Sunday 28 June 2015

Delusional disorder(ডিলিউশন) বা ভ্রান্ত বিশ্বাসের রোগী







কেস হিস্ট্রি-১
রোকেয়ার বয়স ৩৫ বছর। তার স্বামী সংসার আছে। একটি মেয়ে তাদের সুখের সংসারে। মেয়ের বয়স ১৬ বছর। মেয়েটি যেন রোকেয়ার কৈশোরের কপি। খুবই সুন্দরী। বাজারে, শপিং মলে মেয়েকে নিয়ে গেলে রোকেয়া টের পান ছেলেরা তার মেয়েকে সুন্দরী বলে কমেন্ট করে, তাকায়; দু/একবার বাসা পর্যন্ত ফলো করেছে !
রোকেয়া লক্ষ্য করছেন তার দিকে কেউ তাকায় না।  কেন এমন হয়?

তার ধারণা তিনি বুড়িয়ে গেছেন।  যৌবনে মৌমাছির মত ছেলেরা তার পেছনে ঘুরেছে, আজ আর কেউ তার দিকে তাকায় না! কেউ যেন দেখেও দেখে না!  তাই তার বার বার মনে হয় তিনি তার ১৬ বছরের শৈশবে, কৈশোরে ফিরে যাবেন। সবাইকে দেখাবেন তিনি তার মেয়ের চেয়েও সুন্দরী ছিলেন। কোন মানুষ কি তার বয়সের চাকা পেছনের দিকে ঘোরাতে পারে?
এটা কি সম্ভব?

কেস হিস্ট্রি-২
কবির সাহেবের বয়স ৬১ বছর। তিনি তার ৬ ভাই-বোনের মধ্যে সবার বড়।
৪০ বছর আগে বাবা মারা যাবার আগের বছরই ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেছেন।
স্বাভাবিক ভাবেই বাবা মারা যাবার পর তার উপর সংসার পরিচালনার ভার বর্তায়। সংসার পরিচালনা বলতে তাকে পড়াশোনা বন্ধ করতে হয়নি। বাবার রেখে যাওয়া সম্পত্তির ভাড়া দেয়া, ভাড়া উঠানো, জমি জমার হিসাব রাখা।
পৈতৃক সুত্রে তারা ৬ ভাইবোন প্রচুর সম্পত্তির ওয়ারিশ। যা নাকি তার মা এবং অন্য ভাই - বোন অনেকবার বলার পরেও এখনো কোন ভাগ বাটোয়ারা হ্য়নি। যে কোন কারণেই হোক, কবির সাহেব ডিসিশান নেয়  ২ জন ভাই-বোনকে তিনি তাদেরকে পৈতৃক সম্পত্তি দিবেন না। প্রয়োজনে ঐ ২ জন ভাই-বোন এবং মায়ের মৃত্যু পর্যন্ত অপেক্ষা করবে্ন। কবির সাহেবের প্রায়ই মনে হয় তার বয়স ২০/২৫ বছর। বাবা মারা যাওয়ার পর সব ভাই-বোন যে ভাবে তার কথা শুনেছে, মান্য করেছে; সে ভাবেই তাকে মান্য করতে হবে, তার কথা শুনতে হবে। তিনি মানতে রাজী নন  যে তার ভাই-বোন বড় হয়েছে, তাদের সংসার ছেলে মেয়ে বড় হয়েছে এবং তারাও স্ব স্ব জায়গায় প্রতিষ্ঠিত।

"কবির সাহেব তার পৈতৃক সম্পত্তি তার ২ ভাই-বোনকে দেবে না।" এটা কি সম্ভব ?
"প্রয়োজনে সে তার মা এবং অন্য ভাই-বোনের  মৃত্যু পর্যন্ত অপেক্ষা করবে।" এখানে কি কোন গ্যারান্টি আছে কে কখন মারা যাবে?
এটা কি সম্ভব?

রোকেয়া এবং কবির সাহেবের মত মানুষ আমাদের সমাজে অনেক আছে।
তারা  নিজস্ব একটি জগত তৈরি করে নেন যার মাঝে বাস্তবতার বিন্দুমাত্র ছোঁয়া থাকে না। বাস্তবতার সাথে তাদের চিন্তা-চেতনা, আবেগ-অনুভূতি আর বোধশক্তির এত বেশি ফারাকের জন্য অনেকেই এটিকে সাইকোসিস বলে থাকে।তারা এবং আশে পাশের মানুষও বুঝতে পারে না যে মানুষটি একটি মানসিক রোগে আক্রান্ত !   

এটি সিজোফ্রেনিয়া রোগের প্রথম বা আংশিক  মাত্র। 

No comments:

Post a Comment