মানুষ সামাজিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে অনেকেই ভীতি, উদ্বেগ আর লজ্জায় ভোগেন থাকেন। এতে তাদের যোগাযোগের ক্ষেত্র সীমিত হয়ে পড়ে এবং অন্যদের সঙ্গে ব্যবধান তৈরি হয়। কিন্তু অন্য মানুষের থেকে নিজেকে আলাদা করে রাখলে আপনি একদিন না একদিন নিজের অস্থিতকে স্বাভাবিক ভাবে নাও পেতে পারেন।তাই আপনি যদি এই সমস্যা সম্মুখিন হয়ে থাকেন ।তাহলে পড়ে নিতে পারেন নিচের এই ১১টি উপায়-
১. আপনার ভয়গুলোর মুখোমুখি হন
আপনার ভয়গুলোর মুখোমুখি যদি আপনি না হন, তাহলে সেগুলো আপনার পিছু ছাড়বে না। সামাজিক বিভিন্ন উপলক্ষে পার্টি ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়াটা অনেকের কাছে ভীতিকর। কিন্তু আপনি যতোই এগুলোর মুখোমুখি
হবেন, ততোই এগুলোতে অভ্যস্ত হবেন। এটা আপনার কোনো চাকরিতে প্রথম দিনের মতো। সেখানে কয়েক সপ্তাহ থাকার পর আপনি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন। এজন্য ছোট পদক্ষেপে শুরু করতে পারেন। প্রথমেই ছোট ভয়গুলোকে কাটাতে হবে। যেমন সদাই কেনার জন্য বাইরে যাওয়া বা চায়ের দোকানে কোনো অপরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে কথা শুরু করা।
২. নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখুন
নিজের মাথায় সামাজিক নেতিবাচক বিষয়গুলো লালন করে রাখা সত্যিই খারাপ। আর এর ফলে যদি আরেকটি সামাজিক উপলক্ষ আপনি ত্যাগ করেন তা হবে নিজেকে প্রহার করার মতোই। নিজের প্রতি এতোটা নির্দয় হবেন না। সামাজিক কোনো উপলক্ষ বাদ দিলে নিজেকে বলুন, নিজের জন্য আপনি এ সময়টা ব্যয় করছেন। তবে আগামীতে অবশ্যই এধরনের বিষয় বাদ দিবেন না।
৩. সমস্যাকে সমস্যা মনে না করুন
এটা বড় কোনো সমস্যাকে ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে ফেলার মতোই ব্যাপার। ধরুন একটি বড় যাত্রাপথে যাচ্ছেন আপনি। এজন্য সম্পূর্ণ যাত্রার চিন্তা না করে আগামী স্টপেজ বিষয়ে প্রথমে চিন্তা করুন। এভাবে অনেক কিছুকেই ভাগ করে ফেলা সম্ভব। ধরুন একটি পার্টিতে আপনি যাচ্ছেন। এতে সম্পূর্ণ পার্টির বিষয়টি চিন্তা না করে পানীয়ের বিষয়টি চিন্তা করুন। এরপর দাঁড়ানো বা বসার জন্য কোনো স্থান ঠিক করার চিন্তা করুন। এরপর কথা বলার জন্য কাউকে খুঁজে বের করুন। এভাবে ভাগ ভাগ করে কাজ করার ফলে বিষয়টা অনেকখানি সহজ হয়ে যাবে।
৪. ভয়ের বিষয়ে নিকটতম মানুষের সাথে আলোচনা করুন
আপনার মতো সামাজিক বিষয়ে ভীত মানুষদের সঙ্গে আলোচনা করা নিঃসন্দেহে ভালো হতে পারে। একই ধরনের অভিজ্ঞতা অর্জনকারীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। আপনার আশপাশে খুঁজলেই এমন মানুষ পাবেন।
৫. মন নিয়ন্ত্রনের জন্য ধ্যান করুন
যে কোনোধরনের ভয় দূর করার জন্য ধ্যান খুবই কায্যকর। এক মিনিটের ধ্যানই অনেক ক্ষেত্রে কার্যকর হয়ে উঠে। এজন্য চোখ বন্ধ করে বা কোনো নির্দিষ্ট দিকে তাকিয়ে সবকিছু ভুলে যান। ৬০ সেকেন্ডের এ ধ্যানে আপনার নিঃশ্বাসের দিকে খেয়াল রাখুন আর অন্য সবকিছু ভুলে যান। এভাবে নেতিবাচক চিন্তা ভুলে যান আর দূর করুন সামাজিক ভীতি।
৬. নতুন কিছু করার চেষ্টা করুন
নতুন কোনো বিষয় শুরু করলে অনেকেই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। কিন্তু নতুন কোনো শখ পালন সামাজিক উদ্বেগ কমিয়ে দিতে পারে। কোনো বন্ধুকে নিয়ে বা একাই কোনো ভ্রমণে যেতে পারেন। এছাড়া হস্তশিল্পের মতো উদ্ভাবনী কাজ শুরুও নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচয়ের সুযোগ তৈরি করবে। ফলে তাদের সঙ্গে একরকম অনেককিছু নিয়ে আলাপ করা যাবে।
নতুন কোনো বিষয় শুরু করলে অনেকেই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। কিন্তু নতুন কোনো শখ পালন সামাজিক উদ্বেগ কমিয়ে দিতে পারে। কোনো বন্ধুকে নিয়ে বা একাই কোনো ভ্রমণে যেতে পারেন। এছাড়া হস্তশিল্পের মতো উদ্ভাবনী কাজ শুরুও নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচয়ের সুযোগ তৈরি করবে। ফলে তাদের সঙ্গে একরকম অনেককিছু নিয়ে আলাপ করা যাবে।
৭. লিপিবদ্ধ করুন
আপনার উদ্বেগের বিষয় ডায়েরিতে লিখে ফেলুন। এটি উদ্বেগের কারণের দিকে দৃষ্টিপাত করতে সাহায্য করবে। এতে অনেক সময় নিজের উদ্বেগের কোনো কারণ নেই বলেও বোঝা যাবে। লিপিবদ্ধ করে রাখার ফলে যখন আপনি কিছুটা উন্নতি লাভ করবেন, তখন নিজের অতীত অবস্থার সঙ্গে বর্তমানের তুলনা করতে পারবেন। এতে আপনার আত্মবিশ্বাস আগের তুলনায় অনেক বাড়বে।
৮. নিজেকে চাপ দিন
সামাজিক উদ্বেগ কমানোর জন্য নিজে উদ্যোগি হতে হবে। ছোট ছোট পদক্ষেপে এগিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি নিজেকে এজন্য চাপও দিতে হবে। যদি কোনো পদক্ষেপ একা নিতে না পারেন তাহলে কারো সাহায্য নিতে পারেন। প্রথমে আশপাশে ঘুরে বেড়ানোর মতো সহজ পদক্ষেপে এগিয়ে যেতে হবে। এরপর ক্রমে কঠিন সামাজিক কাজও করতে পারবেন আপনি।
৯. উদ্বেগ আপনাকে নিয়ন্ত্রণ করে না
অনুভব করুন আপনার উদ্বেগ হয়, কিন্তু উদ্বেগ আপনাকে নিয়ন্ত্রণ করে না। এভাবে নিজেকে উদ্বেগ মুক্ত করার জন্য চেষ্টা করুন। আপনার বন্ধু-বান্ধবদের উদ্বেগের কথা খুলে বলুন। এতে তারা আপনার সাহায্যে এগিয়ে আসতে পারে।
১০. নিজের আত্ম-সম্মান বজায় রাখুন
নিজের আত্ম-সম্মান বজায় রাখার নিয়মিত চেস্টা করুন। স্মার্টফোনের অ্যাপে এবং ইউটিউবে আত্ম-সম্মান বাড়ার অনেক ভিডিও পাওয়া যায়। সেগুলো দেখে রাতে ঘুমানোর আগে তা অনুশীলন করতে পারেন। এগুলো আপনাকে আত্ম-সম্মানী ও আত্মবিশ্বাসী করবে।
১১.কখনো নিজেকে একা ভাবেন না
অনেকেই সামাজিক উদ্বেগে ভোগেন। অনেকের ক্ষেত্রে এর মাত্রা খুবই বেশি থাকে।আবার অনেকের কম থাকে। আপনার উদ্বেগ যদি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তাহলে তা নিয়ন্ত্রণে আনার এখনই উপযুক্ত সময়। আজকের একটি ছোট পদক্ষেপ আগামীর জন্য বড় পদক্ষেপ হতে পারে, যা আপনাকে সুখী ও স্বাচ্ছন্দ্য করবে।
নেট থেকে
No comments:
Post a Comment