Thursday 29 November 2012

হীনমন্যতা বা ইনফেরিওরিটি কমপ্লেক্স



নিজেকে অপরের থেকে ছোট ভাবা একটি মারাত্নক মানসিক সমস্যা যা পরিবারে, সমাজে, রাষ্ট্রীয় জীবনে বিপর্যয় আনতে পারে। 


হীনমন্যতা বা ইনফেরিওরিটি কমপ্লেক্স কি? 


এটা এক ধরনের অনুভূতি যা আক্রান্ত ব্যক্তিকে মনে করিয়ে দেয় সে অন্যদের তুলনায় নিচু বা নিকৃষ্ট কিছু ব্যাপারে। এটা কোন কোন সময় অবচেতনভাবে জন্ম লাভ করে; তবে ব্যক্তি এটার প্রকাশ ঘটায় কিছু অভাবনীয় সাফল্যজনক কাজ করে বা মানসিক বিকারগ্রস্ত লোকদের মতো মারাত্নক বিপর্যয় সৃষ্টি করে। 


হীনমন্যতা তৈরি হওয়ার কারণ?


সাধারণত চারটি প্রধান কারণে হীনমন্যতা তৈরি হতে পারে। এগুলো হচ্ছে 


১. বাবা-মা’র আচরণ এবং তাকে অযত্নে বড় করে তোলা,  বাবা-মা সন্তানকে সবসময়ই নেগেটিভ অ্যাটিচুড, সবকিছুতে না বলা, সন্তানের চাহিদা ও ব্যবহারে এনালাইজ না করা, বিশেষত ছয় বছর বয়সের আগে এই হীনমন্যতা তৈরি হতে পারে। এছাড়াও বাবা-মার সম্পর্ক খারাপ হলে ঝগড়া-ঝাটি করলে, শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হলে, মতের মিল না হলে, এক সঙ্গে খাওয়া দাওয়া চলাফেরা না করলে, সন্তানদের সঠিক পর্যাপ্ত সময় না দিলে, তাদের সুখ-দুঃখ ভাগ না করলে এবং প্রতিটি ভালো কাজে উৎসাহ না দিলে, খারাপ কাজ করার জন্য অনুৎসাহিত না করলে বাচ্চাদের হীনমন্যতায় ভোগার সম্ভাবনা বেশি থাকে। 


২. শারীরিক ত্র“টি ক্ষ মুখ ও শরীরের অস্বাভাবিকতা, উচ্চতা সঠিক না হওয়া, ওজন বাঞ্ছিত না হয়ে মেদশূন্য বা মোটা বা খুব পাতলা হওয়া, কথার সমস্যা, চোখের সমস্যা, কানের সমস্যা ইত্যাদি হীনমন্যতা তৈরি করতে সাহায্য করে। 


৩. মানসিক সীমাবদ্ধতা ক্ষ যখন অন্য সন্তান বা অন্যদের ভালো কাজের প্রশংসা এবং তুলনা করা হয় যেখানে মোটামুটি সন্তোষজনক ফলাফল হলেই প্রত্যাশিত ছিলÑ এ ধরনের অবস্থা অন্য সন্তানকে হীনমন্যতা তৈরিতে সাহায্য করে। 


৪. সামাজিক অসুবিধা এবং বৈষম্য;    বিশেষত পরিবার, বর্ণ, গোত্র, যৌনশিক্ষা, অর্থনৈতিক অবস্থা এবং ধর্ম হীনমন্যতা তৈরির জন্য দায়ী। 


হীনমন্যতার প্রকারভেদ


হীনমন্যতাকে প্রধানত দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে। একটি প্রাইমারি অন্যটি সেকেন্ডারি। প্রাইমারি হীনমন্যতা বলতে উঠতি বয়সের বাচ্চাদের দুর্বলতা, সাহায্য না পাওয়া এবং নির্ভরতায় আদি অভিজ্ঞতাকেই বুঝায়। সেকেন্ডারি হীনমন্যতা বলতে প্রাপ্ত বয়স্কদের একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে না পারা, যার জন্য অচেতনতা, সঠিক নির্দিষ্ট লক্ষ্য ঠিক না করা এবং হীনমন্যতার অনুভব দূর করার জন্য কোন সাফল্য না পাওয়া বুঝায়। 


হীনমন্যতা বা ইনফেরিওরিটি কমপ্লেক্স কীভাবে দূর করা বা প্রতিরোধ করা যাবে 
ক. পরিবারে বাবা-মা-ভাই-বোন আত্নয়-স্বজন এ ধরনের কোন বাচ্চা থাকলে তার সঙ্গে ভালোবাসা দিয়ে বুঝিয়ে উৎসাহ দিয়ে অন্যান্য বাচ্চাদের সঙ্গে তুলনা না করে তাকে বুঝানো যে সে যা সেটাই তার জন্য স্বাভাবিক। বিনোদনমূলক কার্যক্রম, দেশে বিদেশে ঘোরানো, খেলাধুলার ব্যবস্থা, সাংস্কৃতির কর্মকাণ্ডে জড়িত করার চেষ্টা করতে হবে। 
খ. কোন বহিরাগত ফ্যাক্টর যেমন ভালোবাসার পার্টনার, খ্যাতিমান হওয়ার চেষ্টা না করা বা অনেক ইনকাম না করা। এগুলো পরিত্যাগ করে নিজের ওপর বিশ্বাস রাখা যে, আমার শক্তিতে চেষ্টায় আমি যা করছি সেটাই আমার জন্য সর্বোত্তম। 


গ. তাকে এটা বুঝানো যে সে পবিত্র হয়েই জন্মগ্রহণ করেছে এবং এখন শুধু প্রোগ্রামড হয়ে অনুভব করছে যে সে হীনমন্য। পৃথিবীতে কেউ হীনমন্যতা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে না এটা তাকে বুঝানো। হয়তো কেউ তার থেকে একটু বা বেশি ভালো করছে তার নিজস্ব গুণে। কিন্তু সময় সুযোগ পরিস্থিতি পেলে তুমিও ভালো করবে। 


ঘ. তোমার হীনমন্যতার জন্য তুমি দায়ী নও এটা বুঝানো। 


ঙ. এটা বুঝানো যে বর্ণবাদীরা সবসময়ই নিজেদের হীনমন্যভাবে এবং তারা অন্যদের হীনমন্য ভাবতে উৎসাহ দেয়। 


চ. কমপেনসেশান দিয়ে হীনমন্যতার সমাধান হয় না। তুমি পয়সার জন্য, অবস্থানের জন্য, শক্তি এবং খ্যাতির জন্য অনেক কিছু অবৈধ করতে পার কিন্তু সেটা তোমাকে হীনমন্যতা থেকে রেহাই দেবে না। 


ছ. এটা বোঝার চেষ্টা করবে আত্মবিশ্বাস অর্জন একটা শৈলী এবং এটা শিক্ষণীয়। কেউই আত্মবিশ্বাস নিয়ে জন্মগ্রহণ করে না। কারণ আত্মবিশ্বাস জিন বলে কিছু নেই বরং তুমি আত্মবিশ্বাসী হওয়ার চেষ্টা করলে সফলকাম হবে। 


জ. ধর্মীয় অনুশাসন, রীতি-নীতি মেনে চলা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ। পরিমিত আহার, সঠিক সময়ে নিদ্রাযাপন, শারীরিক পরিশ্রম, প্রচুর পরিমাণে ফলমূল শাকসবজি পানি গ্রহণ। 


চিকিৎসা 
যে কোন পরিবারের কোন সদস্য হীনমন্যতায় ভুগছে সন্দেহ হলে তাকে প্রতিরোধের জন্য উপরে বর্ণিত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করতে হবে। এতেও কাজ না হলে বিশেষজ্ঞ মানসিক চিকিৎসক, সাইকোথেরাপিস্টের কাছে নিয়ে নিয়মিত চিকিৎসা করাতে হবে। আমাদের সবাইকে এ ব্যাপারে এখন থেকে সচেতন ও উদ্যোগী হতে হবে।

3 comments:

  1. সবথেকে বড় শক্তি হল মনের....যখন এটা হারিয়ে যায় তখন কোন চিকিৎসা বা পরামর্শেও কিছু হয়না।

    ReplyDelete
  2. মনের শক্তিটাই বড়....যখন মরে শক্তিটা হারিয়ে যায়..তখন কোন চিকিৎসা বা পরামর্শে কোন কাজ হয় না।

    ReplyDelete