তেরেসা যেদিন আমার ওয়ার্ডে এলো, ঐদিন তার ১৮ তম জন্মদিন ছিল। এতোদিন সে শিশু-কিশোর মানসিক কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন ছিল, আজ যেহেতু তার ১৮ বৎসর পূর্ণ হলো তাই তাকে আর ঐ শিশু-কিশোর মানসিক কেন্দ্রে রাখা যাবে না! সে এখন বড় হয়ে গেছে, তাই বড়দের মানসিক ওয়ার্ডে তার স্হান হলো।পাতলা স্লীম তেরেসার চেহারাটা বেশ মিস্টি। বেশ সাজুগুজু করা তেরেসাকে দেখলে বোঝার উপায় নাই যে,
তার মধ্যে একটা আত্মঘাতি কাঁটাকাঁটির একটা মনোভাব লুকিয়ে আছে! তেরেসার মা-বাবা দুজনেই সুইডিশ। মা একটা মাল্টিন্যাশনাল আইটি কোম্পানীতে কাজ করেন, আর বাবা কাপড়ের ব্যবসা করেন। এজন্যে তাকে মাসে দুবার সুইডেনের বাহিরে এমন কি বাংলাদেশ, ভারত, চায়নাতে যেতে হয়। আর তেরেসা তাদের একমাত্র সন্তান। তেরেসার এই অসুস্হ্যতার কারণে তাকে থেরাপীর অংশ হিসাবে কয়েকবার ইন্ডিয়া এবং বাংলাদেশেও ঘুরাতে নিয়ে যায়, যাতে করে সে তার নিজের জীবনধারাটা উপলব্দি করতে পারে ! কিন্তু দিল্লীতে সেই ভ্রমনকালীন সময়েও তেরেসা তার হাতের বাহু কেঁটে ফেলে রক্তাক্ত করে, যা নাকি তার বাবা-মার আত্মসম্মানে প্রচন্ড একটা আঘাত লাগে। যার ফলাফল তাকে আর তার বাবা-মাও বিশ্বাস আর করেন না এবং সাথে কোথাও নেন না।
কি সমস্যা তেরেসার? তেরেসা একজন বর্ডারলাইন রোগী। সে কারণে-অকারনে নিজের হাত কাঁটে, পা কাঁটে, মুখ কাঁটে, যা কিছু পায় তাই দিয়েই সে চেষ্টা চালায়। এমনও হয়েছে দিনের পর দিন, রাতের পর রাত প্রায় ২৪ ঘন্টাই তাকে গার্ড দিয়ে রাখতে হয়েছে; যাতে করে সে কোনভাবে নিজের ওপর কোন ধ্বংসাত্বক কার্যক্রম না চালাতে পারে! তারপরও দেখা গেছে,আলপিন, পিন, সেফটিপিন, চায়ের কাপ ভেংগে কাঁচের টুকরা, পাথরের টুকরা, কটনবাডের চিকন প্লাস্টিকের সুঁচালো অংশ, টুথপিকের অংশ, চুলের ক্লিপ, এমন কোন জিনিস নাই যে নিজেকে রক্তাক্ত করার চেস্টা করতো না! তাই তার কাছে বসে আই কক্টাকে গার্ড দিয়ে রাখতে হতো। একটু অসতর্ক হলেই সে অঘটন ঘটাতো। এমনকি লেপ কম্বলের নীচে হাত রেখে তারপরও কাঁটাকাটি করতো। এ কারনে তাকে লেপ, কম্বলের নীচেও হাত রাখতে দেয়া হতো না! অবস্হা এমন হতো যে, বাথরুম- টয়লেটে গেলে তার দরজা আটকানোর অনুমতিও ছিল না। দরজা খোলা রেখেই তার টয়লেট-গোসল সারতে হতো, আর বাইরে একজন পাহারায় থাকতো। একটু পরপরই তার অবস্হান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে হতো! টয়লেট করা শেষ হলো কিনা, গোসল করা শেষ হলো কিনা? আর এ সময়ে মেয়ে স্টাফরা তাকে গার্ড দিত। এই বর্ডারলাইন রোগীদের আবার অন্য বর্ডারলাইন রোগীদের সাথে প্রায়ই খুবই ভাল যোগাযোগ থাকে। একজন যদি বড় কোন অঘটন ঘটায় সাথে সাথে অন্য বর্ডারলাইন রোগীরা তার খবর পেয়ে যায়। এমনকি তাদের মধ্যে পয়েন্ট বন্টনও হয়। যেমন, হাতের কব্জির ওপরে কাঁটলে যে পয়েন্ট অন্যান্য যায়গায় কাটঁলে পয়েন্ট অনেক কম। কে কত পয়েন্ট সংগ্রহ করলো তা নিয়েও এরা আলোচনা করে।
তেরেসা আমাদের ওয়ার্ডে পার্মানেন্ট রোগী হয়ে গিয়েছিল।প্রায়ই মাসের পর মাস তার থাকা হতো। দেখা গেল ২ মাস পরে ওষুধ আর থেরাপী দিয়ে ভাল করলাম, আবার ৪/৫ পরই এ্যামবুলেন্সে এসে হাজির।
তাকে কয়েকবার ইলেকট্রিক শক Electroconvulsive therapy (ECT) ও দেয়া হয়। কিছুদিন ভালো থাকে, হাসপাতাল থেকে রিলিজ করলে কয়েকদিন পরে আবার এসে হাজির! এই ভাবেই চলছিল। একদিন তার কোন গার্ড নেই এ অবস্হায় (কি ভাবে যে জানালার লক খুলে ফেলে আজও সে রহস্য উদ্ধার করতে পারিনি) সে সেই খোলা জানালা দিয়ে ৫ তালার উপর দিয়ে লাফ দেয়। যা হবার তাই হলো, গুরুতর আহত অবস্হায় তাকে পাশেই ইমারজেন্সীতে নেয়া হলে তাকে ইনটেনসিভে নেয়া হয়, ওখানে সে মারা যায়।
একবার তেরেসাকে প্রশ্ন করে ছিলাম, "তুমি এমন করে হাত পা কাঁটাকাঁটি করো কেন?" উত্তরে মিস্টি হেসে লাজুক বালিকার মতো লজ্জায় মাথা নীচু করে বললো, "ভাল লাগে, তাই করি। আবার পরক্ষনেই বলে উঠে আমি ঠিক জানি না!" লক্ষ্য করে দেখেছি, থেরাপী চলা কালীন তাকে যে জিনিসটা করতে বলতাম সেটা সে মোটামুটি ভাল ভাবেই করার চেস্টা করতো। আবার থেরাপীর গ্যাপ পড়লেই তার কাঁটাকাঁটি শুরু হত!
(সংগত কারনেই এটা তেরেসার আসল নাম নয়)
তার মধ্যে একটা আত্মঘাতি কাঁটাকাঁটির একটা মনোভাব লুকিয়ে আছে! তেরেসার মা-বাবা দুজনেই সুইডিশ। মা একটা মাল্টিন্যাশনাল আইটি কোম্পানীতে কাজ করেন, আর বাবা কাপড়ের ব্যবসা করেন। এজন্যে তাকে মাসে দুবার সুইডেনের বাহিরে এমন কি বাংলাদেশ, ভারত, চায়নাতে যেতে হয়। আর তেরেসা তাদের একমাত্র সন্তান। তেরেসার এই অসুস্হ্যতার কারণে তাকে থেরাপীর অংশ হিসাবে কয়েকবার ইন্ডিয়া এবং বাংলাদেশেও ঘুরাতে নিয়ে যায়, যাতে করে সে তার নিজের জীবনধারাটা উপলব্দি করতে পারে ! কিন্তু দিল্লীতে সেই ভ্রমনকালীন সময়েও তেরেসা তার হাতের বাহু কেঁটে ফেলে রক্তাক্ত করে, যা নাকি তার বাবা-মার আত্মসম্মানে প্রচন্ড একটা আঘাত লাগে। যার ফলাফল তাকে আর তার বাবা-মাও বিশ্বাস আর করেন না এবং সাথে কোথাও নেন না।
কি সমস্যা তেরেসার? তেরেসা একজন বর্ডারলাইন রোগী। সে কারণে-অকারনে নিজের হাত কাঁটে, পা কাঁটে, মুখ কাঁটে, যা কিছু পায় তাই দিয়েই সে চেষ্টা চালায়। এমনও হয়েছে দিনের পর দিন, রাতের পর রাত প্রায় ২৪ ঘন্টাই তাকে গার্ড দিয়ে রাখতে হয়েছে; যাতে করে সে কোনভাবে নিজের ওপর কোন ধ্বংসাত্বক কার্যক্রম না চালাতে পারে! তারপরও দেখা গেছে,আলপিন, পিন, সেফটিপিন, চায়ের কাপ ভেংগে কাঁচের টুকরা, পাথরের টুকরা, কটনবাডের চিকন প্লাস্টিকের সুঁচালো অংশ, টুথপিকের অংশ, চুলের ক্লিপ, এমন কোন জিনিস নাই যে নিজেকে রক্তাক্ত করার চেস্টা করতো না! তাই তার কাছে বসে আই কক্টাকে গার্ড দিয়ে রাখতে হতো। একটু অসতর্ক হলেই সে অঘটন ঘটাতো। এমনকি লেপ কম্বলের নীচে হাত রেখে তারপরও কাঁটাকাটি করতো। এ কারনে তাকে লেপ, কম্বলের নীচেও হাত রাখতে দেয়া হতো না! অবস্হা এমন হতো যে, বাথরুম- টয়লেটে গেলে তার দরজা আটকানোর অনুমতিও ছিল না। দরজা খোলা রেখেই তার টয়লেট-গোসল সারতে হতো, আর বাইরে একজন পাহারায় থাকতো। একটু পরপরই তার অবস্হান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে হতো! টয়লেট করা শেষ হলো কিনা, গোসল করা শেষ হলো কিনা? আর এ সময়ে মেয়ে স্টাফরা তাকে গার্ড দিত। এই বর্ডারলাইন রোগীদের আবার অন্য বর্ডারলাইন রোগীদের সাথে প্রায়ই খুবই ভাল যোগাযোগ থাকে। একজন যদি বড় কোন অঘটন ঘটায় সাথে সাথে অন্য বর্ডারলাইন রোগীরা তার খবর পেয়ে যায়। এমনকি তাদের মধ্যে পয়েন্ট বন্টনও হয়। যেমন, হাতের কব্জির ওপরে কাঁটলে যে পয়েন্ট অন্যান্য যায়গায় কাটঁলে পয়েন্ট অনেক কম। কে কত পয়েন্ট সংগ্রহ করলো তা নিয়েও এরা আলোচনা করে।
তেরেসা আমাদের ওয়ার্ডে পার্মানেন্ট রোগী হয়ে গিয়েছিল।প্রায়ই মাসের পর মাস তার থাকা হতো। দেখা গেল ২ মাস পরে ওষুধ আর থেরাপী দিয়ে ভাল করলাম, আবার ৪/৫ পরই এ্যামবুলেন্সে এসে হাজির।
তাকে কয়েকবার ইলেকট্রিক শক Electroconvulsive therapy (ECT) ও দেয়া হয়। কিছুদিন ভালো থাকে, হাসপাতাল থেকে রিলিজ করলে কয়েকদিন পরে আবার এসে হাজির! এই ভাবেই চলছিল। একদিন তার কোন গার্ড নেই এ অবস্হায় (কি ভাবে যে জানালার লক খুলে ফেলে আজও সে রহস্য উদ্ধার করতে পারিনি) সে সেই খোলা জানালা দিয়ে ৫ তালার উপর দিয়ে লাফ দেয়। যা হবার তাই হলো, গুরুতর আহত অবস্হায় তাকে পাশেই ইমারজেন্সীতে নেয়া হলে তাকে ইনটেনসিভে নেয়া হয়, ওখানে সে মারা যায়।
একবার তেরেসাকে প্রশ্ন করে ছিলাম, "তুমি এমন করে হাত পা কাঁটাকাঁটি করো কেন?" উত্তরে মিস্টি হেসে লাজুক বালিকার মতো লজ্জায় মাথা নীচু করে বললো, "ভাল লাগে, তাই করি। আবার পরক্ষনেই বলে উঠে আমি ঠিক জানি না!" লক্ষ্য করে দেখেছি, থেরাপী চলা কালীন তাকে যে জিনিসটা করতে বলতাম সেটা সে মোটামুটি ভাল ভাবেই করার চেস্টা করতো। আবার থেরাপীর গ্যাপ পড়লেই তার কাঁটাকাঁটি শুরু হত!
(সংগত কারনেই এটা তেরেসার আসল নাম নয়)
No comments:
Post a Comment