Saturday 1 December 2012

প্রশ্ন ও উত্তর


একবম সিন্ড্রোম
সমস্যা : আমার দাদি,  কিছুদিন ধরে একটা অদ্ভুত কাণ্ড করছেন। তিনি বলেন, তার সারা গা পোকায় ভরে গেছে। তার নাকি ত্বকের নিচে পোকা কিলবিল করছে। এতে তার ভারী কষ্ট হচ্ছে। সারাদিন তার শরীরের চামড়া ধরে টেনে টেনে পোকা বের করেন আর একটা ছোট কৌটায় রাখেন। কিন্তু আমরা কৌটায় কোনো পোকা দেখতে পাই না। মাঝে মধ্যে তার গা থেকে বের করা পোকা আমাদের দেখান, দু'হাতের বুড়ো আঙুলে পিষে সেগুলো মারেন। মারার সময় দু'হাতের বুড়ো আঙুলের ঘষায় কেমন একটি পটর পটর আওয়াজও করেন। দাদি সারারাত ঘুমান না। পোকা ধরেন আর মারেন। দিনরাত আমাদের সঙ্গে ঘ্যানঘ্যান করেন, পোকাগুলো শরীর থেকে বের করার ব্যবস্থা কর। এ অবস্থায় কী করতে পারি?


সমাধান :  আপনার দাদি যে মানসিক রোগে আক্রান্ত তার নাম  'একবম সিন্ড্রোম'(wikipedia     ),আপনি যে মনটা বর্ণনা করেছেন এ রোগে রোগীর বদ্ধমূল ধারণা জন্মে যে তার চামড়ার নিচে পোকা গিজগজ করছে। এসব পোকা চামড়ার নিচ দিয়ে হেঁটে বেড়াচ্ছে। রোগী এমনটাই অনুভব করে। রোগী তার অস্বস্তি দূর করার জন্য চামড়া টেনে টেনে পোকা বের করে। কেউ কেউ এসব পোকা বের করার জন্য চামড়ায় সুই ফুটিয়ে দেয়, বেল্গড বা ছুরি দিয়ে চামড়া কেটে ফেলে। আর কথিত পোকাগুলোকে ধরে ধরে ম্যাচ বাক্সের মতো ছোট কন্টেনারে রাখে অন্যদের দেখানোর জন্য।
এসব সিন্ড্রোম একক অসুস্থতা হিসেবে দেখা দিতে পারে। রোগের একটি উপসর্গ হিসেবেও দেখা দিতে থাইরয়েড হরমোনের স্বল্পতা, ক্যান্সার, হার্টের অসুখ, ডায়াবেটিস, স্নায়ুরোগ, ভিটামিন বি-১২ এর ঘাটতি, সিজোফ্রেনিয়া ও বিষণ্নতা ইত্যাদি। যেসব মাদকাসক্তির সঙ্গে এরকম সিন্ড্রোম থাকতে পারে সেসব হচ্ছে কোকেইন ও এম্ফিটামিন [ইয়াবা]।
চিকিৎসা : সেকেন্ডারি কারণে সৃষ্ট এরকম সিন্ড্রোমের ক্ষেত্রে মূল শারীরিক/মানসিক রোগটির চিকিৎসা করলেই রোগের অন্যান্য উপসর্গের সঙ্গে এ রকম সিন্ড্রোমেরও উন্নতি হয়। প্রাইমারি এরকম সিন্ড্রোমের ক্ষেত্রে আগে পিমোজাইড নামক একটি উন্মাদনাবিরোধী ওষুধ ব্যবহার করা হতো। বর্তমানে পিমোজাইডের পরিবর্তে আরও আধুনিক ওষুধ ওলাঞ্জিপিন ও রিসপেরিডন ব্যবহার করা হয়। আবার অন্য কোনো শারীরিক বা মানসিক রোগ পারে। এসব শারীরিক ও মানসিক রোগের মধ্যে আছে মাদক গ্রহণ। 


মাঝে মধ্যে গায়েবি আওয়াজ শুনতে পাই 

সমস্যা : আমার পেটের ভেতর মনে হয় কেউ ঢুকেছে। ধারণা করছি, সেটি একজন মহিলা। সে কীভাবে ঢুকেছে জানি না। সে আমাকে অনেক জ্বালাতন করে। প্রায়ই মনে হয় আমার ঘাড় মটকে দিচ্ছে। তাকে মনে করে আমার পেটে আঘাত করি। আমার নাওয়া-খাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। মাঝেমধ্যে কোথায় থেকে যেন গায়েবি আওয়াজ শুনতে পাই। কিছুই ভালো লাগে না। সব সময় ভয় হয়। কোনো কাজ করতে পারি না। প্রায়ই নিজের ওপর রেগে যাই। বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করে না। আমার এ সমস্যার সমাধান কী হতে পারে?

সমাধান :আপনি কত দিন ধরে এই সমস্যায় ভুগছেন তা লেখেননি। যদি আপনার এ সমস্যা ছয় মাসের বেশি হয় তাহলে আপনি সিজোফ্রেনিয়া নামক মানসিক রোগে ভুগছেন। 
এ রোগে আপনার আরও কিছু উপসর্গ থাকার সম্ভাবনা আছে, যেমন_ আপনার মনে হতে পারে যে লোকজন আপনার ক্ষতি করার পাঁয়তারা করছে। কেউ আপনাকে নিয়ে সমালোচনা করছে, কথা বলছে এমন কি রেডিও-টিভিতে আপনাকে নিয়ে নাটক বা খবর প্রচারিত হচ্ছে। এছাড়া মনে হতে পারে, আপনি যেন একটা রোবট বা কলের পুতুল, আপনার হাঁটাচলা কথাবার্তা এসব আপনি করছেন না, কেউ দূর থেকে কোনো অদৃশ্য মাধ্যম দিয়ে আপনাকে চালাচ্ছে।
বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিসাইকোটিক যেমন_ হ্যালোপেরিডল, ট্রাইফ্লুপেরাজিন, রিসপেরিডন ওলানজিপিন ইত্যাদি দিয়ে এ রোগের চিকিৎসা করা হয়। সন্তোষজনক উন্নতির জন্য রোগ শুরুর পরপর দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া প্রয়োজন।  



আমি কি পাগল হয়ে যাব?
সমস্যা : আমাকে 'ওরা' হাইপার করে। মগজের ভেতর চাপ দেয়। আমাকে রাগিয়ে তোলে। ওদের দেখতে পাই না। ওদের অত্যাচারে ভাংচুর করি, এক পর্যায়ে আমার ল্যাপটপ ভেঙে ফেলি। কারণ সেই ল্যাপটপ থেকে একরকম সংকেত পাঠিয়ে ওরা আমার ব্রেন গরম করে দিচ্ছিল। ওরা কোনোভাবে আমার মনের কথা বের করে লোকের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়। এটা আমার জন্য কত বিব্রতকর যে, মানুষ আমার মনের কথা যেনে যাচ্ছে। সব সময় অস্থির লাগে। কিছুই ভালো লাগে না। আমি কি পাগল হয়ে যাব? 

সমাধান : আপনার মধ্যে দুটি মানসিক রোগ বাসা বেঁধেছে। একটি সিজোফ্রেনিয়া, অন্যটি অবসেশন বা বাধ্যতাধর্মী মানসিক রোগ। একত্রে রোগটির নাম সিজো-অবসেশিভ ডিসঅর্ডার। সিজোফ্রেনিয়া রোগের জন্য মনে হচ্ছে, 'ওরা' আপনার মগজের ওপর বিশেষ প্রভাব ফেলে ব্রেন গরম করে দিচ্ছে, আপনাকে 'হাইপার' করে দিচ্ছে, ল্যাপটপের মাধ্যমে বিশেষ সংকেত দিচ্ছে। কোনো ডিভাইস দিয়ে আপনার মনের কথা বের করে আশপাশে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে_ মনে হওয়াটাও সিজোফ্রেনিয়া রোগের লক্ষণ। সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত রোগী কিছু কিছু অস্বাভাবিক অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়, যেমন_ সে গায়েবি আওয়াজ শুনতে পায়। অনেক সময় তার মনে হয়, সে যেসব কাজকর্ম করছে তা সে নিজে করছে না, দূর থেকে তাকে নিয়ন্ত্রণ করে করানো হচ্ছে। স্বাভাবিক বোধ-বুদ্ধিসম্পন্ন কারও পক্ষে সিজোফ্রেনিকদের এ রকম অনুভূতিকে বুঝে ওঠা একটা দুরূহ ব্যাপার। তাই অধিকাংশ লোক এ উপসর্গকে নানা অতিপ্রাকৃতিক শক্তির কারসাজি হিসেবে ব্যাখ্যা করতে চায়।
আপনার অসুস্থতার অন্য একটি অংশ অবসেশন। 
চিকিৎসার জন্য আপনাকে সিজোফ্রেনিয়া এবং অবসেশন উভয়ের ওষুধ খেতে হবে। সিজোফ্রেনিয়া চিকিৎসার জন্য হ্যালোপেরিডল, ট্রাইফ্লুপেরাজিন, রিসপেরিডন, ওলানজিপিন, কিউটিপিন, ক্লোজাপিন ইত্যাদি ওষুধ ব্যবহার করা হয়। অবসেশনের জন্য ব্যবহার করা হয় ফ্লুক্সেটিন, সারট্রালিন, ক্লোমিপ্রামিন, প্যারোক্সিটিন ইত্যাদি।  


অকারণে একা একা হাসে
সমস্যা : আমার ছেলে উজ্জ্বল। বয়স-২৫, বোবা। তবে বুদ্ধিসুদ্ধি ভালো। পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে। এক বছর ধরে ওর মধ্যে কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে। রাতের অন্ধকারে গাছে উঠে তেঁতুল পেড়ে খায়। রাতে হঠাৎ ঘর থেকে বের হয়ে পুকুরে ঝাঁপিয়ে পড়ে দাপাদাপি করে। অযথা ভাংচুর করে। আমাকে এবং ওর মাকে মারধর করে। অকারণে একা একা হাসে। খায় না, ঘুমায় না। বিয়ে দিলে সুস্থ হবে ভেবে ছ'মাস আগে বিয়ে দিয়েছি। এতেও কোনো পরিবর্তন দেখি না। তার কি কোনো চিকিৎসা আছে?


সমাধান : আপনার ছেলে যে মানসিক রোগে ভুগছে, ডাক্তারি ভাষায় একে আমরা সিজোফ্রেনিয়া বলি। এ রোগের কোনো বাংলা নাম নেই। সম্ভবত যে কোনো ধরনের অস্বাভাবিক আচরণকে এ দেশের মানুষ হয় জিন-পরির আছর বা সাদামাটা ভাষায় 'পাগল' বলে। এ রোগের কোনো বাংলা প্রতিশব্দ পাওয়া যায় না। এ রোগে আক্রান্তরা নানা ধরনের অস্বাভাবিক আচরণ করে এবং বিনা উস্কানিতে মারধর বা ভাংচুর করে। এরা কানে গায়েবি কথা শুনতে পায়। আর সেই কথার প্রতিক্রিয়ায় নিজে নিজে কথা বলে। যে কোনো মানসিক রোগের অস্বাভাবিক আচরণের প্রতিকার হিসেবে ব্যক্তিকে বিয়ে দেওয়া আমাদের দেশের একটা সাধারণ রীতি। এতে ব্যক্তির উপকারের চেয়ে তার জীবনে
জটিলতা বাড়ে।
আপনার ছেলেকে নিয়মিত চিকিৎসা করালে ওর অস্বাভাবিক আচরণ দূর হয়ে যাবে । তার পক্ষে গ্রহণযোগ্য মাত্রার স্বাভাবিক জীবনযাপন করাও সম্ভব। হ্যালোপেরিডল, ট্রাইফ্লুপেরাজিন, ক্লোরোপ্রোমাজিন ইত্যাদি ওষুধ দিয়ে সহজেই এ রোগের চিকিৎসা করা যায়। এসব ওষুধের দামও খুব কম। এ ছাড়া রিসপেরিডন, ওলানজিপিন, ক্লোজাপিন পাওয়া যায় এ রোগের চিকিৎসায়। এ ওষুধগুলোর দাম তুলনামূলক বেশি
। 

সহানুভূতি ও মানসিক চিকিৎসা

সমস্যা :১৫ জানুয়ারি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের বকেরগাছি গ্রামের নিলুফা বেগম তার দেড় বছরের সন্তান ফুয়াদকে বঁটি দিয়ে গলা কেটে হত্যা করেছেন। স্থানীয় পুলিশ ও প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, সে একজন মানসিক রোগী। শিশুকে হত্যার পর সে কারও সঙ্গে কোনো কথা বলছিল না। অপলক দৃষ্টিতে কী যেন খুঁজছিল আর ডুকরে ডুকরে কাঁদছিল। ছয় মাস আগে সে তার সন্তানকে পানিতে ফেলে দিয়েছিল। প্রশ্ন, তার সন্তানকে হত্যা করার মনস্তাত্তি্বক ব্যাখ্যা কী?

সমাধান :যেহেতু প্রতিবেশীরা তাকে মানসিক রোগী বলছে; তাই ধারণা করা যায়, নিলুফার আচার-আচরণ ও কথাবার্তায় এমন কিছু অস্বাভাবিকতা ছিল, যা সাধারণ মানুষেরও চোখ এড়ায়নি। তীব্র মানসিক রোগ আক্রান্তদের বেলায় এরকম ঘটলে রোগীর আশপাশের লোকজন সহজে বুঝতে পারে যে, সে মানসিক রোগে আক্রান্ত। সন্তান প্রসবের পর থেকে এক বছরের মধ্যে নারীদের মানসিক রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। যদি আগে থেকেই কোনো নারীর মানসিক রোগ থেকে থাকে [বর্তমানে সুস্থ] তবে প্রসবের পর তার মানসিক রোগটি ফের দেখা দিতে পারে। মানসিক রোগে আক্রান্ত অবস্থায় সন্তান প্রসব করার পর মানসিক রোগের লক্ষণগুলো আরও তীব্র আকার ধারণ করতে পারে। 
তীব্র মানসিক রোগাক্রান্ত মায়ের মনে অনেক সময় এ ধরনের ভ্রান্ত বিশ্বাস জন্মে যে, কোলের বাচ্চাটি তার নয়। জ্বীন, পরী বা খারাপ আত্মার বাচ্চা। এ বাচ্চাটাকে মেরে ফেললে তার ভেতর থেকে ওর নিজের বাচ্চা বেরিয়ে আসবে। তারা অনেক সময় কানে এ ধরনের গায়েবি আওয়াজ শুনতে পায়_ এটাকে মেরে ফেল, তাহলে তোকে তোর বাচ্চা ফেরত দেওয়া হবে। এসব ভ্রান্ত বিশ্বাস আর গায়েবি আওয়াজের বশবর্তী হয়ে মা তার নিজ সন্তানকে হত্যা করতে পারে। কোনো কোনো সময় তীব্র বিষণ্নতায় আক্রান্ত মা তার গভীর হতাশা ও সন্তানের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে অলীক অনিশ্চয়তাবোধ থেকে সন্তানকে হত্যা করতে পারে। এ ক্ষেত্রে সাধারণত সন্তানকে হত্যার পর মা আত্মহত্যা করে। 
স্পষ্টতই নিলুফা একজন মানসিক রোগী। রোগের উপসর্গের কারণে সে সন্তানকে হত্যা করেছে বলে মনে হচ্ছে। রোগীর সঙ্গে কথা বললে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হবে। তার দরকার সহানুভূতি ও মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া। 


কাজে মন বসে না 
সমস্যা :দেড় বছর আগে আমার এক ভাগিনাকে একটা মার্ডার কেসে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। তখন আমার মাথায় বারবার আসতে থাকে,ওকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেল? ওর কী হবে? এই চিন্তায় আমার আহার-নিদ্রা বন্ধ হয়ে গেল। তিন মাস জেল খেটে ও বের হয়ে আসে। কিন্তু আমার চিন্তা আর থামে না। ওকে বাদ দিয়ে অন্য লোকদের নিয়ে চিন্তা আসতে থাকে। এখন পত্রিকা টেলিভিশন বা লোকমুখে যে কাউকে পুলিশে ধরে নিয়ে গেছে জানলেই তার কথা বারবার মনে পড়তে থাকে। এই চিন্তায় ঘুম হয় না, খেতে পারি না, সংসারে মন বসে না। আমার দুটো ছোট বাচ্চা আছে। আমি এ চিন্তা নিয়ে এত মগ্ন থাকি যে, তাদের যত্ন নিতে পারি না। আমি কী করব?

সমাধান :আপনি বাধ্যতাধর্মী মানসিক রোগ অবসেশনে ভুগছেন। সাধারণত দেখা যায়, কোনো একটা মানসিক চাপের পর এ রোগ শুরু হয়। আপনার ক্ষেত্রে ভাগিনাকে পুলিশে ধরে নিয়ে যাওয়াটা মানসিক চাপ হিসেবে কাজ করেছে। অবসেশনের ক্ষেত্রে ব্যক্তির ইচ্ছার বিরুদ্ধে তার জন্য কষ্টদায়ক চিন্তা ঘুরে ফিরে বারবার তার মনে আসতে থাকে। এসব চিন্তার মধ্যে ধর্ম, যৌনতা আক্রমণাত্মক চিন্তা বারবার মাথায় আসতে থাকে। ব্যক্তি এই চিন্তাকে যত বেশি দূরে ঠেলে দিতে চায়, তা যেন ব্যক্তিকে আরও দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরে। এই চিন্তার ঘুরপাকে পড়ে ব্যক্তির স্বাভাবিক জীবন চরমভাবে ব্যাহত হয়।
সাধারণত ওষুধ ও কগনেটিভ-বিহেভিয়ার থেরাপির যৌথ ব্যবহারের মাধ্যমে এই রোগের চিকিৎসা করা হয়। ব্যবহৃত ওষুধের মধ্যে আছে ফ্লুভক্সামিন, ক্লোমিপ্রামিন, ফ্লুক্সেটিন, সাট্রালিন, এস সিটাপ্রাম ইত্যাদি। এ রোগটি সারাতে ওষুধ একটু বেশি ডোজে বেশি দিন ধরে ব্যবহার করতে হয়
। 

কষ্টের শেষ কোথায়? 
সমস্যা :আমার মনে হয় অতিলৌকিক কোন প্রাণী, হতে পারে জিন আমাকে ডিসটার্ব করে। ওরা আমার কানে কানে কথা বলে, আমাকে আদেশ-নির্দেশ দেয়। ওরা নেগেটিভ অর্থে পজিটিভ কথা আর পজিটিভ অর্থে নেগেটিভ কথা বলে আমার ব্রেনের ওপর প্রেসার দেয়। মনে হয়, আমার খাবারে নানা রকম দুর্গন্ধ ঢেলে দেয়। আমার মনের কথা সব জেনে ফেলে। তা টিভি আর রেডিওতে প্রচার করে দেয়। প্রায়ই দূর থেকে আমার হাত-পা নাড়ানো, চলাফেরা ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করে। ওদের অত্যাচারে মাঝেমধ্যে আমার আত্মহত্যা করতে ইচ্ছা হয়। আর আত্মহত্যার কথা মনে এলেই ওরা বলে মরেও তোর রক্ষা নেই। আমরা দুনিয়া থেকে তোর কবর উঠিয়ে নিয়েছি। আমি পাঁচ বছর ধরে ওদের জ্বালাতন সহ্য করছি। আর পারি না। দয়া করে বলবেন, আমি কী করলে ওদের হাত থেকে রেহাই পাব?

উত্তর :আপনি খুব সুন্দরভাবে আপনার রোগের উপসর্গগুলোর বর্ণনা দিয়েছেন। এত দীর্ঘ সময় রোগ ভোগের পরও যে আপনার চিন্তাভাবনা এত পরিষ্কার তা খুবই আশার কথা। আপনি স্কিৎজোফ্রেনিয়া [সিজোফ্রেনিয়া] নামক মানসিক ব্যাধিতে আক্রান্ত। এ রোগ হলে মানুষ কানে গায়েবি আওয়াজ শুনতে পায়। মানুষ দেখে না কিন্তু তাদের কথা শুনতে পায়। তার মনে নানা ধরনের ভ্রান্ত ধারণা তৈরি হয়। রোগী ভাবেন, লোকজন তার ক্ষতি করতে চায়, তার খাবারে বিষ বা খারাপ কিছু মিশিয়ে দিচ্ছে। তাই সে খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকে। তার মনে ধারণা জন্মে যে, অন্যরা তাকে নিয়ে সমালোচনা করছে। এমন কি রেডিও, টেলিভিশন, পত্রিকায় তাকে নিয়ে কথা হয়, লেখা হয় ইত্যাদি। 
ওষুধই এই রোগের প্রধান চিকিৎসা। হ্যালোপেরিডল, ট্রাইফ্লুপেরাজিন, রিসপেরিডন, ওলানজিপিন, ক্লোজাপিন ইত্যাদি ওষুধ দিয়ে এ রোগের চিকিৎসা করা হয়। উপসর্গমুক্ত হওয়ার পর রোগীকে স্বাভাবিক জীবনে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য তাকে পুনর্বাসন কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত 
করা জরুরি। 


কিছুই ভালো লাগে না 

সমস্যা :আমার কিছুই ভালো লাগে না। না খাওয়া, না ঘুম, না বাচ্চা-সংসার, না স্ত্রীর সাহচর্য। গোসল করতে ইচ্ছে করে না। যে আমি দিনে দু'বার গোসল না করে থাকতে পারতাম না, সেই আমি দিনের পর দিন গোসল না করে থাকছি। এমন কি সাধারণ হাত-মুখ ধোয়া তাও না করতে পারলে বাঁচি। স্ত্রী বারবার বলার পর দিনে মাত্র একবার হাত-মুখ ধোয়াতে পারে। আমার নিজের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা। অনেক শ্রম দিয়ে নিজেই ব্যবসা দাঁড় করিয়েছি। বেশ ভালো চলছিল ব্যবসাটা। কিন্তু সেই ব্যবসার দিকে আজকাল আমার কোনো লক্ষ্য নেই। মাস খানেক হলো আমি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যাই না। কর্মচারীরা ব্যবসা দেখছে। প্রতিদিন রাতে শোয়ার সময় ভাবি, কাল যাব। কিন্তু সকালবেলা আর বিছানা ছেড়ে উঠতে ইচ্ছে করে না। সকালটা সবচেয়ে খারাপ কাটে, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে একটু ভালো লাগতে থাকে। রাতে বেশ ভালো লাগে। যদিও পুরো ভালো না। এভাবে চললে আমার সংসার, জীবন ও ব্যবসা_ সব ধ্বংস হয়ে যাবে। এখন আমি কী করতে পারি?

সমাধান : আপনার উপসর্গ বলছে, আপনি বিষণ্নতায় ভুগছেন। আজকাল বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ওষুধ দিয়ে বিষণ্নতার চিকিৎসা করা হয়। তবে বিষণ্নতার চিকিৎসায় ওষুধ ও সাইকোথেরাপির যৌথ প্রয়োগ সবচেয়ে বেশি কার্যকর। বাজারে বিভিন্ন ধরনের বিষণ্নতাবিরোধী ওষুধ পাওয়া যায়। পুরনো ওষুধের মধ্যে আছে অ্যামিট্রিপটাইলিন, ইমিপ্রামিন, নরট্রিপটাইলিন ইত্যাদি। নতুন ওষুধের মধ্যে আছে ফ্লুক্সেটিন, সাট্রালিন, সিটালোপ্রাম, এস-সিটালোপ্রাম, মিট্রাজাপিন, ভ্যানলাফ্যাক্সিন ইত্যাদি। পূর্ণ সুস্থতার জন্য উপসর্গ বিলুপ্ত হওয়ার পরও দীর্ঘদিন ওষুধ চালিয়ে যেতে হয়। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ বন্ধ করবেন না। 


অন্ধকার প্রচণ্ড ভয় পাই 
সমস্যা :আমার বয়স ২৫। আমি অন্ধকার প্রচণ্ড ভয় পাই। আবার কোনো বদ্ধঘর অথবা আটকা জায়গা যেমন লিফটে উঠলে আমার দম আটকে আসতে থাকে। মনে হয়, তখনই বোধহয় ইলেকট্রিসিটি চলে গিয়ে চারদিক অন্ধকার হয়ে যাবে। এ কারণে আমি কখনও লিফটে একা উঠি না। মনে হয়, লিফট আটকে গেলে আমি কী করব? কিছুদিন আগে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আমি পাহাড়ে বেড়াতে গেলাম। ওখানে সবাই মশাল নিয়ে একটা গুহায় ঢুকল। আমি ভয়ে ঢুকতে পারলাম না। ভয় হচ্ছিল এই ভেবে, যদি মশাল নিভে যায়! একজন মনোবিজ্ঞানীর সঙ্গে কথা বলেছিলাম কয়েক বছর আগে। তিনি আমার কাছে জানতে চাইলেন, ছেলেবেলায় অন্ধকারে কোনো ভয়ঙ্কর কিছু হয়েছিল কি-না? অনেক খুঁজে আমি এমন কোনো ঘটনা মনে করতে পারিনি। শুধু মনে আছে, ছেলেবেলায় ইলেকট্রিসিটি চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কেমন করে যেন আমার ঘুম ভেঙে যেত। অন্ধকার দেখলেই আমি ভয়ে চিৎকার করতাম। এ ভয় আমার এখনও কাটেনি। পরামর্শ দিলে উপকৃত হব। 

সমাধান :আপনার সমস্যাটাকে আমাদের মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞদের ভাষায় বলে স্পেসিফিক ফোবিয়া অর্থাৎ সুনির্দিষ্ট ভীতি। আপনার ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট ভীতিটি হচ্ছে অন্ধকারের ভয়। আবার আপনি বদ্ধ স্থানে থাকতেও ভয় পান। এটা বদ্ধ স্থান অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যেতে পারে তার ভয়, নাকি শুধু বদ্ধ স্থানের ভয় তা পরিষ্কার করার সুযোগ হলো না। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়, অন্ধকার-ভীতিতে আক্রান্ত ব্যক্তিরা আবদ্ধ জায়গাকে ভয় পায় এ জন্য যে, সেসব জায়গায় আলো চলে গেলে প্রচণ্ড অন্ধকার নেমে আসবে। এ ধরনের ভয়ের শুরুর মুহূর্তটা সব সময় রোগীর মনে থাকে, তা নয়। আর রোগের চিকিৎসার জন্য তা জানা খুব জরুরিও নয়।
এ রোগের চিকিৎসার জন্য আমাদের ওষুধ ও বিহেভিয়ার থেরাপি উভয়ের সাহায্য নিতে হবে। ওষুধের ক্ষেত্রে ফ্লুক্সেটিন, সাট্রালিন, এস সিটালোপ্রা, ইমিপ্রামিন, ক্লোমিপ্রামিন ইত্যাদি ব্যবহার করা যায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এসবের সঙ্গে ক্লোনাজিপাম এবং এলপ্রাজোলাম ব্যবহার করা হয়। 
তবে শেষোক্ত দুটি ওষুধের আসক্তি সৃষ্টির প্রবণতা আছে বলে বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধান ছাড়া এ দুটি ওষুধ ব্যবহার করা ঠিক নয় [চিকিৎসকের সরাসরি পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধই ব্যবহার করা উচিত নয়]। 


মানসিক অশান্তিতে আছি 
সমস্যা : আমি বিয়ে করেছি ৫ বছর হলো। আমাদের ২ বছরের একটি ছেলে আছে। সমস্যা আমার স্ত্রীকে নিয়ে। সে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক। বিয়ের পর থেকেই লক্ষ্য করি, আমার স্ত্রী অত্যন্ত বদমেজাজী। অনেক সময় তুচ্ছ ব্যাপার নিয়েও সে ঝগড়াঝাঁটি করত। জিনিসপত্রও ভাংচুর করত। আমি তাকে বোঝালে কয়েকদিন চুপচাপ থাকত। তারপর আবার শুরু করত। তার আচরণের কারণে আমার মা আমার বাসায় বেশি দিন থাকতে পারেননি। ছেলে হওয়ার সময় সে কিছুটা শান্ত থাকলেও আবার একই অবস্থা চলছে। সে চায় স্বামী-সন্তানসহ সবকিছু নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে। ওর কারণে আমি অফিসের বাইরে কোথাও যেতে পারি না। কারণ দেরি হলেই সে একটার পর একটা প্রশ্ন করে অস্থির করে ফেলে। কারও সঙ্গে ফোনে বেশিক্ষণ কথা বলতে দেখলেও সে চিৎকার-চেঁচামেচি করে। আমি ওর বাবা-মায়ের সঙ্গে ওর সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেছি। তারা বলেন, কী করব! ও ছেলেবেলা থেকেই এমন। আমার মনে হয়, আমার স্ত্রী মানসিকভাবে অসুস্থ। কিন্তু তাকে মানসিক চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়ার কথা আমি তাকে বলতে পারছি না। কারণ বললেই সে একটা সিন ক্রিয়েট করবে_ এটা নিশ্চিত। মাঝেমধ্যে সংসার ফেলে আমার দূরে কোথাও চলে যেতে ইচ্ছে করে। কিন্তু ছেলের কথা ভেবে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। খুব মানসিক অশান্তিতে আছি। কী করব বুঝতে পারি না। 

সমাধান :আপনার স্ত্রীর সমস্যা শুনে মনে হচ্ছে তিনি বর্ডার লাইন পারসোনালিটি ডিসঅর্ডার নামক ব্যক্তিত্বের সমস্যায় আক্রান্ত। এ ধরনের ব্যক্তিত্বের সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের পক্ষে অন্যদের সঙ্গে মানিয়ে চলা খুব কঠিন হয়ে পড়ে। তার আশপাশের লোকজনও তার সঙ্গে মানিয়ে চলতে গিয়ে হিমশিম খেয়ে যায়। তাই আপনার স্ত্রীর নিজ বাবা-মাও তাকে ঘাঁটাতে সাহস করেন না। 
একদিকে আপনার সন্তান ও আপনার সংসারের ভবিষ্যৎ, অন্যদিকে স্ত্রীর নিত্য জ্বালাতন_ এ দুইয়ের মাঝে পড়ে আপনার যে খুব নাকাল অবস্থা তা বোঝাই যাচ্ছে। কিন্তু এ অবস্থায়ও আপনি যে পজিটিভ মনোভাবের পরিচয় দিচ্ছেন তা হচ্ছে আপনার স্ত্রীর জন্য চিকিৎসকের সাহায্য কামনা করা। ব্যক্তিত্বের সমস্যা সারানো একটু কঠিন ব্যাপার। তবে দীর্ঘদিন ধরে ধারাবাহিকভাবে চিকিৎসা গ্রহণ করলে এ থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে। ফ্লুক্সেটিন, সাট্রালিন, ভ্যালপ্রোয়িক এসিড, লিথিয়াম কার্বোনেট ইত্যাদি ওষুধ ব্যক্তিত্বের সমস্যাগ্রস্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা হলেও এ সমস্যার মূল চিকিৎসা সাইকোথেরাপি। অভিজ্ঞ মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ বা মনোচিকিৎসকের সাহায্য নিলে এ বিষয়ে উপকার পাবেন। আপনার স্ত্রীকে ডাক্তারের কাছে নেওয়ার ক্ষেত্রে যে সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন তা কাটানোর জন্য তার নিজের বা আপনার পরিবারের মধ্যে যার কথা তিনি শোনেন, যাকে গুরুত্ব দেন, শ্রদ্ধা করেন তার সাহায্য নিতে পারেন। মনোচিকিৎসকের কাছে যাওয়ার কথা বললে তিনি রাজি হতেও পারেন অথবা এভাবে বলে দেখতে পারেন যে_ তোমার সঙ্গে আমার চলার ক্ষেত্রে যে সমস্যা হচ্ছে তা দূর করার জন্য আমার কী করণীয় তা আমি জানতে চাই এবং সম্পর্ক বাঁচিয়ে রাখার জন্য আমি নিজেকে পরিবর্তন করতে চাই। এ ক্ষেত্রে আমি তোমার সাহায্য চাই। তুমি মনোচিকিৎসকের কাছে গিয়ে আমার সমস্যাগুলো বলে এসো [একজন দক্ষ মনোচিকিৎসক এ রকম অবস্থায় কী কৌশলে অনাগ্রহী পার্টনারকে থেরাপিতে শামিল করতে হবে তা জানেন]। অবশ্য এই বলার ক্ষেত্রে আপনাকে আন্তরিক থাকতে হবে। স্ত্রীর মধ্যে পরিবর্তন ঘটানোর ক্ষেত্রে সত্যি সত্যি আপনারও কিছু করার আছে এবং এ ক্ষেত্রে আপনাকে সৎ ও আন্তরিক হতে হবে।  


আপনি বিষণ্নতায় ভুগছেন..
সমস্যা:খেতে একটুও ভালো লাগে না। খাওয়ায় রুচি নেই। সব সময় অস্থির লাগে। কোনো কিছু ভালো লাগে না। কোনো কথা মনে থাকে না। বই পড়তে ইচ্ছা করে না। অজু বা গোসল করা হয় না। নামাজ পড়তে ইচ্ছা করে না। অশান্তি লাগে। সব সময় শরীর দুর্বল লাগে। হাত-পা কাঁপে। আমার ওজন অনেক কমে গেছে, সবাই বলে কুঁজো হয়ে গেছি। আব্বু আমার জন্য ছেলে খুঁজছে। ভালো ছেলে পেলেই জোর করে বিয়ে দিয়ে দেবে। আমি একাধারে দুই বছর প্রতিদিন ৭৫ মিগ্রা করে ট্যাবলেট ক্লোফ্রানিল খেয়েছি। এখন আমার কাছে ছেলে মানুষ একটুও ভালো লাগে না। ক্লোফ্রানিল খাওয়ার আগে আমি ছেলেদের ব্যাপারে অনেক আগ্রহী ছিলাম।

সমাধান:আপনার বর্তমান উপসর্গ নির্দেশ করে যে আপনি গভীর বিষণ্নতায় ভুগছেন। খাওয়া, ঘুম, কাজকর্ম ও মানসিক অস্থিরতার দিক দিয়ে একজন বিষণ্ন মানুষের মধ্যে যেসব উপসর্গ থাকে তার প্রায় সবই আপনার মধ্যে বিদ্যমান। আপনার চিকিৎসার জন্য বিষণ্নতাবিরোধী ওষুধ যেমন_ অ্যামিট্রিপটাইলিন, নরট্রিপটাইলিন, ইমিপ্রামিন ডক্সিপিন ইত্যাদি পুরনো ধরনের বিষণ্নতাবিরোধী ওষুধ বা ফ্লুক্সেটিন, সারট্রালিন, সিটালোপ্রাম, এস-সিটালোপ্রাম, মিট্রাজেপিন, ভ্যানলাফেক্সিন ইত্যাদি নতুন প্রজন্মের বিষণ্নতাবিরোধী ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে। এর সঙ্গে সাইকোথেরাপি নিলে ফল অত্যন্ত ভালো হয়। তবে আপনার ক্ষেত্রে মুড-ট্যাবিলাইজার [যে ওষুধ মনকে অতি আনন্দিত বা অতি দুঃখভারাক্রান্ত করা থেকে রক্ষা করে] লাগবে কি-না তা আপনার বিষয়ে আরও কিছু তথ্য জানার পর বোঝা যাবে। কারণ বর্তমান অসুস্থতার আগে ছেলেদের প্রতি আপনার অতি আগ্রহ বয়সের স্বাভাবিক আচরণ না 'দ্বিমেরু হর্ষ-বিষাদ উন্মাদনা'র অংশ বা ওষুধ-জাত উন্মাদনা [ড্রাগ ইনডিউসড সাইকোসিস] কি-না তা নির্ণয় করা দরকার। এরপর পরীক্ষার ফল অনুযায়ী আপনার দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার ছক করা হবে যেখানে মুড স্ট্যাবিলাইজার যুক্ত থাকতে পারে আবার নাও পারে। 


আতঙ্ক 
সমস্যা :কয়েকদিন আগে দু'জন সন্ত্রাসী সন্ধ্যায় আমার মায়ের গলায় পিস্তল ঠেকিয়ে এক প্রতিবেশীর শিশু ছেলেকে ডেকে দিতে বলে। সন্ত্রাসীরা ওই শিশুকে অপহরণ করতে এসেছিল। আমার মা অস্বীকৃতি জানায়। ওরা ধাক্কা দিয়ে আমার মাকে মাটিতে ফেলে দেয়। মা একটা চিৎকার দিয়ে পড়ে যান। তারপর কী হয়েছে, তিনি বলতে পারেন না। অনেকক্ষণ পর তার জ্ঞান ফিরলেও সেই দৃশ্য মা চোখের সামনে থেকে সরাতে পারছেন না। বারবার চলে আসছে সেই দৃশ্য। তার মনে হচ্ছে আবার যদি তারা আসে, ওভাবে পিস্তল ঠেকিয়ে কিছু করতে বলে? তার দম বন্ধ হয়ে আসছে। তিনি দিন-রাত কখনোই ঘুমাতে পারছেন না। 


সমাধান :আপনার মায়ের অসুস্থতাকে ডাক্তারি ভাষায় বলে, পোস্ট ট্রমাটিক ডিজ অর্ডার [পিটিএসডি]। বাংলায় বলা হয়, মানসিক চাপ-জাত রোগ।
নিজের অথবা অন্যের জীবনের হুমকি হয়, এমন ঘটনার মুখোমুখি হলে , কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হলে বা মানবসৃষ্ট বিপদ যেমন_ নিজে অথবা অন্য কাউকে শারীরিক, মানসিক বা যৌন অত্যাচারের শিকার হতে দেখলে, যুদ্ধ-বিগ্রহের মধ্যে বসবাস করতে বাধ্য হলে, এমন অন্যের মুখে সে রকম ঘটনার বিবরণ শুনলে বা টেলিভিশনে দেখলে মানসিক চাপ-জাত রোগে আক্রান্ত হতে পারে। পিটিএসডির মূল লক্ষণগুলোর মধ্যে আছে_ বারবার ঘটনাটি উপলব্ধি করা, ওই ঘটনার কথা এড়িয়ে চলা এবং সবকিছুতে উদাসীনতা। আপনার মায়ের মধ্যে এসব উপসর্গের সবই বিদ্যমান। মূলত সাইকোথেরাপির মাধ্যমে পিটিএসডির চিকিৎসা করা হয়। এর সঙ্গে ওষুধ ব্যবহার করলে আরও দ্রুত ভালো ফল পাওয়া যায়। সাইকোথেরাপির মধ্যে কগনেটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি ও ইএমডিআর ভালো কাজ করে। ওষুধের মধ্যে আছে ইমিপ্রামিন, ফ্লুক্সেটিন, সারট্রালিন, এস-সিটালোপ্রাম ইত্যাদি
। 

প্রতি শীতে সমস্যাটা হয়
দশ বছর ধরে প্রতি শীতে আমার সমস্যাটা হয়। তখন আমার ঘুম কমে যায়। কথা বেশি বলি। টাকা-পয়সা বেশি খরচ করি। একেকটা নতুন নতুন ব্যবসার প্রজেক্ট হাতে নিই, তা ধরে ব্যাংক লোন নিই, পরে সেটা নিয়ে বিপদে পড়তে হয়। নিজেকে তখন কী যে মনে হয়! দুনিয়ার রাজা-বাদশা কেউ আমার সামনে কিছু না, আমিই সব। এই সময় স্ত্রীকে বেশি বেশি কাছে চাই। লাজলজ্জা কমে যায়। আমার ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া মেয়ে আছে তারপরও বিয়ে করার জন্য উঠেপড়ে লাগি। কয়েক মাস এ রকম হয়। নানা ফকির-কবিরাজ করতে করতে এক সময় আপনিতেই সেরে উঠি। পরের বছর আবার অসুস্থ হই।  

উত্তর : আপনি যে অসুস্থতায় ভুগছেন তাকে আমরা বলি বাইপোলার অ্যাফেকটিভ ডিজ অর্ডার বা ম্যানিক ডিপ্রেসিভ সাইকোসিস বাংলা করলে দাঁড়ায়_ হর্ষ-বিষাদ উন্মাদনা। এ অসুস্থতার এক পর্বে রোগী অত্যন্ত আনন্দ উচ্ছল হয়ে পড়েন, নিজেকে অনেক বড় কিছু মনে করেন, যেমনটা আপনি বর্ণনা করেছেন ঠিক তেমনি। আর অসুস্থতা অন্য পর্বে রোগী খুব বিমর্ষ হয়ে পড়ে, বিষণ্নতায় ভোগে। এ অসুস্থতার চিকিৎসাকে দু'ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। 
এক. অসুস্থতাকালীন চিকিৎসা: এ সময় মুড স্ট্যাবিলাইজারের সঙ্গে অ্যান্টিসাইকোটিক ওষুধ যেমন হ্যালোপেরিডল, রিসপেরিডন, ওলানজিপিন ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। 
দুই. অসুস্থতা পরবর্তীকালে রোগের পুনঃআক্রমণ রোধের জন্য মুড স্ট্যাবিলাইজার যেমন লিথিয়াম কার্বোনেট, সোডিয়াম ভেলপ্রোয়েট ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। এ রোগের জন্য দীর্ঘদিন চিকিৎসা নিতে হয়। নিয়মিত চিকিৎসা নিলে ওষুধ খেয়ে রোগী বেশ স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে পারে। 


মেয়েরা এ রোগে বেশি ভোগে
সমস্যা : সমস্যাটা আমার খালার। বয়স ৩০। গৃহিণী। সে যার বাড়িতে যায় কিছু না কিছু চুরি করে আনে। খুব দামি জিনিস-এমন না। এনে যে ব্যবহার করে তাও না। কিন্তু যে বাসা থেকে জিনিসটা নিয়ে এলো তারা তো ঠিকই টের পায় যে, খালা আসার পর তাদের জিনিস হারিয়েছে। খালাকে যতই জিজ্ঞেস করা হোক সে নিয়েছে কি-না; কিছুতেই সে স্বীকার যায় না। পরে ঠিকই তার কাছে ওই জিনিস পাওয়া যায়। এ নিয়ে খালু তাকে বেশ কয়েকবার মারধরও করেছেন। কাজ হয়নি। কী লজ্জার ব্যাপার বলেন তো!

উত্তর : এটা একটা রোগ, তাই এখানে লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই। মারধর করেও কোনো লাভ নেই। এ রোগের নাম ক্লিপটোম্যানিয়া, বাংলায় বলা যেতে পারে চুরির বাতিক। মেয়েরা এ রোগে ভোগে বেশি। এ রোগাক্রান্তরা হঠাৎ কোনো একটা জিনিস দেখে নিজের মধ্যে তা চুরি করার অদম্য ইচ্ছাবোধ করে। সাধারণ চোরের সঙ্গে তাদের তফাৎ হলো এই যে, তারা যেই জিনিসটা চুরি করার টার্গেট করে তা যে খুব দামি তা না। সেটা তার প্রয়োজন তাও নয়। জিনিসটি সে বিক্রি করে টাকা আয় করবে না, ব্যবহারও করবে না। তারা সাধারণত টাকা চুরি করে না। তাদের চুরিটা যেন শুধু চুরির জন্য চুরি করা। চুরি করে তারা যে খুব সুখ পায় তাও না। চুরি করার আগ মুহূর্তে চুরি করার জন্য প্রচণ্ড তাড়না বোধ করে; কিন্তু চুরি করা হলেই অপরাধবোধের একটা কষ্ট পেয়ে বসে তাকে। সাধারণত বিষণ্নতাবিরোধী ওষুধ যেমন ক্লোমিপ্রামিন, ফ্লুক্সেটিন, সাট্রালিন, এসসিটালোপ্রাম ইত্যাদি এবং মুড স্ট্যাবিলাইজার- লিথিয়াম ভেলপ্রোয়েট ইত্যাদি দিয়ে এ রোগের চিকিৎসা করা হয়। এর সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের কগনেটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি প্রয়োগ করা হয়। 





সংগ্রহীত

2 comments:

  1. আমি সকল রোগের বিষয় ও সমাধান পরে বুঝতে পারলাম, আমার কোন রোগ নেই , আমি নিজের থেকে রোগ তৈরি করতাছি , আসলে আমার কিছু - ই হয় নি, কিন্ত-উ আমি আমার একটি কাজ সম্পন্ন করতে চাছি , আমি একটা প্লান করছি সোস্যাল এওয়ার-নেস ওয়েবসাইট তৈরি করবো যেই ওয়েবসাইট - এর মেম্বার বাংলাদেশের সবাই,

    আমার এই প্লান করাটা যদি কোন রোগ হয়ে থাকে তাহলে আমাকে রোগের কারন বলুন ,, রোগের না্‌ম বলুন, রোগের সমাধান বলুন.........।\
    কারন আমি চাই না আমি যেই রোগে ভুগতাছি সেই রোগে অন্য কেউ ভুগুক।

    ReplyDelete
  2. হটাত প্রচন্ড বদমেজাজি হয়ে জায়, এমনিতে সবার সাথে ভাল ব্যবহার করে তবে কুন কাজ তার পছন্দ না হলে, ভাল না লাগিলে মেজাজা হারিয়ে ফেলে।।অল্প তেই রাগ করে। স্যার দের সাথে মেজাজ হারিয়ে প্রচন্ড বাজে ব্যাবহার করে।। অনেক টা ছটফট করে। জিজ্ঞাস করলে কিছুই বলে না।তার বন্দু বান্দব্দের বলে তার নাকি কিছুই ভাল লাগে না।মেজাজ হারানুর পর কারো সাথে খারাপ ব্যাবহার করার পর মাথা বেথা করে।অনেক খন পর তাকে এই ব্যাপারে বুজালে বুজতে পারে এবং কান্নাকাটি করে, নিজেকে এর জন্য মাফ করতে পারে না, এইরকম পরিস্থিতি তীরি করে।এটি কি কুন মানসিক রুগ।।। রুগ হলে এর নাম কি???????

    ReplyDelete