Sunday 12 January 2014

কিশোরী প্রেম, অতঃপর...




ফারজানা আহমেদের (ছদ্মনাম) একমাত্র সন্তান পুতুল। মেয়েকে পুতুলের মতোই সারাক্ষণ বুকে আগলে রাখতেন তিনি। তার পরও কোথায় যেন দূরত্ব ছিল মেয়ের সঙ্গে। মেয়ের মনের ভিতর কী খেলা করত, তা কি দেখতে পারেননি তিনি?  
একদিন সকালে ঘুম ভেঙে ফারজানা দেখেন তাঁর আদরের মেয়ে বাসায় নেই। পড়ার টেবিলে বইয়ের পাশে খামে ভরা ছোট্ট একটা চিরকুট...‘মা, আমি তমালের সঙ্গে চলে গেলাম, ভালো থেকো।’ মাথায় যেন বাজ পড়ল ফারজানা আহমেদের। কে এই তমাল? ফারজানা চেনেন না, কখনো নামও শোনেননি! কিন্তু বুঝতে বাকি রইল না যে বাড়ি থেকে পালিয়েছে তাঁর
আদরের পুতুল!
পুতুলের মতো ১৬, ১৭ বছর বয়সী কিশোরীরা অনেকটা না বুঝেই প্রেম করে বিয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলছে। ফলাফল—অল্প দিনেই বিয়ে-বিচ্ছেদ নয়তো ভয়ংকর স্বাস্থ্যঝুঁকি। অবুঝ বয়েসে বিয়ের পর মানিয়ে নিতে পারে না অনেকেই। শ্বশুরবাড়ির লোকেরা আন্তরিক হয়ে সহায়তা না করলে বিপদ আরও বেশি। এ সময় তারা না পারে পরিস্থিতি সামাল দিতে, না পারে ফেলে আসা নিজ পরিবারের কাছে ফিরে যেতে। গভীর হতাশা নিয়ে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে এ যাত্রায় ঘটতে পারে বিয়ে-বিচ্ছেদও। অল্প বয়সে বিয়ে-বিচ্ছেদের পরিণতিও হয় মারাত্মক। 
এদিকে, আইনগতভাবে ১৮ বছরের কম বয়সী মেয়েদের বিয়ে নিষিদ্ধ হওয়ায় এমন বিয়ের ঘটনা ঘটলে আইনের মুখোমুখি হতে হবে ছেলে-মেয়ে এবং বিয়ের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের। অন্যদিকে, চিকিত্সাবিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ১৮ বছর বয়সের নিচে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হলে লিঙ্গ পরিবর্তনের মতো মারাত্মক ঝুঁকির আশঙ্কা থাকে। কিন্তু আমাদের সমাজেও এমন ভুলে জড়িয়ে অনিশ্চিত জীবনে পা বাড়াচ্ছে অনেক কিশোর-কিশোরী।


অল্প বয়সে প্রেমের বিয়ের মতো ভুল করার পেছনেও সামাজিক ও পারিবারিক নানা কারণ রয়েছে। মুঠোফোনে অপরিচিত কারও সঙ্গে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আলাপ করা, ফেসবুকে অপরিচিতদের সঙ্গে আবেগী সম্পর্কে জড়িয়ে যাওয়া থেকে এমন ঘটনা ঘটতে পারে। আবার পারিবারিক কারণে একাকিত্ব বা হতাশায় ডুবে থাকা কিংবা অসত্ সঙ্গে জড়িয়ে মাদকাসক্ত হয়ে পড়া থেকেও এটা ঘটতে পারে। মা-বাবার চোখের সামনে থেকেও যেন আড়ালে হারিয়ে যায় এসব কিশোর-কিশোরী।
মনোচিকিত্সকের মতে, কিশোর বয়সে আবেগী প্রেমে জড়ানোর অন্যান্য কারণের মধ্যে পরিবারের সদস্যদের ভালোবাসা না পাওয়া অন্যতম। এমন কিশোরীরা খুব সহজেই বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করে। চোখের নেশায় মুহূর্তেই ভুলে যায় সবকিছু। এ সময়ে মানসিক রোগাক্রান্তও হয়ে পড়তে পারে কেউ কেউ।
 ‘পারিবারিক শিক্ষা, ভালোবাসা আর পরিমিত নিয়ন্ত্রণই পারে এমন কিশোরীদের অল্প বয়সে প্রেম এবং বিয়ের মতো সিরিয়াস বিষয় থেকে দূরে রাখতে। সব মা-বাবাই সন্তানকে ভালোবাসেন, তা ঠিক। কিন্তু উঠতি বয়সে তার মনোজগতে কী ঘটছে, সে বিষয়ে একটু বাড়তি খেয়াল রাখুন। রাগ না করে বুঝিয়ে বলুন সবকিছু। অভিভাবক হয়েও ওদের সঙ্গে বন্ধুর মতো খোলামেলা কথাবার্তা বলুন।’ আপনার বাড়তি খেয়াল আর যত্নই পারে পুতুলের মতোই আপনার কিশোরী মেয়েটার এমন ঝুঁকিপূর্ণ অজানার পথে পা বাড়ানো রোধ করতে।



1 comment: