয় অথবা এটি এমন কোনো অবস্থা নয় বা রোগ নয় যা কিনা ইচ্ছা করলেই বা চাইলেই চলে যাবে। ডিপ্রেশনে আক্রান্ত ব্যক্তি চাইলেই নিজেকে ভালো থাকার জন্য ধরে রাখতে পারে না অথবা চাইলেই ভালো হতে পারে না রোগ থেকে। তবে চিকিৎসা এ রোগকে দূর করতে প্রধান ভূমিকা পালন করে। চিকিৎসাহীন অবস্থায় ডিপ্রেশন রোগটি স্থায়ী হতে পারে।
সপ্তাহ
মাস বা
বছরের পর বছর
গবেষণায় দেখা গেছে উপযুক্ত চিকিৎসায় রোগী প্রায় শতকরা ৮০ ভাগ ক্ষেত্রেই ভালো হয়ে যেতে পারে।

বিষণ্নতা হলো
অব্যাহত মন-খারাপ থাকা অবস্থা
উদ্বিগ্নতা
শূন্য শূন্য মন মেজাজ
আশাহীনতা, অসহায়ত্বতা
আত্ম-অপরাধবোধ
বেশি বেশি ঘুমানো/ঘুম না হওয়া
বেশি বেশি খাওয়া/কম খাওয়া
অলস হয়ে যাওয়া/ক্লান্তি
অস্থিরতা/বিরক্তি-রাগ-উত্তেজনা
স্মরণ করতে না পারা
সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হওয়া
আত্মহত্যার চিন্তা-ভাবনা বা আত্মহত্যা করা

বিষণ্নতার কারণ

এক কথায় ডিপ্রেশনের কারণ অনেক। তবে কিছু কিছু কারণ বেশি মাত্রায় লক্ষণীয় থাকে তা হলো-
পারিবারিক ইতিহাস থাকা অর্থাৎ এখানে জেনেটিক লিঙ্ক বা বংশগত যোগসূত্রের ব্যাপার-স্যাপার থাকে।
চাপপূর্ণ জীবনের কোনো ঘটনা। চাপপূর্ণ পরিবেশ-পরিস্থিতি এবং অন্যান্য মনোসামাজিক ফ্যাক্টর বা কারণগুলো ডিপ্রেশন ঘটাতে ভালোভাবে ভূমিকা রাখে।
মারাত্মক ক্ষতি (ব্যবসায়িক বা পারিবারিক বা আন্তসম্পর্কীয়)।
দীর্ঘস্থায়ী রোগব্যাধি
কঠিন সম্পর্ক বা সম্পর্কের কাঠিন্যতা
অর্থনৈতিক সমস্যা অথবা
অনাহূত পরিবর্তন জীবনের নানা ক্ষেত্রে এটিও ডিপ্রেশন হওয়ার সম্ভাবনাকে উস্কে দিতে পারে।

বিষণ্নতার সময় রোগীর যা করণীয়
চিকিৎসা গ্রহণ করুন
অন্য মানুষের সাথে থাকতে চেষ্টা করুন, একা একা থাকার চেয়ে আপনার সাথে কেউ থাকলে বা আপনি কারো সাথে থাকলে তা আপনার জন্য খুবই ভালো হবে।
বড় বড় কাজকে ছোট ছোট কাজে ভাগ করে নিন। এক সাথে অনেকগুলো কাজ হাতে নেবেন না। কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করুন। কোন কাজগুলো বেশি গুরুত্বপূর্ণ তা আগে করুন এবং যেটি আপনি সব সময় করতে অভ্যস্ত সেটিই বেছে নিন অযথা না জানা বা কঠিন কোনো কাজের দায়িত্ব নিতে যাবেন না। বেশি বেশি ও কঠিন কঠিন কাজ ব্যক্তির মধ্যে মনোশারীরিক চাপ বা স্ট্রেসের সৃষ্টি করতে পারে। তাই এ ব্যাপারে সচেতন হওয়া করুরি।
নিজের জীবনের জন্য বড় কোনো লক্ষ্য তৈরি করতে যাবেন না, কারণ এটি আপনার ডিপ্রেশনের সমস্যাকে চরমতম  করে তুলতে পারে।
অন্য কারো দায়-দায়িত্ব নিজের ওপর বেশি বেশি না নেয়াই ভালো। কারণ বেশি দায়-দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হলে তা ডিপ্রেশনের অবস্থাকে আরো নষ্ট করতে পারে।
ডিপ্রেশনের চরম অবস্থায় জীবনের বড় বড় সিদ্ধান্ত নেয়া থেকে যথাসাধ্য বিরত থাকুন। যেমন-বর্তমান চাকরি পরিবর্তন করা বা ছেড়ে দেয়া অথবা বিয়ে করা বা ডিভোর্স দেয়া। মনে রাখার মতো কথা হলো ডিপ্রেশন অবস্থায় বা ডিপ্রেশন প্রচণ্ডতার সময় জীবনের বড় বড় বা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত একটু পিছিয়ে দিন অর্থাৎ আপনার ডিপ্রেশন রোগটি ভালো না হওয়া পর্যন্ত আপনি আপনার সব সিদ্ধান্তকে দূরে সরিয়ে রাখুন। প্রথমে সেরে উঠুন, তারপর সব করা যাবে।

জীবনের ভোগান্তি বাড়ায় বিষণ্নতা

বিষণ্নতা এমন একটি রোগ যা কিনা হালকা মাত্রায় হলে ব্যক্তিকে পুরোপুরিভাবে জীবন আনন্দ উপভোগ করতে দেয় না আর বেশি মাত্রায় হলে ব্যক্তিকে নিয়ে যায় আত্মবিনাশের পথে। ডিপ্রেশন যখন মারাত্মক পর্যায়ে থাকে তখন তা অপ্রয়োজনীয়ভাবে ব্যক্তিকে ভোগায় এবং অপ্রয়োজনীয় কষ্ট পেতে হয় আক্রান্ত মানুষটিকে।
বিষণ্নতার পারিবারিক ইতিহাস থাকলে তা অন্য সদস্যদেরও আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি করে দেয় প্রায় ১১ গুণ বেশি মাত্রায়। ডিপ্রেশনের আধুনিক চিকিৎসা কার্যকর হয় প্রায় ৬০-৮০% সময়ে। ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন বা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রায় ২৫%-এরও কম মানুষ ডিপ্রেশনের উপযুক্ত চিকিৎসা গ্রহণ করে। অথচ এ রোগটি অত্যন্ত চিকিৎসাযোগ্য, কিন্তু প্রায়ই ডিপ্রেশনের রোগী এ ব্যাপারে কোনো সাহায্য গ্রহণ করে না বা গ্রহণ করতে চায় না। এর কারণ এটাও থাকে যে তারা তাদের ডিপ্রেশনের সমস্যাকে চিনতে পারে না, বুঝতে পারে না। কেউ কেউ তো নিজেদেরই এ কারণে দোষ দেয়, কেউ বা আবার কারো কাছে তাদের সমস্যার কথা বলতে লজ্জাবোধ করে থাকে।
যদি আপনি মনে করেন যে আপনি বা আপনার আপনজন কেউ ডিপ্রেশনে ভুগছে তাহলে এ ব্যাপারে এগিয়ে আসুন সাহায্য নিন। নিজের বা অন্যের রোগকে মূল্যায়িত করুন তাহলে আপনি এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে সক্ষম হবেন।
কোনো কোনো সময় কেউ কেউ ডিপ্রেশনে ভোগার কারণে এতটাই দুর্বল হয়ে পড়ে বা ভেঙে পড়ে তখন তিনি নিজে এ ব্যাপারে কোনো সাহায্য নেয়ার জন্য এগিয়ে আসতে পারেন।
তাই আপনি যদি এ ধরনের কোনো মানুষকে দেখভাল করেন বা তার খোঁজ-খবর রাখেন তাহলে আপনি নিজেই আপনার প্রিয় মানুষ বা পরিচিত মানুষটির জন্য একজন মনোরোগ চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করুন। প্রয়োজনে তাকে ডাক্তারের কাছে আপনি নিজেই নিয়ে যান, এতে করে ডিপ্রেশনে আক্রান্ত ব্যক্তি আপনার সাথে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার জন্য কিছুটা হলেও আগ্রহবোধ করতে পারে, আর তার এই সামান্য আগ্রহবোধও চিকিৎসা নেয়ার ব্যাপারকে আরো সহজ করে তুলবে।
আপনার যদি ডিপ্রেশন সমস্যাটি দেখা দিয়ে থাকে তাহলে আপনার উচিত হবে একজন উদ্যমী অভিজ্ঞ মনোরোগ চিকিৎসকের খোঁজ নেয়া এবং তার পরামর্শ গ্রহণ করা। আপনি আরো যে কাজটি করতে পারেন তা হলো আপনার নিজেকে কম একাকী, কম বিষণ্ন করে তোলার জন্য চেষ্টা করা। আপনার এই চেষ্টা আপনাকে রোগের সাথে পেরে উঠতে সাহায্য করবে। আপনি যদি মনে করেন যে আপনার ডিপ্রেশন হয়নি কিন্তু আপনি প্রায় সময়ই বিমর্ষ থাকেন তাহলে আপনি আপনার এ অবস্থাকে মারাত্মক ডিপ্রেশনের পথে নিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করতে পারেন এবং আপনার সমস্যার ঝুঁকি কমাতে পারেন ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়ে।
যখন কোনো মানুষ ডিপ্রেশনে ভোগে তাদের ডিপ্রেশনজনিত লক্ষণ উপসর্গ থাকে প্রায় প্রতিদিনই। প্রায় সারা দিনই এবং তা কমপক্ষে দুই সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হয়। তবে ডিপ্রেশনে আক্রান্ত সবারই যে ডিপ্রেশনের সব লক্ষণ উপসর্গ থাকবে এমন কোনো কথা নেই। তবে মন খারাপ থাকা, এটা সাধারণত কমবেশি সবার মাঝেই উপস্থিত থাকে। এমন অনেকেই আছেন দিনের পর দিন কোনো কারণ ছাড়াই মন খারাপে ভুগে থাকে। তারা বুঝতে পারে না যে সুখের উপকরণ সবকিছু থাকা সত্ত্বেও কেন মন খারাপ থাকে সব সময়। অনেকে আবার মন ভালো করার জন্য নানা রকম নেশাদ্রব্যের অপব্যবহার করতে থাকে। এতে করে হয় উল্টো ফল, মন খারাপের কষ্টটা তো চলে যায় না আরো নতুন করে মন খারাপের মাত্রা বেড়ে যায়। তখন ব্যক্তি বুঝতে পারে না কী হচ্ছে। তার ফলে সে আরো নেশা করা বাড়িয়ে দেয়। এভাবে একসময় কেউ কেউ নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ে। তখন একদিকে ডিপ্রেশন আর অন্যদিকে নেশা এ দুটো মিলেমিশে ব্যক্তির অবস্থা খারাপ করে ছাড়ে।
বিষণ্নতায় যখন একটানা মন খারাপ থাকে তখন কোনো কোনো নারী-পুরুষ যৌনতায় নিজেকে জড়িয়ে ফেলে, তারা তাদের মনের খারাপ লাগা কষ্ট দূর করতে যৌনতার সুখে মেতে উঠতে শুরু করে এবং এক সময় তা যৌননেশায় পরিণত হয়ে যায় কারো কারো বেলায়।
ব্যক্তি আসলে বুঝতে পারে না যে তার মানসিক সমস্যা হয়েছে এবং এ সমস্যার একটা নাম আছে এবং চিকিৎসা আছে। চিকিৎসা নেয়ার জন্য বিদেশে যাওয়ার কোনো দরকার নেই। কারণ উন্নতমানের চিকিৎসা আমাদের বাংলাদেশেই পাওয়া সম্ভব। বাংলাদেশে থেকেই এ রোগ চিকিৎসায় ওষুধও পাওয়া সম্ভব। শুধু থাকতে হবে সচেতনতা ও রোগ থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার আগ্রহ বা ইচ্ছা।
বিষণ্নতা যে কোনো বয়সের লোককেই আঘাত হানে, নারীকে আঘাত হানে তেমনি পুরুষকেও এ রোগ মুক্তি দেয় না। ডিপ্রেশনের কারণে মানুষের অনেক টাকা-পয়সার ক্ষতি হয়ে যায় অপ্রয়োজনীয়ভাবে। এ রোগ যার একবার হয় তার আবারও হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আর এ বারবার হওয়ার সম্ভাবনা যদি দূর করা না হয় তাহলে তা থেকে এক সময় বাইপোলার ডিসঅর্ডার নামে আরো মারাত্মক এবং ধ্বংসাত্মক রোগ চলে আসতে পারে ব্যক্তির জীবনে। তাই আপনি যদি ডিপ্রেশনে ভুগছেন বা আপনার কোনো প্রিয় মানুষ যদি এ রোগে ভুগছেন তাহলে দেরি করবেন না, দেরি করলে আত্মহত্যার মতো ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটে যেতে পারে। তাই নিজে সচেতন হোন, অন্যকেও সচেতন করুন।

বিষণ্নতা একটি ক্ষতিকর অসুখ

প্রিয়জনের মৃত্যু, চাকরি হারানো অথবা সম্পর্কের ভাঙন এগুলো সব অভিজ্ঞতাই একজন মানুষের জন্য অসহনীয় বিষয়। এ ধরনের চাপপূর্ণ অবস্থায় দুঃখ বা শোক পালন একটি স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু সাধারণ দুঃখ-শোক বা ডিপ্রেশনজনিত দুঃখ-মন খারাপ একই ব্যাপার নয়। স্বাভাবিক জীবনের দুঃখময় ঘটনার কারণে যে দুঃখ বা শোক দেখা দেয় তা বেশি দিন স্থায়ী হয় না এবং সময়ের সাথে তা কমে আসে, কিন্তু ডিপ্রেশনজনিত ডিসঅর্ডারটি চলতে পারে।
সপ্তাহের পর সপ্তাহ
মাসের পর মাস কিংবা
বছরের পর বছর ধরে
ডিপ্রেশন একটি মারাত্মক ধরনের মেডিকেল অসুস্থতা, যা নেতিবাচকভাবে প্রভাব ফেলে-
অনুভূতিতে
চিন্তা-ভাবনায়
কাজকর্মে
দক্ষতায়
এটা এমনই একটি রোগ যাতে প্রতি বছরই প্রায় ১৭ মিলিয়ন আমেরিকান জনগণ আক্রান্ত হয়। ডিপ্রেশন নারী-পুরুষের মাঝে কোনো বৈষম্য করে না, এটি পুরুষকে আক্রান্ত করে তেমনি নারীকেও ছেড়ে দেয় না এবং শিশু-বৃদ্ধ কাউকেই রেহাই দেয় না।
সব শ্রেণীর মানুষকে আক্রান্ত করে
সব সংস্কৃতির মানুষকেই আঘাত হানে
ধনী-গরিব সবাইকে এটি রোগগ্রস্ত করে
শিক্ষিতকে ছাড়ে না অশিক্ষিতকেও বাদ দেয় না
গবেষণায় দেখা গেছে এ রোগটির পরিপূর্ণ চিকিৎসা হলে তা রোগীকে ৮০-৯০% ক্ষেত্রে উন্নতির পথে নিয়ে আসে, রোগের কষ্ট কমায়, স্থায়িত্ব কমায়।
দুর্ভাগ্যক্রমে মানুষ তাদের যে রোগ হয়েছে বা তাদের লক্ষণ-উপসর্গ প্রকাশ পাচ্ছে তা যে রোগ তা বুঝতেই পারে না। এ ধরনের লোকেরা অনেক সময় তাদের সহকর্মী, বন্ধু-বান্ধব এবং পরিবারের সাথেও এ ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা করতে ভয় পায়। ফলে মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষ ডিপ্রেশনের চিকিৎসাহীন অবস্থায় দিনযাপন করতে থাকে। ফলে তারা তাদের কর্মস্থলে অবনতির অভিজ্ঞতা লাভ করে এবং সংসার জীবন বা সম্পর্কের ফাটলের অভিজ্ঞতাও লাভ করে। আর তাদের এই কঠিন অভিজ্ঞতা ‘চাপপূর্ণ জীবনের ঘটনা’ হিসেবে কাজ করে এবং ডিপ্রেশনকে আরো বাড়িয়ে দেয়।
ডিপ্রেশনের কারণে ব্যক্তির ও পরিবারের বিরাট অর্থনৈতিক ক্ষতি সাধিত হয়। ডিপ্রেশনের কারণে
কাজের অনুপস্থিতি বেড়ে যায়
মেডিকেল খরচ বেড়ে যায় এবং
অকালমৃত্যু দেখা দিতে পারে
এসব নানা কারণে বছরে প্রায় ৪৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতি হয়। অথচ চিকিৎসার মাধ্যমে রোগীর সুস্থতার পাশাপাশি বিরাট অঙ্কের আর্থিক ক্ষতিও রোধ করা সম্ভব।
বিষণ্নতার অনেক ধরনের লক্ষণ বা উপসর্গ থাকে। তবে সবচেয়ে বেশি যে লক্ষণ বা উপসর্গ থাকে তা হলো ‘প্রচণ্ড মাত্রার দুঃখবোধ’ বা মন খারাপ লাগা। ডিপ্রেশনে আক্রান্ত ব্যক্তির দৈনন্দিন জীবন ক্রমে ক্রমে দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। জীবন হয়ে পড়ে বিশৃঙ্খল এবং ঝুঁকিপূর্ণ।
ক্রমাগত ক্লান্তি, আশাহীনতা, অসহায়ত্বতা এবং অপরাধবোধ একজন মানুষের প্রাত্যহিক জীবনকে কঠিনতর করে তোলে। ব্যক্তি কোনো কিছুতেই সুখ পায় না, শান্তি পায় না। এক ধরনের অশান্তি তাকে সব সময় তাড়া করে থাকে। ডিপ্রেশনে আক্রান্ত ব্যক্তির কাছে পৃথিবীটা যেন একটা অন্ধকার জগতে পরিণত হয়ে যায়।
বিষণ্নতা যে কোনো বয়সেই আঘাত হানে, তবে প্রায়ই জীবনের প্রথম দিকটায় এটি বেশি আঘাত হানে। এটা হতে পারে ২৪-৪৪ বছর বয়সের মধ্যে। প্রতি ১০ জন পুরুষের মধ্যে ১ জন এবং প্রতি ৪ জন নারীর মধ্যে ১ জন নারী ডিপ্রেশনের কবলে পড়ে যায়।
পুরুষ মানুষ ডিপ্রেশনের কারণে কর্মস্থলে খারাপ করে চাকরিচ্যুতও হয় অনেক সময়। পুরুষ মানুষ এ সময় মদে আসক্ত হয়ে পড়তে পারে। কোনো কোনো সময় সমাজবিরোধী কাজেও জড়িয়ে পড়তে পারে। আর নারী ডিপ্রেশনের কারণে এলোমেলো হয়ে যায়, সংসার জীবনের দায়-দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হয়। স্বামী সন্তানদের দিকে যত্নময় মমতা ও মনোযোগ কমে যায়। নারীরা বেশি মাত্রায় আত্মহত্যার চেষ্টা করে।
বিষণ্নতা হলে চিকিৎসা করতে হয়। এটি এমন নয় যে নিয়মিত সুষম খাবার গ্রহণ করা হলে নিয়মিত ব্যায়াম করলে বা ছুটিতে কিছুটা সময় পার করলে ডিপ্রেশন চলে যাবে। এগুলোতে ডিপ্রেশন রোগ যায় না তবে এগুলো ডিপ্রেশনের কঠিন উপসর্গগুলোকে সহনশীল করতে কিছুটা সাহায্য করতে পারে। ডিপ্রেশনের চিকিৎসার জন্য ওষুধ গ্রহণ করতে হয় যাকে বলা হয় অ্যান্টিডিপ্রেশান্টস ওষুধ। এ ওষুধ ব্যক্তির মস্তিষেকর রাসায়নিক গোলমালের চিকিৎসা করে রাসায়নিকের ভারসাম্য ঠিক করতে সাহায্য করে। মস্তিষেকর রাসায়নিকের তারতম্যের কারণে ডিপ্রেশন রোগটি দেখা দেয় কোনো কোনো সময়। আবার হরমোনগত সমস্যার কারণে যে ডিপ্রেশনের সৃষ্টি হয় তাও সংশোধন করতে ডিপ্রেশনবিরোধী ওষুধ দারুণ কাজ করে।
বিষণ্নতার ওষুধ গ্রহণ করার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ফলাফল পাওয়া যায়। রোগীর রোগ-লক্ষণের প্রচণ্ডতা কমে আসে। রোগী আরো বেশি আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে। এতে করে চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা সৃষ্টি হতে থাকে রোগীর মাঝে। রোগী এক সময় বুঝতে পারে যে ডিপ্রেশনের ভয়াল যাতনা থেকে রক্ষা পেতে হলে চিকিৎসার কোনো বিকল্প নেই। চিকিৎসাই ডিপ্রেশনের যাতনা দূর করতে সাহায্য করে।

বিষণ্নতা আপনার ক্ষতি করে

দুই-তৃতীয়াংশ আত্মহত্যাকারী মানুষ যখন আত্মহত্যা করে তখন তারা ডিপ্রেশনে আক্রান্ত থাকে। প্রতি ১০০ জন পুরুষের মধ্যে ৭ জন পুরুষ এবং প্রতি ১০০ জনে ১ জন নারী যাদের ডিপ্রেশনের রোগ থাকে জীবনের বেশির ভাগ সময় তারা পরিপূর্ণরূপে আত্মহত্যায় ঝাঁপিয়ে পড়ে।
বিষণ্নতা রোগটি অসাধারণ কিছু নয়। এটা কোনো কাল্পনিক ব্যাপারও নয়। একেবারেই বাস্তবিক সমস্যা এটি। এ সমস্যা প্রাথমিক পর্যায়ে জটিল থাকে না। কিন্তু একটা সময় তা ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করতে পারে। অনেক মানুষই আছে যারা ডিপ্রেশনের সাথে বসবাস করে আসছে, হয়তো ঠিকমতো চিকিৎসাও নেয় না আবার এরা আত্মহত্যাও করে না। আসলে এর কারণ হলো এরা স্বল্প মাত্রার ডিপ্রেসড থাকে বলে ডিসথাইমিয়ায় ভুগে থাকে। এটি দীর্ঘস্থায়ী একটি সমস্যা। এতে হালকা মাত্রায় ডিপ্রেশন উপস্থিত থাকে এবং ব্যক্তি জীবনের সুখ-শান্তিগুলোকে পুরোপুরি এনজয় করতে পারে না। ডিসথাইমিয়া থেকে অনেকেই কোনো কোনো সময় চিকিৎসা ছাড়াও বের হয়ে আসতে পারে তবে কেউ কেউ জড়িয়ে পড়ে বড় ধরনের ডিপ্রেশনে। ইউনিপোলার ডিপ্রেশন বা ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেশনে আক্রান্ত মানুষ দুর্বিষহ জীবনের দিকে এগিয়ে যায়। এ ধরনের ডিপ্রেশন আত্মহত্যাকারী রোগীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে থাকে। এ ধরনের ডিপ্রেশনে-
প্রচণ্ড মাত্রায় আশাহীনতা জড়িত থাকে
নিজের পছন্দনীয় জিনিসের প্রতি, কাজের প্রতি বা শখের প্রতিও  আগ্রহ চলে যায়
উদ্বিগ্নতা বহু গুণে বেড়ে যায়
প্যানিক অ্যাটাক আতঙ্কময়তা দেখা দেয়
প্রচণ্ড মাত্রায় নিদ্রাহীনতা দেখা দেয়
উত্তেজনা/রাগ ক্ষোভ প্রকাশ পায়
মাথাব্যথা, হজমের গোলযোগ বা পরিপাকতন্ত্রের নানা সমস্যা দেখা দেয়, শরীরে ব্যথা বেদনা থাকে যার কোনো মেডিকেল কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না
আত্মহত্যার অতীত ইতিহাস বা আত্মহত্যা প্রবণতা থাকে
কোনো কোনো সময় ব্যক্তির আনন্দময়তা বেড়ে যায়
দাম্ভিকতা ভাব পরিলক্ষিত হয়
অন্যদের থেকে বা অন্য কিছু থেকে নিজের চিন্তা-ভাবনা দূরে সরে থাকে, চিন্তা এলোমেলো হয়ে যায়
প্রচণ্ড মাত্রায় যৌন উত্তেজনা দেখা যায়
কখনো কখনো শারীরিক শক্তিও বেড়ে যায়
বিচার-বিবেচনাবোধ লাঘব হয়
সামাজিক মিথস্ক্রিয়ায় গোলযোগ দেখা দেয়
ম্যানিয়া প্রকাশ পায়

যারা বিষণ্নতায় আক্রান্ত
সুষম ও পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করুন
নিয়মিত ব্যায়াম করুন
জীবনের লক্ষ্যগুলোকে ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে আনুন
দিনের বেলায় ঘুমাবেন না বা যত কম ঘুমাবেন ততই ভালো কারণ দিনের বেলায় ঘুমালে রাতের ঘুম তো এমনিতেই নষ্ট হয়ে যায়।
মদপান ছেড়ে দিন।
নামাজ পড়ুন/ কোরান তেলোয়াত করুন।
এমন কাজ করুন বা এমন সব ভালো কাজে অংশ নিন যা কিনা আপনার মনকে চাঙ্গা করে তুলবে আপনার মাঝে ভালো লাগা বোধ তৈরি করবে।
বিষণ্ন মনমরা চিন্তা-ভাবনা মন থেকে ঝেড়ে ফেলে দিন।
আপনার খারাপ দিকের ভাবনা বাদ দিন।
আপনার ভালো দিকের একটি তালিকা তৈরি করুন।
যখনই কোনো ভালো কিছু ঘটে যায় আপনার জীবনে তা পারলে লিখে ফেলুন। অন্য সময় এটি পড়ুন এবং আপনার জীবনেও ভালো কিছু ঘটেছে তা ভেবে সন্তুষ্ট হতে চেষ্টা করুন।
বস্তুর সাহায্য নিন।
পরিবার-পরিজনকে সময় দিন, তাদের নিয়ে একটু বেড়িয়ে আসুন।
অন্যকে উপকার করার চেষ্টা করুন আপনার সাধ্য অনুযায়ী।
দাম্পত্য জীবন উপভোগ করুন।
আপনার সন্তান থাকলে তার সাথে মিশুন, তার সাথে মিশে একটু খেলা করতে পারেন. গল্প করতে পারেন, তার সাথে একটু আনন্দ উপভোগ করার চেষ্টা করুন।
মা-বাবার সাথেও মিশুন। তাদের সময় দিন। তাদের সাথে কথা বলুন। আপনার কষ্টের কথা মন খুলে বলুন। তাদের আপনার জন্য দোয়া করতে বলুন। তাদের কোনো প্রয়োজন পূরণ করার চেষ্টা করুন। মা-বাবাকে নিয়েও একটু বেড়িয়ে আসুন।
ডিপ্রেশন হতেই পারে আপনার আমার সবার। তাই বলে কি আর হতাশ হলে চলবে। আপনি কি হতাশার কাছে পরাজিত হবেন? নিশ্চয়ই না। তাই ডিপ্রেশন রোগকে ভয় পাবেন না আবার সেটা অবহেলাও করবেন না। ডিপ্রেশন সম্পর্কে বোঝার চেষ্টা করুন, জানার চেষ্টা করুন। যত জানবেন ততই বুঝতে পারবেন রোগের নানা গতিপ্রকৃতিকে।
আপনার ডিপ্রেশন হয়েছে? তাই আপনি প্রথমে চিকিৎসা নেয়ার জন্য এগিয়ে আসবেন, এবং সাইকোথেরাপীর সাথে কথা বলুন।দেখবেন, অনেক ভালো বোধ করবেন। ফলে আপনি সুস্থ হয়ে উঠতে পারবেন কোনো প্রকার ক্ষতি ছাড়াই। আপনার ক্ষতি মানে শুধু আপনার নয়, পরিবারের ক্ষতি, সমাজের ক্ষতি এবং দেশের ক্ষতি; আপনি নিশ্চয়ই তা চান না।

8 comments:

  1. আশেপাশের চেনাজানা গন্ডীর মধ্যেই অনেক মানুষ দেখি বিষন্নতা সমস্যায় ভুগছে। যে দলে আমি নিজেও আছি। সুতরাং এটুকু সিদ্ধান্ত নিতে কোন অসুবিধা নেই যে বিষন্নতা সমস্যা মোটামুটি হলেও বেড়েছে এখন। আমিও মনে করি রোগ মানুষেরই হয়, সুতরাং লজ্জা না করে সরাসরি রোগের কথা প্রকাশ করে চিকিতসা নেওয়া উচিত নিজের উদ্যোগেই।
    যাই হোক, এত এত ব্যস্ততার মাঝে আপনার এই উদ্যোগকে সাধুবাদ না জানিয়ে পারলাম না। অনেক অনেক ধন্যবাদ এবং সবার পক্ষ থেকে অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা আপনার প্রতি। উদ্যোগটি থামাবেন না দয়া করে এই প্রত্যাশাই করি........

    ReplyDelete
    Replies
    1. নাজমুল হাসান নিরো @@@ আপনাকেও ধন্যবাদ ব্লগ/লেখা পড়ার জন্য।
      দোয়া করবেন আমার জন্যে।

      Delete
    2. নাজমুল হাসান নিরো @@@ আপনাকেও ধন্যবাদ ব্লগ/লেখা পড়ার জন্য।
      দোয়া করবেন আমার জন্যে।

      Delete
  2. আপনাকে অনেক ধন্যবাদ । আপনার লেখা পড়ে জানতে পারলাম আমি মারাত্মক ডিপ্রেশনে ভুগছি । এর আগেও কয়েকবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছি । সারাদিন ঘরের মাঝে থাকছি । পড়াশুনায় দিন দিন অবনতি হচ্ছে । সবচেয়ে বড় কথা হল মন সময় খারাপ থাকে , নানা রকম বাজে চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খায় । বেঁচে থাকার ইচ্ছা হারিয়ে ফেলছি । এখন বুঝতে পারলাম আমি অসুস্থ । I WANT TO LIVE A HAPPY LIFE. . . . . .

    ReplyDelete
    Replies
    1. Morshed Habib @@@ আপনাকে ধন্যবাদ ব্লগ/লেখা পড়ার জন্য।
      আপনার অতিসত্বর একজন সাইক্রিয়াটিস্টের সাথে পরামর্শ করা প্রয়োজন।আর থেরাপীর জন্য আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।

      Delete
  3. Morshed Habib @@@ আপনাকে ধন্যবাদ ব্লগ/লেখা পড়ার জন্য।
    আপনার অতিসত্বর একজন সাইক্রিয়াটিস্টের সাথে পরামর্শ করা প্রয়োজন।আর থেরাপীর জন্য আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।

    ReplyDelete
  4. দাম্পত্য সমস্যার কারণে যদি হয়ে থাকে তাহলে এর পরিত্রান পাবার কি উপায়? বা কোথায় এবং কার কাছে এর সঠিক সমাধান পাওয়া যাবে। দয়া করে জানাবেন।

    ReplyDelete
    Replies
    1. দাম্পত্য সমস্যায় প্রথমেই স্ত্রীর সাথে সমস্যাটা/সমস্যাগুলি নিয়ে আলাপ করার চেষ্টা করুন। সমস্যাটা যখন দুজনার তখন দুজনকেই আলাপ করতে হবে। যদি তা সম্ভব না হয়, তাহলে কাছের বন্ধু বা আত্মীয়দের নিয়ে চেষ্টা করুন। সেটাও যদি সম্ভব না হয়, কোন ফ্যামিলী কাউন্সেলার বা থেরাপিস্টের শরনাপন্ন হোন।
      তবে বন্ধু-বান্ধব বা আত্মীয়-স্বজনদের চেয়ে কাউন্সেলার বা থেরাপিস্ট অনেক নিরাপদ, এতে গোপনীয়তা রক্ষা হয়।

      Delete