সমস্যা : আমার ভাতিজা। বয়স আঠারো। এইচএসসি সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে। গত দু'মাস ধরে ও খুব অস্বাভাবিক আচরণ করছে। ও দিনরাত ঘুমাচ্ছে না। সারাক্ষণ ভয়ে থাকে ঘুমালেই কেউ ওকে মেরে ফেলবে। ওর বাবা-মা, ভাইবোন কাউকে চোখের আড়াল হতে দিচ্ছে না। বলছে, ওদের পেছনে শত্রু আছে। খাবার খেতে চায় না। জোর করে দিলে দু'এক লোকমা খেয়ে ফেলে দেয়। বলে, ভাতে ইঁদুর মরা গন্ধ। কী রকম ভীতসন্ত্রস্ত ভাব। মাঝে মধ্যে একা একা নিজে নিজে কী যেন বলে। নিজের দু'কান আঙুল দিয়ে বন্ধ করে রাখে। কেন কানে আঙুল দিচ্ছ জিজ্ঞেস করলে বলে, তোমরা শুনতে পাও না? ওই ওরা আসছে। আমরা অনেক ফকির-কবিরাজ করছি। ঝাড়ফুঁক, তাবিজ তুমার করেছি, জিনের তদ্বির করেছি। কোনো ফল হয়নি। অনেকে বলে, এটা মানসিক রোগ। আসলে কি তাই? এ রোগের কোনো চিকিৎসা আছে?
সমাধান :আপনার ভাতিজার অসুস্থতা স্পষ্টতই মানসিক রোগ। যেহেতু রোগের দুই মাস, আমরা এটাকে ব্রিফ সাইকোটিক ডিজঅর্ডার বলব। এই উপসর্গ যদি ছয় মাস বা তারচেয়ে বেশি কাল ধরে চলতে থাকে তাহলে আমরা তাকে বলব সিজোফ্রেনিয়া।
কানে গায়েবি আওয়াজ শোনা, নিজের ও পরিবারের অন্যদের ক্ষতির ষড়যন্ত্র চলছে এমন ভ্রান্ত বিশ্বাসসহ নানা অলীক প্রত্যক্ষণ [যা বাস্তবে নেই তাও উপলব্ধি করা] ও ভ্রান্ত বিশ্বাস রোগীর মধ্যে দেখা যায়। রোগীর কথাবার্তা, আচার-আচরণে এসব ভ্রান্ত বিশ্বাস ও গায়েবি আওয়াজের প্রতিফলন দেখা যায়।
ট্রাইফ্লুপেরাজিন, হ্যালোপেরিডল, ক্লোরপোমাজিন ইত্যাদি গ্রুপের ওষুধ দিয়ে অতি অল্প খরচে এ রোগের সফল চিকিৎসা করা যায়। আবার রেসপিরিডন, ওলানজিপিন, অ্যারিপিপ্রাজল, জিপ্রাসিডন, কিউটিপিন, এমিসালপিরাইড, ক্লোজাপিন ইত্যাদি আধুনিক ওষুধ দিয়ে শুধু যে রোগীকে উপসর্গমুক্ত করা যায় তাই নয়; অনেক ক্ষেত্রে তাদের প্রায় স্বাভাবিক জীবনযাপনে সক্ষম রাখা যায়। রোগী যত দ্রুত কার্যকরী চিকিৎসা গ্রহণ করবে তার সুস্থতার হার ও মাত্রা তত বেশি হবে।
ডা. জিল্লুর কামাল
সাবেক সহকারী অধ্যাপক, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনিস্টিটিউট, ঢাকা
No comments:
Post a Comment