সাইকোথেরাপি কি?

১. প্রশ্নঃ ক্নিনিক্যাল সাইকোলজিস্টরা কি কাজ করেন?

উত্তরঃ ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্টরা মূলতঃ মানসিক স্বাস্থ্য পেশাজীবি, তারা মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাজনিত বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে কাজ করেন যেমনঃ
ক. মনোবৈজ্ঞানিক পরিমাপন, যেমন- বুদ্ধি, ব্যক্তিত্ব ইত্যাদি পরিমাপ করা।
খ. মানসিক রোগের মনোবৈজ্ঞানিক চিকিৎসা দেয়া যা সাইকোথেরাপি বা কাউন্সেলিং নামে পরিচিত। এটি কথার মাধ্যমে করা হয়।
গ. মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে প্রশিক্ষন দেয়া।
ঘ. মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে বিভিন্ন ধরণের গবেষণা করা।
ঙ. মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা বিষয়ে জাতীয় নীতি নির্ধারণে ভূমিকা পালন করা।

২. প্রশ্ন: ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট কাকে বলে?

উত্তরঃ বাংলাদেশে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট তারাই, যারা মনোবিজ্ঞানে বিএসসি (সম্মান) ও কিনিক্যাল সাইকোলজিতে এমএসসি/এমএস এবং এম ফিল ডিগ্রী অর্জন করেন। বর্তমানে  ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্নিনিক্যাল সাইকোলজির একমাত্র  কোর্স রয়েছে। এছাড়াও বিদেশে ক্লিনিক্যাল  সাইকোলজি বিষয়ে বিভিন্ন মেয়াদী কোর্স আছে। ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্টরা মনোবিজ্ঞানের জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় চিকিৎসা করে থাকেন।

৩. প্রশ্নঃ  সাইকোলজিস্টদের কাছে সার্ভিস নিতে কত টাকা লাগে?

উত্তরঃ সরকারী প্রতিষ্ঠানে আউটডোরের টিকেট কেটে  সাইকোলজিস্ট দেখানো যায়। এই টিকেটের মূল্য আসলে খুবই নগণ্য। স্বায়ত্ব শাসিত চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে এবং প্রাইভেট হসপিটালে প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত ফিস জমা দিয়ে সাইকোলজিস্ট দেখাতে হয়। ক্লিনিক্যাল  সাইকোলজিস্টরা প্রাইভেট প্র্যাকটিসও করেন। বিভিন্ন সাইকোলজিস্ট বিভিন্ন মাত্রায় চার্জ নির্ধারণ করেন। অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেবার সময়ে আপনি নির্ধারিত চার্জ কত তা জেনে নিন।  

৪. প্রশ্নঃ সাইকোলজিস্ট ও সাইকিয়াটিস্টের মধ্যে পার্থক্য কি?

উত্তরঃ সাইকোলজিস্ট তারা যারা মনোবিজ্ঞানে বিএসসি (সম্মান) ও কিনিক্যাল সাইকোলজিতে এমএসসি/এমএস এবং এম ফিল ডিগ্রী অর্জন করেন। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা মনোজ্ঞিান বিভাগে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি পড়ানো হয়। এছাড়াও বিদেশে সাইকোলজি বিষয়ে বিভিন্ন মেয়াদী প্রশিক্ষণ কোর্স আছে। সাইকোলজিস্টরা মনোবিজ্ঞানের জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার চিকিৎসা করে থাকেন। 

অন্যদিকে সাইকিয়াট্রিস্ট হলেন মানসিক রোগের ডাক্তার। এমবিবিএস পাশ করার পর তারা মানসিক বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রী লাভ করেন। আমাদের দেশে সাইকিয়াট্রিতে ডিপিএম, এফসিপিএস, এমডি এবং এম ফিল ডিগ্রী দেয়া হয়। 

সাইকিয়াট্রিস্টরা ঔষধ প্রদানের মাধ্যমে মানসিক রুগীদের চিকিৎসা প্রদান করেন। অন্যদিকে সাইকোলজিস্টরা কোন ঔষধ প্রয়োগ করেন না। তারা কথার মাধ্যমে (কাউন্সেলিং বা সাইকোথেরাপি) চিকিৎসা করেন।

৫. প্রশ্নঃ মানসিক রোগ চিকিৎসায় ভাল হয় কিনা?

উত্তরঃ মানসিক রোগ চিকিৎসায় ভাল হয়। কিছু কিছু জটিল রোগ ভাল না হলেও ঔষধ প্রদানের মাধ্যমে অনেকটা রোগের নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব।

৬. প্রশ্নঃ কথার মাধ্যমে মানসিক রোগ কিভাবে ভাল হয়?

উত্তরঃ কিনিক্যাল সাইকোলজিস্টরা মূলত সাইকোথেরাপি দিয়ে থাকেন। তারা কথার ও যুক্তির মাধ্যমে ব্যক্তির চিন্তা, অনুভূতি ও আচরনের পরিবর্তন করেন। ফলে মানসিক সমস্যা নিরাময় হয়। এছাড়া প্রশিক্ষন দিয়ে তারা মানুষের জীবনযাত্রার উন্নয়ণ ঘটান। যেমন, সামাজিক প্রশিক্ষন, সমস্যার সমাধানের প্রশিক্ষন দেয়া ইত্যাদি।

৭. প্রশ্নঃকোন কোন রোগের ক্ষেত্রে সাইকোথেরাপি দিতে হবে?

উত্তরঃ অনেক ধরণের মানসিক সমস্যার ক্ষেত্রেই সাইকোথেরাপি ভূমিকা রাখতে পারে। তবে হতাশা, অমূলক ভীতি, আতঙ্কজনিত বিকৃতি, সাধারনীকৃত উদ্বেগজনিত বিকৃতি, অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিজর্ডার, অতিরিক্ত রাগ, উদ্বিগ্নতা, মনোযৌন সমস্যা, দাম্পত্য সমস্যা, শিশুদের বিভিন্ন সমস্যায় এই চিকিৎসা বিশেষভাবে ভূমিকা রাখতে পারে।

৮. প্রশ্নঃ কখন বুঝব আমার সাইকোথেরাপি দরকার?

উত্তরঃ যখন আপনার ভিতর মানসিক চাপ, হতাশা, উদ্বিগ্নতা ইত্যাদি তীব্র ভাবে অনুভূত হবে, এই লণ দীর্ঘ সময় ধরে থাকবে এবং আপনার সামাজিক, পারিবারিক, ব্যক্তিগত, পেশাগত জীবন বিপর্যস্ত হবে তখন আপনার সাইকোথেরাপি দরকার। তবে সচেতন মানুষেরা লণ অধিক তীব্র হওয়ার আগেও সাইকোথেরাপির মাধ্যমে অসুস্থ্য হওয়ার ঝুকি কমিয়ে থাকেন। এছাড়া লণ তীব্র না হলেও মানসিক ভাবে অসুস্থ্য হওয়ার ঝুকি না থাকলেও জীবনের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আপনি কাউন্সেলিং নিতে পারেন।

৯. প্রশ্নঃ বাংলাদেশে মানসিক রোগ কি মাত্রায় আছে?

উত্তরঃ বাংলাদেশে পূর্র্ণ বয়স্ক মানুষের ভিতর ১৬.১ ভাগের এবং শিশুদের ভিতর ১৮.৪ ভাগের মানসিক রোগ আছে।

১০. প্রশ্নঃ সাইকোথেরাপি কি?

উত্তরঃ সাইকোথেরাপি হল মনোবৈজ্ঞানিক চিকিৎসা পদ্ধতি। সাইকোথেরাপিতে সাইকোলজিস্ট পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে কায়েন্টের মনের কথা শুনেন। কায়েন্ট তার মনের কথা বলে হালকা হয়ে নিজেই নিজের জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্তগুলো নেন। প্রয়োজনে সাইকোলজিস্ট কায়েন্টকে বিভিন্ন ধরণের দতা প্রশিণও দেন। যেমন, সামাজিক দতা প্রশিণ, সমস্যার সমাধানের দতা প্রশিণ ইত্যাদি। এছাড়া কায়েন্টের মনের মধ্যে যদি নেতিবাচক চিন্তা বা ধ্যান ধারণা থাকে তবে কথা বলে ও যুক্তির মাধ্যমে পরোভাবে তা সংশোধনের চেষ্টাও সাইকোথেরাপিতে করা হয়। নেতিবাচক চিন্তা কমে গেলে কায়েন্টের মন ভাল হয়ে আসে, তার আচার-আচরণও শারীরিক লণেরও উন্নতি হয়। সাইকোথেরাপি সেশন সচরাচর অন্তুতঃ পঞ্চাশ মিনিট হয়। কখনো কখনো এমনকি এর বেশীও হতে পারে। একটি মাত্র সেশনে কিন্তু কাজ হয়না। সচরাচর সপ্তাহে একটি করে অন্ততঃ আট দশটি সেশন প্রয়োজন হয়। তবে সমস্যা ও ব্যক্তির চাহিদা অনুযায়ী বেশিও লাগতে পারে।