Thursday, 3 October 2013

উৎকন্ঠা বা Anxiety

১। পরিবারের প্রিয় মানুষটি যদি হঠাৎ নিয়মের ব্যতিক্রম করে নির্ধারিত সময়ের পরেও বাসায় ফিরে না আসে, কোন যোগাযোগও না করে তবে তার জন্য স্বজনেরা স্বভাবতই চিন্তিত হন, উৎকন্ঠিত হন। আবার আগামীকাল আপনার নিজের শরীরে একটা অপারেশন হবে  সেটা নিয়েও আপনি ভয় পাবেন, এটাই স্বাভাবিক। কোন ধরণের শারীরিক মানসিক-সামাজিক হুমকি, বিপদ বা অনাকাংক্ষিত ঘটনার আভাস পেলে আমরা সতর্কিত হই, সেটিকে মোকাবেলা করবার জন্য দেহ ও মনের এই প্রতিক্রিয়া বা আবেগকে বলা হয় ভীতি (Fear)। প্রকৃত আসন্ন বিপদ বা হুমকিকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট ভীতি কোন রোগ নয় কিন্তু কারন ছাড়া তৈরী হওয়া ভীতি বা উদ্বিগ্ন হওয়াটাই
চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় উৎকন্ঠা বা Anxiety । প্রকৃত কারণে উৎকন্ঠিত হওয়াটা কোন অস্বাভাবিকতা নয়।
২। উৎকন্ঠা বা Anxiety এর অস্বাভাবিক প্রকাশ দুইরকম ভাবে হতে পারে  প্রথমত উৎকন্ঠিত হবার মতো যথার্থ কোন কারন ( কোন আসন্ন বিপদ বা ক্ষতিগ্রস্থ হবার সম্ভাবনা ) না থাকা সত্ত্বেও যদি কেউ মনগড়া কারনে অযথা ভীতিগ্রস্থ হয়ে পড়েন। যেমন স্কুল থেকে তার সন্তান হারিয়ে যাবে শুধু এই কারনে কেউ যদি স্কুলের গেটের কাছে বসে বসে ঘামেন বা স্কুলে তার সন্তান ছাঁদ থকে পড়ে যাবে ভেবে স্কুলে পাঠানোই বন্ধ করে দেন অথবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সাপ পাওয়া গেছে খবর পড়ে কলাবাগানের এপার্টমেন্টে বসে সাপের ভয়ে সিঁটিয়ে থাকেন ইত্যাদি। দ্বিতীয়ত ভয় পাওয়ার যথার্থ কারন রয়েছে ঠিকই কিন্তু ভয় পাওয়ার প্রকাশভঙ্গির মাত্রা অর্থাৎ উৎকন্ঠার পরিমাণ অস্বাভাবিক রকম বেশী, ভয়ের কারনের অনুপাতে অনেক বেশী। 
যেমন সন্তানের স্কুল থেকে বাসায় ফিরতে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে একঘন্টা পেরিয়ে গেলে  অস্বাভাবিক উৎকন্ঠায় মা নিজেই হয়ত অজ্ঞান হয়ে গেলেন; খবরে দেখলেন মতঝিলে গাড়ি ভাংচুর হচ্ছে, বোমা ফুটছে আর সেই সময় আপনার কোন প্রিয়জন বাসার বাইরে আছেন - তিনি মতিঝিলে আছেন না কোথায় আছেন না জেনেই অযথা উৎকন্ঠিত হয়ে, ঘেমে নেয়ে চিৎকার করে পাড়া মাথায় করে ফেললেন। 
উৎস ভেদে উৎকন্ঠা আবার দু রকম  এক, বস্তুগত / স্থানগত (Objective or Situational)  টিকটিকি বা আরশোলা দেখে ভয় পাওয়া বা নৌকায় চড়তে ভয় পাওয়া, একা একা কোথাও যেতে সাহস না পাওয়া। দুই, পরিবর্তনশীল উৎকন্ঠা (Free floating anxiety)  কেউ কেউ সকল কিছু নিয়ে সবসময় উৎকন্ঠিত হন, কারো হার্ট এটাক হয়েছে শুনলে ভাবতে থাকেন আমারও তো বুকে ব্যথা হয়, আমারও হার্ট এটাক হচ্ছে, সেই তিনিই সন্তান স্কুলে গেলে ভয়ে উৎকন্ঠায় আধমরা হয়ে যান; আবার চোরের ভয়ে বাড়িতে চারটে কলাপসিবল গেটে আটটি তালা ঝুলিয়েও তার রাতে ঘুম আসে না।
৩। উৎকন্ঠা আমাদের মন থেকেই তৈরী হয়। জটিল মনস্তাত্ত্বিক স্নায়োবিক পরিবর্তনের কারনে উৎকন্ঠার উদ্ভব, Sigmund Freud এর মতে অবচেতন মনের অবদমিত কামনা বাসনা গুলো যখন সজ্ঞান চেতনায় আসতে চায় তখন তৈরী হয় মানসিক দ্বন্দ্ব; আর এই দ্বন্দ্বের প্রকাশই হচ্ছে উৎকন্ঠা। মনোবিজ্ঞানের পরিভাষায় উৎকন্ঠা বা Anxiety প্রধানত তিন প্রকার।
· জেনারেলাইজড এংজাইটি ডিসর্ডার - যেক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তি প্রায় সবসময় সবকিছু নিয়ে উৎকন্ঠিত হন, পরিবর্তনশীল উৎকন্ঠার উদাহরণে আমরা যেটা দেখতে পেয়েছি।
· ফোবিক এংজাইটি ডিসর্ডার - কোন বিশেষ বস্তু, প্রানী, পরিবেশ, পরিস্থিতির সম্মুখীন হলে উৎকন্ঠায় আক্রান্ত হওয়া। যেমন অনেক লোকের ভীড়ে গেলে উৎকন্ঠিত হওয়া(Agoraphobia) , তাই ভীড়ের জায়গা এড়িয়ে চলেন তারা। এ ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তি ঐ বস্তু বা পরিস্থিতির সম্মুখীন না হলে উৎকন্ঠিত হন না।
· প্যানিক ডিসর্ডার - কোন বস্তু বা পরিস্থিতির সম্মুখীন না হয়েও মাঝে মাঝে নিজের কল্পনা প্রসুত কারনে উৎকন্ঠিত হওয়া, যেমন রাতে শুয়ে আছে, হঠাৎ আজ  রাতে যদি আমার হার্ট এটাক হয় এটা ভেবেই নির্ঘুম রাত কাটিয়ে দিলেন। এক্ষেত্রে উৎকন্ঠিত হবার মত নূন্যতম কোন বাস্তু বা ঘটনাই উপস্থিত নেই।
৪। উৎকন্ঠার লক্ষণ নানা রকম হতে পারে -
· ভীতি গ্রস্থ হওয়া
· খিটখিটে মেজাজ
· সামান্য শব্দে উত্তেজিত হওয়া
· অস্থিরতা
· মনোযোগের অভাব
· ভুল পথে চিন্তা করা
· মুখ-জিহবা শুকিয়ে যাওয়া ও পানি পিপাসা পাওয়া
· ঢোক গিলতে অসুবিধা হওয়া
· পেটে অস্বস্তি বোধ করা
· পেট ফাঁপা ভাব
· বারবার বাথরুমে যাওয়া
· বুকে চাপ অনুভব করা
· নিশ্বাস নিতে অসুবিধা হওয়া
· বুক ধরফর করা
· মেয়েদের পিরিয়ডের সমস্যা হওয়া
· হাত পা এর কাপুঁনি হওয়া - বিশেষত হাতের আঙ্গুল কাঁপা 
· মাথা ব্যথা,গা ব্যথা,হাত পা জ্বালা করা
· ইনসমনিয়া (ঘুম কম হওয়া),হঠাৎ ঘুমের মধ্যে ভয় পেয়ে জেগে উঠা
· দুশ্চিন্তা করা
· দাঁত দিয়ে নখ কামড়ানো
· বসে বসে পা নাড়ানো
· ক্ষিধে কমে যাওয়া
· বিষন্নতা
· অবসেশন - বিশেষ কিছু নিয়ে ক্রমাগত ও বারবার চিন্তা করা (রাতে শোবার পর কয়েকবার উঠে দেখা দরজা বন্ধ করা হয়েছে কি না)
· উৎকন্ঠায় আক্রান্ত হওয়ার কারন - বিশেষ বস্তু, প্রাণী, ভীড়, সামাজিকতা ইত্যাদি এড়িয়ে চলা
· ঘাম হওয়া,বমি বমি ভাব হওয়া
· হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসা
· মৃত্যুভয় পাওয়া ইত্যাদি
সবগুলো লক্ষণ যে একই ব্যক্তির মধ্যে একসাথে পাওয়া যাবে তা কিন্তু নয়, বরং উৎকন্ঠার প্রকারভেদে কিছু লক্ষণ ভিন্ন ভিন্ন সময় দেখা যায়।

৫। মানসিক অসুস্থতার মধ্যে উৎকন্ঠা বা Anxiety নিরাময় ও নিয়ন্ত্রণযোগ্য। তবে কেবলমাত্র ওষুধ প্রয়োগ করে এ রোগের লক্ষণগুলো কমিয়ে রাখা যায় কিন্তু পুরোপুরি নিরাময় করবার জন্য বেশ কিছু প্রক্রিয়া অনুসরন করা যেতে পারে, যেমন 
· সাইকোথেরাপি বা মনোচিকিৎসা - মনোচিকিৎসকের সাহায্য নিয়ে।
· আচরণ পরবর্তন করার প্রক্রিয়া (Behaviour therapy)
· শিথিলায়ন প্রক্রিয়া (Relaxation technique)
· প্রয়োজন মতো ঘুমানো।
· খাদ্যাভ্যাস ও দৈনন্দিন অভ্যাসের পরিবর্তন - সহজপাচ্য খবার ও প্রচুর পানি পান করা।
· ক্যাফেইন সমৃদ্ধ পানীয় পরিহার করা ও অতিরিক্ত মদ্যপান কমানো।
· বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে এন্টি-এংজাইটি ওষুধ সেবন।
· চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কারনে -অকারনে ঘুমের ওষুধ খাওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করা।
মনে রাখতে হবে একজন উৎকন্ঠিত রোগীর জন্য - উপসর্গ, রোগীর বয়স ইত্যাদি ভেদে উপরের প্রক্রিয়াগুলোর মধ্যে বাছাই করে চিকিৎসাপদ্ধতি প্রদান করা হয়।
৬। এংজাইটি থেকে সৃষ্টি হতে পারে বিষন্নতার মতো কঠিন মানসিক ব্যাধি। তাই দেরি না করে উৎকন্ঠা কমানোর জন্য মেনে চলুন কিছু নিয়ম কানুন,  আর প্রয়োজনে সহায়তা নিন চিকিৎসকের।
নেট থেকে

1 comment:

  1. sir, ami ey ohetuk voy rog e akranto, amr moner moddhe khub voy kaz kore sob somoi, lok jon ase emon dekhley buk er vitor dhor for eto druto hoy ta bolar baire, coaching e sir er kase ques kno din koreni voy te, oporicito meyeder sathe kotha bolte voy, unknown manush er sathe kotha bolte voy, amr age 21, ami kub prb e asi, uni te prestation er din ami voy te jay n a coz sbr samne ktha blbo vabtey hat pa kapa, golar sor change ar buk dhorfor kore, SIR doya kore amay prescribe kore diben ki, ami khub e upokrito hotam, plz plz

    ReplyDelete