Friday 16 November 2012

আত্মহত্যাঃ কিছু মনস্তত্ত্ব বিশ্লেষণ ও স্পেশালিষ্টদের মতামত


"আত্মহত্যা" শব্দ্বটা শুনলেই বেশীরভাগ মানুষের মনে চলে আসে সিনেমাটিক কিছু চিত্র। দুঃখের বিষয় আমাদের সমাজে এখনও এটাকে 'অতি নাটকীয়তা' ধরে নেওয়া হয়। ঘটনা সম্পূর্ণ উল্টো। একজন মানুষের কাছে সবচেয়ে প্রিয় তার জীবন। সেই জীবন নিয়ে নেয় মানুষ একেবারেই অনন্যোপায় হয়েই। 


এবারে দেখা যাক কেন কেউ আত্মহত্যা করেঃ 



১। বিষণ্ণতা (depression): কোনও প্রশ্ন নেই যে বিষণ্ণতাই এক নম্বর কারণ আত্মহত্যার। বিষণ্ণতার রকম এবং কারণ বিবিধ। সম্পূর্ণ স্বাচ্ছন্দ্যের জীবনেও কেউ ভয়াবহ বিষণ্ণতায় ভুগতে পারে। ডাক্তাররা বলেন, সাধারণতঃ শিশু বয়সের বিভিন্ন ঘটনা পরবর্তী অ্যাডাল্ট জীবনে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব রেখে যায়। এর ভেতরে আছে শিশু বয়সে যৌন, মানসিক বা শারীরিক নির্যাতন, বাবা-মার দাম্পত্য কলহ বা ঝগড়া বিবাদ, কোনও ধরণের ভয়াবহ ঘটনা নিজের চোখে দেখা ইত্যাদি। এছাড়া মডার্ন মেডিসিন বলে, জেনেটিক কারণে অনেকে অন্যের চেয়ে বেশী ঝুঁকিতে থাকে বিষণ্ণতায় ভোগার। 

২। মনোব্যাধি: 
সিজোফ্রেনিয়া জাতীয় মানসিক রোগঘটিত কারণে আত্মহত্যা আরেকটি বড় কারণ। আরও অনেক ধরণের মানসিক রোগ কোনও ধরণের চিকিৎসা ছাড়া ফেলে রাখলে তা আত্মহত্যায় শেষ হতে পারে। যদিও ঢালাওভাবে বললে বিষণ্ণতাকেও মানসিক রোগ বলা যায়।

৩। ঝোঁকের বশেঃ অ্যালকোহল, ড্রাগ ইত্যাদির প্রভাবে ঝোঁকের বশে আত্মহত্যা চেষ্টা করে অনেকেই। পরবর্তীতে অনেকেই মনে করতে পারে না কেন এরকম তারা করেছিল। 

তবে এগুলো বললে আসলে ঠিক 'কারণ' না বলে 'কারণের পেছনের কারণ' বলা উচিত। কেউ আত্মহত্যা করেছে শুনলেই আমরা জিজ্ঞেস করি 'কেন?'। সেভাবে চিন্তা করলে নিচে 
আত্মহত্যার কারণগুলি হলঃ

 

- আর্থিক দৈন্য

- নারী-পুরুষের প্রেমঘটিত সমস্যা

- জীবনে কোনও 'ট্রমাটিক' ঘটনা 

- বড় ধরণের কোনও 'লস' 

- সামাজিক চাপ 

ইত্যাদি

তবে এই ধরণের অনেক কিছুর ভিতর দিয়ে কিন্তু অনেকেই যায় কিন্তু সবাই কিন্তু আত্মহত্যা করে না। তাই 'কারণের পিছনের কারণ' আরও গুরুত্বপূর্ণ। 

এখানে উল্লেখ্য, পুরুষের আত্মহত্যার হার ও প্রবনতা অনেকগুণ বেশী নারীর চেয়ে। যদিও মিডিয়ায় প্রাধান্য পায় নারীর আত্মহত্যা বেশী। কারণটা সহজেই অনুমেয়। 

এবারে দেখা যাক কিভাবে অনুমান করা যেতে পারে কেউ আত্মহত্যা করবে কিনাঃ 

১। মৌখিক হুমকিঃ 'আমি তো বোঝা', 'আমাকে ছাড়া তোমরা ভালো থাকবে', 'চলে যাব আমার সব কিছু গুছিয়ে' ইত্যাদি। 

২। আত্ম-ধ্বংসমূলক কাজকর্ম যেমন নিজের শরীরে কাটাকাটির চেষ্টা করা, অ্যালকোহল বা ড্রাগস গ্রহন, হঠাৎ আগ্নেয়াস্ত্র বা ঘুমের ওষুধ ইত্যাদি কেনা।

৩। হঠাৎ করে কাজকর্ম, পড়াশুনা বা বন্ধু-বান্ধব থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়া, নিজের প্রিয় সব জিনিসপত্র দিয়ে দেওয়া। 

৪। বারবার মৃত্যু, আত্মহত্যা ইত্যাদি নিয়ে কথা বলা। 

৫। অসহায়ত্ববোধ একটি সাধারণ লক্ষ্মণ। সম্পূর্ণ অসহায় বোধ না করলে কেউ নিজের জীবন ত্যাগ করার কথা ভাবে না। 

৬। ইনসমনিয়া বা ঘুমের অভাব, খাওয়া-দাওয়া ত্যাগ করা ইত্যাদি। 

এবার দেখা যাক বিশেষজ্ঞরা কি ট্রিটমেন্ট-এর কথা বলেন বা কাউকে সুইসাইডের হাত থেকে কিভাবে বাঁচানো যায়ঃ 

১। যদি আপনার কোনও প্রিয়জন সম্বন্ধে মনে হয় সে আত্মহত্যা করতে পারে, তার সাথে খোলামেলা কথা বলা খুবই জরুরী। এ ক্ষেত্রে মনোযোগ দিয়ে তার কথা শোনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় কোনভাবেই তাকে দোষারোপ করলে হিতে বিপরীত হতে পারে। অবশ্যই কোনও রকম জাজমেন্ট-এ যাবেন না। 

২। আত্মহত্যা করতে চাইলে তাকে জিজ্ঞেস করুন কিভাবে করতে চায় সে এই কাজ। যত ডিটেলস সে বলতে পারবে, বুঝবেন তার আত্মহত্যার ইচ্ছা তত বেশী। 

৩। একা তাকে ফেলে যাবেন না কোনোমতেই। 

৪। নিজে নিজে এই সমস্যা দূর করার চেষ্টা করবেন না। অবশ্যই একজন প্রফেশনালের সহায়তা নিন। সে যতই বাধা দিক না কেন, তাকে বুঝিয়ে তার উপকার করার চেষ্টা করতে হবেই। 

৫। কোনও একজন থেরাপিস্ট-এর কাছে কাজ না হলে আরেকজনের কাছে চেষ্টা করে দেখতে পারেন। সবাই সমান সাহায্য করতে পারবে না আর সব ধরণের ডাক্তারের মতই। 

৬। সব ডাক্তারই বলেন, 'সুইসাইড ভিক্টিমস আর ক্রাইং আউট ফর হেল্প'। তাদের প্রতি সব ধর্মেই অনেক নেগেটিভ কথা বলা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই, যারা বেঁচে ফিরে, তারাও সহজে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে না। এ ক্ষেত্রেও তার আশেপাশের সবার বিশাল দায়িত্ব রয়েছে। সহমর্মিতার দৃষ্টিতে দেখতে হবে এবং কোনও আত্মহত্যার চেষ্টা বা হুমকি একেবারেই হাল্কাভাবে নেওয়া যাবে না। এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা বারবার জোর দেন। তাদের ভবিষ্যতে অনেক থেরাপির প্রয়োজন। 

গুরুত্বপূর্ণ পরিসংখ্যানঃ 

- About one-third of people who try to commit suicide will try again within 1 year

আত্মহত্যামূলক চিন্তা দূর করার কিছু উপায়ঃ 

-Keep a journal to write down your thoughts

-Go out with friends and family

-Avoid drugs and alcohol

-Learn to recognize your earliest warning signs of a suicidal episode

আপনার নিজের কোনও আত্মহত্যামূলক চিন্তা ঘন ঘন বাড়তে থাকলে বা কোনও ভয়াবহ ব্যাক্তিগত ঘটনায় যদি অসহায় বোধ করেন, অবশ্যই কোনও নিকট বন্ধু বা আত্মীয়র সাথে কথা বলুন। সবচেয়ে ভালো হয় কোনও থেরাপিস্টের সাহায্য নিতে পারলে। শুধু মাত্র কথা বলার মাধ্যমেই অনেক ভালো বোধ করতে পারেন আপনি। এছাড়া ইন্টারনেট ঘাঁটলেও অনেক সাহায্য পাবেন। জীবন সবার জন্য সমান না। এটা মেনে নিয়েই বেঁচে থাকার এবং আরও সুন্দর করে তোলার চেষ্টা করি আমরা সবাই।  


সৌজন্যে:  নিপাট গর্দভ

No comments:

Post a Comment