Thursday 27 November 2014

"পাবনা মানসিক হাসপাতাল" -যে নাকি নিজেই অসুস্হ্য




পাবনা মানসিক হাসপাতালে ৫ শ’ রোগীর জন্য মাত্র ১০ জন ডাক্তার। হাসপাতালটি নিজেই এখন মানসিক রোগে আক্রান্ত। হাসপাতালের ভবনগুলো জরাজীর্ণ, চিকিৎসক ও নার্সের অভাব, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নেই কোন বিশেষ সুবিধা, সিটের অপ্রতুলতার কারণে অধিক সংখ্যক রোগী চিকিৎসা নিতে এলেও তাদের ফিরিয়ে দেয়া হয়। তবে এত সমস্যার মধ্যেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিশেষায়িত নার্সিং ইনস্টিটিউট, মেন্টাল রিসার্চ ইনস্টিটিউটসহ বহুবিধ পরিকল্পনার প্রত্যাশা নিয়ে কাজ শুরু করেছে। ১৯৫৭ সালে পাবনা শহরের শীতলাই হাউজের জমিদার বাড়িতে ৬০ শয্যা নিয়ে যাত্রা শুরু করে এ হাসপাতালটি। পাবনা শহর থেকে প্রায় ৫ কি.মি পশ্চিমে হেমায়েতপুরে স্থানান্তর করা হয় এ হাসপাতাল। ১১১.২৫ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত নতুন ভবনে হাসপাতালটি পরবর্তীকালে ২০০ থেকে  পর্যায়ক্রমে ৪০০ বেডে উন্নীত করা হয়। ২০০৩ সালে মেন্টাল হেলথ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের আওতায় আরও
১০০ বেডে উন্নীত  করা হয়। বর্তমানে এ হাসপাতালে ১৫০টি পেয়িং শয্যা ও ৩৫০টি নন পেয়িং শয্যা মিলে মোট ৫০০টি শয্যা রয়েছে। হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা নিয়েছিলেন পাবনার তৎকালীন সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ হোসেন গাংগুলী। এখানে মাদকাসক্ত নিরাময় ওয়ার্ডসহ মোট ১৮টি ওয়ার্ড রয়েছে। এই হাসপাতালে বহির্বিভাগ, আন্তঃবিভাগ, বৃত্তিমূলক ও বিনোদনমূলক চিকিৎসা বিভাগ রয়েছে। এক্সরে, প্যাথলজি, ইসিজি, ইইজিসহ এই মানসিক হাসপাতালকে ঘিরে চলে চিকিৎসক, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী, প্যারামেডিক্স, সেবক-সেবিকাদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম। ২০০ শয্যার জনবল দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে ৫০০ শয্যার কার্যক্রম। ২০০ শয্যার হাসপাতাল হিসেবেই এখানে মঞ্জুরিকৃত পদের সংখ্যা ৪৭২টি। এর মধ্যে কর্মরত রয়েছেন ৩৩৬ জন। বাকি ১৩৬টি পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো, দেশের প্রায় দেড় কোটি মানসিক রোগীর জন্য একমাত্র এই হাসপাতালটিতে ২টি পদ থাকলেও কোন সাইকিয়াট্রিক কনসাল্টেন্ট বা সাইকোথেরাপিস্ট নেই। পাবনা মেডিক্যাল কলেজের ৩ জন সাইকিয়াট্রিক কনসাল্টেন্ট এখানে এসে চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। এছাড়া একটি ক্লিনিকাল সাইকিয়াট্রিস্ট এবং ২টি  সিনিয়র কনসাল্টেন্ট পদ থাকলেও তা দীর্ঘদিন লোকবল শূন্য। ৩ জন সাইকিয়াট্রিক যারা পাবনা মেডিক্যাল কলেজে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত, তারাই এখানে বিশেষজ্ঞ হিসেবে সেবা দিয়ে থাকেন। হাসপাতাল শুরুতে সাইকিয়াট্রিক নার্সিং ইনস্টিটিউট থাকলেও তা প্রায় এক বছর চালুর থাকার পর বন্ধ হয়ে যায়। এরপর আর চালু হয়নি। ইমার্জেন্সি মেডিক্যাল অফিসার পদ না থাকায় জরুরি রোগীদের এসে ফিরে যেতে হয়। অথবা পরের দিনে অফিস টাইমে এসে তাদের চিকিৎসা নিতে হয়। ২৫০ জন নাসের বিপরীতে শূন্য রয়েছে ৭০টি। এদের আবাসিকের  কোন ব্যবস্থা নেই। কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিবহনের জন্য নেই কোন যানবাহন। এমনকি অ্যাম্বুলেন্স ও পরিচালকের নিজস্ব যানবাহনও নেই। পরিচালকের জন্য একটি আবাসিক ভবন রয়েছে নামমাত্র। এর পরও এই জরাজীর্ণ ভবনেই পাবনা মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রীদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। হাসপাতালের বাউন্ডারি, দেয়াল, জানালা, দরজা,  গ্রিল সবকিছুই খসে পড়ছে। পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের সংখ্যা অপ্রতুল হওয়ায় চুক্তি ভিত্তিতে ২৫ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়ে বৃহৎ এই হাসপাতালটির কাজ চলছে। অবাক হলেও সত্য, এই হাসপাতালটিতে নেই কোন নিয়োগকৃত নিরাপত্তাকর্মী। ৫০ জন রয়েছেন আনসার। এরাই কোনভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। ‘হাজারও সমস্যার মধ্যে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে পাবনা মানসিক হাসপাতাল। 

সৌজন্যেঃ মানবজমিন

No comments:

Post a Comment