Friday 17 July 2015

আপনার সন্তান কি নেশা করছে ? জেনে নিন

আপনার সন্তান কি নেশা করছে? একটু সতর্ক হয়ে চললেই পুরোপুরি আসক্ত হওয়ারর আগেই সেটি বুঝতে পারবেন। আর একটু আগেভাগে বুঝতে পারলে এই সর্বনাশা পথ থেকে ফেরানো অনেক সহজ হবে। 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, যতোজন মানুষ নেশা করেন তার মধ্যে অনেকেই প্রবৃত্তির টানে এতে জড়ান না। কেউ জড়ান কুসঙ্গে পড়ে, তো কেউ জড়ান পরখ করতে গিয়ে। তারপর আস্তে আস্তে ব্যাপারটা এমন পর্যায়ে চলে যা যে আর ছেড়ে বেরোতে পারেন না অনেকেই। আবার অনেক কাঠ-খড় পোড়ানোর পর আসক্তি ছাড়তে সফল হন অনেক মানুষ। কিন্ত্ত ততো দিনে স্বাস্থ্য, ভবিষ্যত, মন, ব্যক্তিত্ব সবকিছুরই প্রচুর ক্ষতি হয়ে যায়।

এই ক্ষতি এড়াতে চাইলে বাবা-মাকে সতর্ক থাকতে হবে। নেশা চেপে ধরার আগেই চিনে নিতে হবে তাকে। কাজটা যে

খুব সোজা এমন নয়। কারণ প্রাথমিক পর্যায়ে অনেক সময়ই আচার-ব্যবহারে তেমন কোনও পরিবর্তন আসে না। তবে নিরন্তর নজরদারি চালিয়ে গেলে কিছু না কিছু বিচ্যুতি চোখে পড়তে বাধ্য। তার সূত্র ধরে মূলে পৌঁছে যাওয়া সম্ভব। আপনার ছেলে বা মেয়ে কি ইদানিং নানা রকম সুগন্ধী চকোলেট বা চুইংগামের ভক্ত হয়েছে? যখনই বাড়ি ফেরে মুখে সেই গন্ধ পান? একটু খোঁজখবর নিন। ধুমপানের গন্ধ চাপা দেওয়ার জন্য কিন্ত্ত সে এ রকম করতে পারে। যে যতোই বলুক যে এই বিশেষ ব্ল্যান্ডের চকোলেট বা চুইংগাম খেতে তার ভালোলাগে, সে কথায় কান দেওয়ার দরকার নেই।

ব্যাগ, পকেট, বিছানা, ড্রয়ার ইত্যাদি সম্ভাব্য সব জায়গা খুঁজে দেখুন দেয়াশলাই বা লাইটার আছে কিনা। থাকলে দুইয়ে দুইয়ে চার। এবার জানতে হবে সে বিড়ি-সিগারেটের মতো কিছুটা নিরীহ নেশা করছে না বড়ো কিছু।

বালিশের নীচে, মানিব্যাগে, ড্রয়ারে বা অন্য কোনও জায়গায় স্বচ্ছ পাতলা কাগজ, যাকে রোলিং পেপার বলে, পাওয়া গেলে চিন্তার কথা। এর সঙ্গে খরচের বহরও বাড়লে সে কোথায় যাচ্ছে, কাদের সঙ্গে মিশছে, সেখানে কী কী হয় সে সব ব্যাপারে খোঁজ লাগানো শুরু করুন।

সব নেশাতেই যে প্রচুর টাকা লাগে এমন নয়, তবে নেশাগ্রস্থ অবস্থায় মানুষের খরচের হাত বেড়ে যেতে পারে। এবং অধিকাংশ শুকনো নেশা এমন যে সামান্য চোখ লাল হওয়া ছাড়া তার আচার-ব্যবহারে, চেহারায় আর কোনও পরিবর্তনই চোখে পড়ে না। অনেকে আবার চোখের এই লালভাব ঢাকতে বিশেষ ধরনের আইড্রপ ব্যবহার করে। কাজেই তার ঘরে বা ব্যাগে প্রেসক্রিপশন ছাড়া আইড্রপের হদিশ পেলে বুঝতে হবে ব্যাপারটা জটিল হয়ে উঠছে।

মাদকাসক্তির ৩ মোক্ষম লক্ষণ হলো, ওজন কমতে থাকা, খিদে বেড়ে যাওয়া ও একা থাকতে চাওয়া। টিন এজে সব ছেলে-মেয়েই একটু প্রাইভেসি চায়। কিন্ত্ত হঠাত্ করে আলাদা শোওয়ার তীব্র ইচ্ছে, কোনও কারণে তার ঘরে ঢুকলে অসম্ভব বিরক্ত হওয়া বা আপনারা তাকে রেখে বাইরে কোথাও যাচ্ছেন শুনলে আনন্দ চেপে রাখতে না পারা, এই সব লক্ষণ দেখা দিলে তা হালকাভাবে নেবেন না। ভালো করে খোঁজখবর নিয়ে কী করবেন না করবেন সে ব্যাপারে বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করুন।

মনে রাখুন

সন্তানের আচার-ব্যবহারে পরিবর্তন এলে প্রশ্নে প্রশ্নে তাকে জর্জরিত না করে নিজে আলাদাভাবে একটু খোঁজখবর করার চেষ্টা করুন। টাকা-পয়সা সামলে রাখুন। হাতখরচ দিন বুঝেশুনে।

খিদে খুব বেড়ে বা কমে গেলে, ওজন কমতে শুরু করলে কী কারণে এমন হচ্ছে তা বোঝার চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে ডাক্তার দেখান।

সব ব্যাপারে তাকে কাঠগড়ায় দাঁড় না করিয়ে, নিজের মতামত তার উপর চাপিয়ে না দিয়ে সে কী চায় তা বোঝায় চেষ্টা করুন।

নেশা করার প্রত্যক্ষ প্রমাণ পেলে মাথা ঠাণ্ডা করে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। শারীরিক অসুখের মতো এই অসুখেও সঠিক চিকিত্সায় একেবারে নির্মূল হয়ে যাবে। 

নেট:আ.বা 

No comments:

Post a Comment