Wednesday 5 March 2014

কিভাবে সফল ব্যক্তিরা মানসিক চাপ সামলে কাজ করেন

কর্মজীবনে সফল এবং ব্যস্ত ব্যক্তিরা কীভাবে কর্মক্ষেত্রে সব সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখেন? ট্যালেন্টসস্মার্ট প্রায় ১০ লাখেরও বেশি মানুষের ওপর এক গবেষণা চালিয়েছে। দেখা গেছে, তাদের শতকরা ৯০ ভাগ নানামুখী চাপের পরও কাজের সময় নিজেদের আবেগ বা ক্লান্তি সামলাতেও যথেষ্ট পারদর্শী।
মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশ বিভিন্ন মানসিকতা ধারণ করে। সৃষ্ট মানসিক অবস্থা মগজের বিভিন্ন পর্যায়ে অবস্থান করে। যাহোক, এই চাপকে সহনীয় পর্যায়ে রাখলে কাজ করার সময় মাথা সহজ ও স্বাভাবিক অবস্থায় কাজ করতে পারে।
ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া পরিচালিত নতুন এক গবেষণায় বের হয়ে এসেছে যে, সহনীয় পর্যায়ের মানসিক চাপ কতোটুকু হতে পারে এবং এ চাপ

সামাল দেওয়া কতোখানি জরুরি। এ গবেষণার নেতৃত্ব দিয়েছেন পোস্ট ডক্টোরাল ফেলো এলিজাবেথ কিরবি। তিনি বললেন, সব মিলিয়ে সৃষ্ট মানসিক চাপ মস্তিষ্ককে উন্নততর করতে প্রয়োজনীয় নতুন কোষ গজাতে বাধাগ্রস্ত করে। আবার অবিরাম চাপ মস্তিষ্ককে যথেষ্ট সচল রাখে এবং মগজ চালু থাকলে কাজও ভালোভাবে করা যায় বলেও মনে করেন এলিজাবেথ। পশুদের ক্ষেত্রে এমন অবিরাম মানসিক চাপ তাদের আচরণের মধ্য দিয়ে প্রকাশ পায়। বহু আগে মানুষও তাদের মানসিক চাপজনিত প্রভাব দৈহিক আচরণ দিয়ে প্রকাশ করতো। তবে কালের বিবর্তনে শিক্ষা, অভিজ্ঞতা এবং সভ্যতা বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের মস্তিষ্ক এ ধরনের চাপের বিষয়ে বুঝতে পেরেছে এবং তা নিয়ন্ত্রণের অভিজ্ঞতাও অর্জন করেছে।
মানসিক চাপের ফলে হৃদযন্ত্রের সমস্যা বৃদ্ধি, বিষণ্নতা এবং মেদ বৃদ্ধির সঙ্গে কর্মক্ষেত্রে আপনার কাজের সক্ষমতা হ্রাস করে। সৌভাগ্যের বিষয় হলো, এই চাপ সামলানোর উপায় রয়েছে যার প্রয়োগ করে সুস্থ থাকার পাশাপাশি নিজের কর্মক্ষমতা বাড়ানো যায়।
যে মানুষ যতো বড় হয়েছেন তার কাজের মাত্রা এবং মানসিক চাপও ততো বেশি। কিন্তু তারা এই চাপকে নিয়ন্ত্রণ করে দিনের পর দিন কাজ করে যাচ্ছেন এবং নিজেদের আরো মানসম্পন্ন করছেন। এই সফল মানুষরা কিভাবে তাদের কাজের জন্য ক্ষতিকর চাপ নিয়ন্ত্রণ করেন তা দেখে নেওয়া যাক।
নিজের যা আছে তা নিয়ে তুষ্ট থাকা
আপনার যা আছে তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকার চেষ্টা করবেন। এতে সব সময় আপনার ভিতরে এক ধরনের তুষ্টি এবং উৎফুল্লতা কাজ করবে যা শতকরা ২৩ ভাগ মানসিক চাপ সৃষ্টিকারী হরমোন কর্টিসল কমিয়ে দেয়। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ডেভিস তাঁর পরীক্ষায় দেখেছেন যে, নিজের ওপর সন্তুষ্ট থেকে কৃতজ্ঞতা নিয়ে যারা কাজ করে যান, তারা সুস্থ্য মানসিকতা, শক্তি এবং দৈহিকভাবে সুস্থতা নিয়ে কাজ করতে পারেন।
যদি এমন হয়?- এ প্রশ্নকে ছুটি দেওয়া
যেকোনো কাজে 'যদি এমন হয়' প্রশ্নটি জুড়ে দিয়ে কাজটি কঠিন করে ফেলাটা খুব খারাপ বিষয়। কাজে সফলতা না পাওয়ার সম্ভাবনা যাচাই করতে গেলে, সফল হওয়ার সম্ভাবনা কমতে থাকবে। আর এতে আপনি মানসিকভাবে ততোই বিপর্যস্ত হতে থাকবেন। সফল মানুষরা জানেন যে, যদি না হয় ইত্যাদি প্রশ্ন করা মানেই দুশ্চিন্তার সাগরে ডুব দেওয়া।
সব কিছুতে ইতিবাচক থাকা
ইতিবাচক মনোভাব মানসিক চাপের প্রভাবকগুলোকে দুর্বল করে দেয়। এতে মস্তিষ্ক খুব দ্রুত হালকা হয়ে আসে। তা ছাড়া যেকোনো ইতিবাচক চিন্তা নতুন কোনো সম্ভাবনা খুঁজতে মগজকে ব্যস্ত হয়ে পড়তে সহায়তা করে। এই ইতিবাচক সম্ভাবনা বর্তমান সময়ে না খুঁজে পেলে আগের দিন বা অতীতের যেকোনো সময় থেকে খুঁজে বের করে আনুন। মূল কথা হলো, আপনার মাথায় যখনই নেতিবাচক চিন্তা চলে আসবে, তখনই মানসিক চাপ জেঁকে বসবে। তাই তৎক্ষণাত সম্ভাবনার কথা ভাবা প্রয়োজন।
অবসর সময় কাটান
কাজ চলাকালীন অবস্থায় মাঝখানে একটু জিরিয়ে নিলে মন ফুরফরে থাকে। প্রযুক্তির এই ব্যস্ত যুগে ২৪/৭ ফরমেটে কাজ করা অসম্ভব। তা ছাড়া একাধারে কাজ করা মানে মানসিক চাপকে টেনে বড় করা। এই চাপ তৈরি হওয়ার আগেই কাজ থেকে ক্ষান্ত দিন। মোবাইলটি বন্ধ করে দিন।
গবেষণায় দেখা গেছে, প্রযুক্তির যুগে চব্বিশ ঘণ্টা মোবাইল বা মেইলটি খোলা থাকা মানেই সর্বদা কোনো না কোনো কাজের সঙ্গে যোগাযোগ থাকা। তাই মাঝেমাঝে মোবাইল বা ইন্টরনেট সংযোগটি বন্ধ করে একটু জিরিয়ে দেখুন, নিজেকে কতোটা রিল্যাক্স মনে হয়।
সব সময় ক্যাফেইন নয়
এক কাপ কফি খেয়েই আবার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারেন। ক্যাফেইন শরীরে গিয়ে আপনার কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে দিবে। মন এবং দেহ একটু দুর্বল হয়ে পড়লে চাঙ্গা করবে এক কাপ কফি। কিন্তু একটু জিরিয়ে নেওয়ার সময় এক কাপ কফি গিলে ফেললেন- তা ঠিক নিয়। যখন গা এলিয়ে দিয়েছেন তখন দেহকে চাঙ্গা করার প্রয়োজন নেই। তখন দুর্বল শরীরটাকে একটু বিশ্রাম দিন।
পর্যাপ্ত ঘুম
নিজের মানসিক চাপ সামাল দিতে পর্যাপ্ত ঘুমের কোনো বিকল্প নেই। আপনি যখন ঘুমান তখন মস্তিষ্ক রিচার্জ হতে থাকে। ঘুমের অভাবে আত্ম নিয়ন্ত্রণ, মনযোগ এবং স্মৃতিশক্তি সব কিছুই কমে আসে। মাথাকে ঠাণ্ডা রাখতে যে হরমোনের প্রয়োজন হয়, ঘুমের সময় তার সরবরাহ ঘটে। অনেক সময় কোনো কাজ রয়েছে যখন ঘুমানোর সময় হয় না। এসব ক্ষেত্রে অবশ্যই একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর গভীর ঘুমে তলিয়ে যেতে হবে।
নিজেকে নিয়ে দুশ্চিন্তা
নিজের ব্যাপারে দুশ্চিন্তা করা মানেই ওইসব বিষয়ে শক্তি নষ্ট করা। নিজের ব্যাপারে নানা দুশ্চিন্তার বিষয়গুলো সাধারণত কোনো বাস্তবতা নয়, এগুলো স্রেফ দুশ্চিন্তা। এসব চিন্তার উদয় হলেই নিজেই নিজেকে থামিয়ে দিন। নিজেকে নিয়ে দুশ্চিন্তা যতো কমাবেন ততো বেশি আপনার মাথা পরিষ্কার থাকবে।
নিজের ব্যাপারে খারাপ কিছু থাকলে তার ব্যাপারে আপনার মস্তিষ্ক নিজেই সময়মতো কাজ করবে। এর জন্য অযথা সময় নষ্ট করে চিন্তা করবেন না। এতে শুধু চাপ বাড়বেই।
চিন্তাধারার পুনর্বিন্যাস
সফল ব্যক্তিরা চিন্তাধারাকে বিন্যাস করেন। কিছু অবস্থা রয়েছে যা হয়তো আপনি বদলাতে পারবেন না। যেমন- কোনো কাজের অবাস্তবিক ধরাবাধা সময়, অপছন্দের বস বা ব্যাপক যানজট ইত্যাদি আপনি সামলাতে পারবেন না। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে আপনার চিন্তাধারা বদলাতে পারেন। এতে আপনার বিরক্তি বা দুশ্চিন্তাঘটিত চাপ কমে আসবে। কোনো বিষয়ে যদি বিস্তারিত চিন্তা করে মনে হয় যে, সব কিছুই ভুল হচ্ছে বা কোনো কিছুই হচ্ছে না, তাহলে নতুন করে সাজানোর চিন্তা করুন। নতুন কিছুতে নতুন সম্ভাবনা বেরিয়ে আসবে।
বুক ভরে শ্বাস নিন
চরম দুঃসময়ে বুক ভরে শ্বাস নিলে চাপ কমে আসে এবং মাথা কাজ করতে শুরু করে। এটা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। খুব সাধারণ কাজ, কিন্তু ব্যাপক ফলাফল। বিশাল চাপের সময় দরজা বন্ধ করে চেয়ারে বসুন। শুধুমাত্র শ্বাস টেনে নিয়ে ছেড়ে দেওয়াতে মনযোগ দিন। সারা দিন ধরে তো করেনই, তবে এবার এতেই ধ্যান দিন। শ্বাস-প্রশ্বাসের শব্দ শুনুন এবং ভারী করে টানুন। অন্য প্রসঙ্গে চিন্তার উদয় হতে পারে। তবুও আবার খেয়াল টেনে আনুন নিঃশ্বাসে। এভাবে গুনে গুনে ২০ বার শ্বাস টানুন। ভুলে গেলে আবার শুরু করুন। দেখবেন আপনি কতখানি রিল্যাক্স হয়ে যান।
সহযোগীদের সাহায্য নেওয়া
সফল ব্যক্তি তাঁদের সহযোগীদের কাছ থেকে সাহায্য নিতে কার্পণ্য করেন না। এ সহযোগী হতে পারেন আপনার অফিসের অধ্যস্তন কেউ বা বাইরের কোনো বন্ধু। নিজের যেসব বিষয়ে দুর্বলতা রয়েছে তা নিশ্চয়ই আপনি চিহ্নিত করে রেখেছেন। কাজে আপনার দুর্বল বিষয় প্রয়োগের প্রয়োজন হলে বাইরের সাহায্য নিন। কিন্তু নিজের দুর্বলতার কারণে কাজ হচ্ছে না- এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে যাবেন না। বরং এসব মুহূর্তে আপনার সহযোগীদের চিন্তা মাথায় আনুন, দেখবেন তখনই দুশ্চিন্তা দূর হবে। সম্ভাবনা দেখা দিবে। 

সূত্র : ফর্বস 

No comments:

Post a Comment