Sunday 16 February 2014

গাঁজা এবং মানসিক রোগ

গাঁজা একটি গাছের নাম যার বৈজ্ঞানিক নাম Cannabis indica. প্রাচীন কাল থেকে গাঁজা সারা দুনিয়ায় একটি বহুল ব্যবহৃত মাদক। কম মুল্য এবং সহজলভ্যতার কারনে নিম্ন আয়ের নেশাখোরদের মাঝে অত্যন্ত আদরনীয়। গাজা গাছের নির্জাসই মুলত নেশার বস্তু হিসেবে কার্যকর, যার নাম ক্যানাবিনল। ক্যানাবিডিয়ল এবং ক্যানাবিনলিক এসিডও এর কার্যকর উপাদান।


দেশে দেশেঃ
ভিন্ন ভিন্ন নামে বিভিন্ন দেশে এর বিস্তার। গাঁজা গাছের শীর্ষ পাতা এবং ডাল যা এই উপমহাদেশে গাঁজা নামে পরিচিত একই জিনিস পশ্চিমা দেশ গুলোতে মারিজুয়ানা বা মারিহুয়ানা নামে পরিচিত। গাছের পাতা বা ডালের আঠালো কষ দিয়ে তৈরী এ অঞ্চলের চরস নামের জিনিসটিই পশ্চিমা দেশের হাশিশ। ভাং, সিদ্ধি, পাট্টি, সব্জি, গ্রাস, মাজুন নানা নামে ডাকা হয় এই বিষাক্ত নিষিদ্ধ বস্তুটিকে।


কেন নিষিদ্ধ ও কতটা ক্ষতিকর গাজা?
এই মাদকটি গ্রহনে-

১।দৃষ্টিভ্রম
২।বাচালতা
৩।মাংশপেশীর অনিয়ন্ত্রিত ও অপ্রয়োজনীয় সংকোচন
৪।দিকভ্রান্ত হওয়া
৫।মাথা ঘুরা
৬।ক্ষুধা লাগা
৭।গভীর ঘুমে অচেতন হয়ে যাওয়া
৮।সময়জ্ঞান হারানো থেকে শুরু করে প্রলাপ বকা
৯।বিকার আসা এমনকি মানুষকে হত্যাকরার ইচ্ছাও জাগ্রত হতে পারে।
১০।মাত্রা বেশী হয়ে গেলে

১১।অনেক সময় হাত পা এর নড়াচড়ার নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলা,
১২।হাতে পায়ে ঝি ঝি ধরা এবং অবশ হয়ে যাওয়া,
১৩।কথা জড়িয়ে যাওয়া,
১৪।মানসিক বিকারগ্রস্ত হয়ে যাওয়া থেকে শ্বাস কষ্ট হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

পরিনতিঃ
নিয়মিত এবং বেশী মাত্রায় গাঁজা জাতীয় দ্রব্য সেবনে গাঁজা সাইকোসিস (Ganja-psychosis) নামে একধরনের লক্ষন হয়। এতে চোখে রক্তজমে চোখ লাল হয়ে যায়, ক্ষুধামন্দা, নির্জিবতা, শরীরের মাংস-পেশী শুকিয়ে যাওয়া, অত্যাধিক দুর্বলতা, হাত-পা অনবরত কাপতে থাকা, পুরুষত্বহীনতা থেকে শুরু করে পুরোপুরি মানসিক রোগী হয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকে।

রানিং এমোক (Running amok) নামক আরেক ধরনের মানসিক বিপর্যয় ও গাঁজা সেবিদের পরিণতি হয়ে আসতে পারে। অবিরত গাঁজা সেবনের কারনে অনেক সময় এদের দৃষ্টিভ্রম (Hallucination), নির্যাতিত-বঞ্চিত হবার কল্পনা থেকে এরা হিংসাত্মক, আগ্রাসি সন্ত্রাসীর ভূমিকায় অবতীর্ন হতে পারে। রানিং এমক হলে লোকটি চোখের সামনে যাকে পায় তাকে তার কল্পিত শত্রু মনে করে অস্ত্র নিয়ে হত্যা করতে পারে এবং এই মানসিক অবস্থা কেটে যাবার আগ পর্যন্ত যাকে সামনে পায় ক্রমান্বয়ে তাকেই হত্যা করার চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকে। এই আবেশ কেটে গেলে একসময় সে আত্মহত্যা করতে যেতে পারে অথবা আত্মসমর্পনও করতে পারে।

গাঁজা সমাজে অশিক্ষিত, সীমিত আয়ের জনগোষ্ঠির মধ্যেই বেশী প্রচলিত। সহজলভ্যতা এবং সস্তা হওয়ায় এর প্রচলন ধীরে ধীরে বেড়ে চলেছে। এটা নিয়ন্ত্রন করতে না পারলে গাজার বিষাক্ত শ্বাস এই সমাজের অনেক তাজা প্রানের বিনাশ ঘটাতে পারে।

তথ্য সূত্র ও ছবি কৃতজ্ঞতাঃ উইকিপিডিয়া, বিভিন্ন ফোরাম এবং গুগলি সার্চ ইঞ্জিন।

No comments:

Post a Comment