Thursday 1 May 2014

ডিমেনসিয়া

মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পাচ্ছে এটা যেমন সুখকর বিষয়, অন্যদিকে বয়স্কদের কিছু কিছু রোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে যার ভোগান্তি শুধু রোগীরাই হয় না ঘরের সবাইকে ভোগ করতে হয়। ভুগতে হয় পরিবারের লোকদের। তেমন একটি অসুখ ডিমেনসিয়া।
ডিমেনসিয়া এক ধরনের ব্রেনের অসুখ যেখানে ব্রেনের নির্দিষ্ট কিছু জায়গার কোষগুলো নষ্ট হয়ে যায়। ১০% বয়স্কদের মধ্যে এই সমস্যা হতে পারে। অন্যান্য শারীরিক ও মানসিক রোগে ভুগছেন এমন লোকদের মধ্যে বেশি হতে পারে। পৃথিবীর সব দেশের মতো আমাদের দেশেও এই রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এ ধরনের মধ্যে অ্যালজিমিয়াস ওব্রেন স্টোক টাইপই বেশি। ৬৫ বছর বয়সে ১%, ৮০ বছর বয়সে ৮-১০%, ৯০ বছর বয়সে ৩০-৪০%
অ্যালজিমিয়াস রোগে ভুগে থাকেন।
যেখানে পুরুষ মহিলা সবাই আক্রান্ত হতে পারে। সাধারণত ৫০ এর পরে এই রোগটি দেখা দেয়। এ রোগে মহিলারা বেশি ভোগে।
রোগীর কথা শুনে মনে হয় মানুষটি বুঝি দুষ্টামি করছে বা ভান করছে রোগীর চোখ, কান সবই ঠিক আছে কিন্তু তারপরও কি যেন নাই যার কারণে লোকটি তার নিকটাত্মীয়র নাম বলতে পারে না, চিনে না, ভুলে যাচ্ছে সব কিছু, আচরণ করছে শিশুর মতো।
লক্ষণসমূহ :
১। ভুলে যাওয়া এমনকি নিজের পরিবার-পরিজনদের নাম ভুলে যায়, সন্তানদের নাম ভুলে যায়, রাস্তা ঘাট চিনতে পারেনা।
২। খেয়াল হারিয়ে ফেলা।
৩। মনে করতে না পারা।
৪। হিসাব-নিকাশে গ-গোল হওয়া।
৫। ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। দিনের বেলায় বেশি ঘুমায়।
৬। খেয়ে বলে খাইনি, সবকিছু খুঁজতে থাকে, রেগে যায়, মাঝেমধ্যে একদিকে চলে যায়।
৭। সেক্সুয়াল অপ্রীতিকর আচরণ করে ফেলে।
৮। অনেক সময় পায়খানা শরীরে ও বিভিন্ন জায়গায় মাখে।
কী কী সমস্যা হতে পারে :
১। খাওয়াতে গেলে রেগে যায়
২। একদিকে চলে যেতে চায়
৩। মারতে চায়
৪। বিছানায় প্রস্রাব করে দেয় কোনো কোনো ক্ষেত্রে পায়খানা পর্যন্ত করে ফেলে বিছানায়।
৫। ওষুধ খেতে চায় না।
৬। রোগ আছে যে রোগী বুঝে না।
৭। অজানা-অচেনা নতুন পরিবেশে লক্ষণগুলো বেড়ে যায়।
কী কী বিষয়ে সতর্ক হওয়া উচিত :
১। রোগীর প্রতি খেয়াল রাখা।
২। শ্বাসকষ্ট, হেপাটিক, এন্ডোক্রাইন রোগ আছে কিনা তা রোগীকে কতোটুকু ক্ষতি সাধন করছে ক্ষতিয়ে দেখা।
৩। মদ্যপানের অভ্যাস আছে কিনা।
৪। শরীরের কোনো জায়গায় টিউমার হলো কিনা।
৫। হারিয়ে যাওয়ার ভয়।
৬। চলাফেরার জন্য অন্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে যায়।

সাধারণ কারণ :
১। আলজিমিয়া ডিজিজ
২। স্ট্রোক
৩। ভিটামিনের অভাব বিশেষ করে ভিটামিন বি১, বি১২, ফলিক এসিড
৪। নিউরোসিফিলিস
৫। হাইপোথাইরডিজম
৬। মাথায় আঘাত অথবা বার বার মাথায় ইনজুরি হওয়া।
৭। দীর্ঘদিন মাদকাসক্ত, অ্যালকোহল ও অন্যান্য নেশাদ্রব্য দীর্ঘদিন সেবন।
৮। বিভিন্ন অর্গান ফেইলুর হওয়ার পর।
৯। এইডস রোগ।
১০। ব্রেন টিউমারও অন্যান্য জায়গায় টিউমার।
এই রোগের তেমন কোন চিকিৎসা নেই। আশে পাশে যারা থাকেন তাদের সেবা যত্নই এবংতাদেরকে ছোট বাচ্চার মতো সেবাই এর প্রধান চিকিৎসা।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক 
চেম্বার : আনোয়ার খান মর্ডান হাসপাতাল

No comments:

Post a Comment