Friday 16 November 2018

বিভিন্ন ফোবিয়া

অনেক বেশি সংখ্যক মানুষের মধ্যেই এই ফোবিয়াটি দেখা যায়। এরোফোবিয়ার সাথেও এর সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়। উঁচু স্থানে উঠলে, দাঁড়িয়ে থাকলে, এমনকি উঁচু স্থানে অবস্থান না করলেও উঁচু থেকে পরে যাবার যে ভয়, তাকেই বিজ্ঞান বলে ‘এক্রোফোবিয়া’। এক্রোফোবিয়া শব্দটি এসেছে গ্রীক ভাষা থেকে। গ্রীক শব্দ ‘acros’ অর্থ উচ্চতা ও ‘phobos’ অর্থ ভীতি।এরোফোবিয়া হলো উড়োজাহাজ এ চড়ার সময় মারাত্মক ভয় পাওয়া। ভয়ে রীতিমত অস্থির হয়ে ফ্লাইট থেকে নেমে যাওয়া। আবার অনেক আছেন যারা উঁচু দালানে উঠার পর তীব্র এনজাইটিতে ভুগেন। একে বলে এক্রোফোবিয়া।
এসব ফোবিয়াতে রোগীদের পালপিটিশন হয়, বুক ধড়পড় করে, ঘামতে থাকে। শ্বাসপ্রশ্বাস দ্রুত হতে থাকে, অবস্থা এমন যে তিনি মনে করেন, তিনি এক্ষুণি মারা যাবেন।
Image may contain: one or more people, sky and outdoor


এক্রোফোবিয়াঃ উচ্চতাভীতি
শুধুমাত্র এই আতঙ্কের কারণেই অনেকে সিঁড়ি দিয়ে ওঠা-নামার সময় পড়ে যান। প্রতি ২০ জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মধ্যে ১ জন এই ফোবিয়ার শিকার।
এক্রোফোবিকরা উঁচু বিল্ডিং এর ছাদ, উঁচু বারান্দা এড়িয়ে যান। এদের মতে উঁচু স্থান থেকে নিচে তাকালে মাথা ঘোরে এবং তারা ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। এই ফোবিয়া মানুষের দৈনন্দিন জীবনে বেশ গভীর প্রভাব ফেলে। বিনোদনের অনেক বিষয়েই বাধা হয়ে দাঁড়ায় এক্রোফোবিয়া। রোলার কোস্টার, নাগরদোলা, দোলনা কিছুই উপভোগ করতে পারেন না এক্রোফোবিকরা। অনেক বড় বড় দুর্ঘটনারও কারণ হতে পারে এক্রোফোবিয়া। যেমন ব্রীজের ওপর দিয়ে গাড়ি চালানোর সময় যদি ফোবিয়া জেঁকে বসে, তখন চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বড়সড় দুর্ঘটনার শিকার হতে পারেন।
Image may contain: 1 person, cloud, sky and close-up

এরোফোবিয়া হলো উড়োজাহাজ এ চড়ার সময় মারাত্মক ভয় পাওয়া।

এগোরাফোবিয়াঃ খোলামেলা স্থান, মানুষ আর ভীড়ে যে আতঙ্ক
সামাজিক পরিবেশে বা ভিড়বাট্টা আছে এমন স্থানে যেতে অস্বস্তি বোধ করেন এগোরাফোবিকরা। মানুষজন বেশি আছে এমন পরিবেশ থেকে দ্রুত পালাতে চান তারা। এগোরাফোবিকরা নতুন সামাজিক সম্পর্ক গড়ে তোলা, মানুষজনের সাথে প্রসারিত অর্থে মেলামেশা করাকে যথাসম্ভব এড়িয়ে চলেন। এরা ভদ্রতার লেহাজ ততক্ষণ পর্যন্তই রক্ষা করেন, যতক্ষণ পর্যন্ত এই ফোবিয়াটি সহনীয় স্তরে থাকে।
ফোবিয়াটি ক্রমেই বাড়তে থাকে এবং একসময় ভদ্রতা বা সামাজিক সৌজন্যের সীমানাটুকুও মেনে চলা কঠিন হয়ে যায়। এতে করে তারা দিনে দিনে একঘরে ও হতাশ হয়ে পড়েন, আশেপাশের ঘটনা সম্পর্কে কৌতূহল ও সচেতনতা উভয়েই কমতে থাকে। নিজেকে সবার থেকে আলাদা করে রাখতে স্বস্তি বোধ করেন এগোরাফোবিকরা। এই আচরণের পক্ষে নিজস্ব কিছু যুক্তিও দাঁড় করিয়ে ফেলেন তারা!
Image may contain: 1 person
মানুষ আসলে আজকাল এত বেশি আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়ছে যে এগোরাফোবিকদের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। প্রতি ১০০ জন আমেরিকানের মধ্যে ২ জন এই ফোবিয়ার শিকার। এগোরাফোবিকদের মেলামেশা ও পরিচিতির সীমানা ক্রমশ সংকীর্ণ থেকে সংকীর্ণতর হতে থাকে।
মদ্যপান, নেশাদ্রব্য গ্রহণ, নতুন পরিবেশে খাপ খাইয়ে নিতে না পারা, নার্সিসিজম, সুপিরিয়র ও ইনফিরিয়র কমপ্লেক্স এগোরাফোবিয়ার কারণ হিসেবে চিহ্নিত। মানুষ যখন অন্যের কাছে আশানুরূপ আচরণ পায় না অথবা মানুশ যখন নিজেকে নিয়ে অতিব্যস্ত হয়ে পড়ে, তখনই এগোরাফোবিয়া প্রভাব বিস্তার করে। এগোরাফোবিকদের আরেকটি মজার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- এরা আন্তঃব্যক্তিক যোগাযোগে অপেক্ষাকৃত বেশি পারদর্শী এবং একসময়ে একজন নির্দিষ্ট ব্যক্তির উপস্থিতিই এদের কাম্য।
প্রিয়জনকে নিয়ে অতিরিক্ত ঈর্ষাও এর একটি লক্ষণ। এরা সামাজিক আবহাওয়ার চাইতে ব্যক্তিগত বা পারিবারিক এলাকাই বেশি বেছে নেয়। এই ফোবিয়া থেকে বের হয়ে আসার উপায় হতে পারে ছোট ছোট দলে নিজের পছন্দ-অপছন্দ নিয়ে আলোচনা করা, দলীয় মতবিনিময় চর্চা এবং ধীরে ধীরে দলটি বড় করা।
এগোরাফোবিয়া হলো বিশেষ বিশেষ কোন স্থানে গেলে প্রচণ্ড এনজাইটি হওয়া। সেই বিশেষ স্থান হতে পারে- মার্কেট, লিফট, বদ্ধঘর, বিয়ে বাড়ি, ট্রেনের কেবিন বা কামরা, বাস, ট্রাম, ব্রিজ ইত্যাদি। তাদের এনজাইটি এতো বেশি হয় যে এগোরাফোভিয়া আক্রান্ত রোগীরা সাধারণত এসব স্থান এড়িয়ে চলেন। ঘর থেকে বের হন না।
এগোরাফোবিয়াতে অনেক সময় রোগীর প্যানিক এটাক হয়। তখন একে বলে প্যানিক এটাক উইথ এগোরাফোবিয়া ।
প্যানিক এটাক হলো মামুলি কিছুতে এনজাইটি হওয়া এবং মুহূর্তের মধ্যেই এই এনজাইটি বাড়তে থাকে এবং বাড়তে বাড়তে এক পর্যায়ে এতো বেশি হয়ে যায় যে রোগী ভয়ে কাঁপতে থাকেন, কাঁপতে কাঁপতে এক সময় ঝিম মেরে স্ট্যাচু হয়ে যান অথবা বা পড়ে যান। ঘেমে টেমে একাকার। বুকে ব্যথা অনুভব করেন, বুকে হাত দিয়ে বলতে থাকেন ওমা মরে গেলাম, মরে গেলাম। এটাকে অনেকে ভুল করে হার্ট এটাক মনে করেন।
Image may contain: 1 person, shoes and close-up
আবদ্ধ স্থানে বা বদ্ধ ঘরে ভয় পাওয়াকে বলে ক্লাস্ট্রো ফোবিয়া।

Image may contain: cloud, sky, tree, outdoor and nature
অ্যাস্ট্রোফোবিয়া: বাজ পড়া, বিদ্যুত্ চমকানোর ভয় পান অ্যাস্ট্রোফোবরা। অধিকাংশ শিশু ও পশুদের মধ্যে এই ফোবিয়া দেখা যায়।
মনোবিজ্ঞানীরা এ ফোবিয়াকে মূলত নেতিবাচক মনমানসিকতার ফল বলে মনে করেন। এর চিকিৎসা হিসেবে Hypnosis ভালো একটি উপায়। এছাড়া এর জন্য চিকিৎসকরা ওষুধও দিয়ে থাকেন।
ইন্টারনেট

No comments:

Post a Comment