ভয় মনের অবচেতন স্তরের একটি বিশেষ মানসিক অবস্খা, যাকে নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত আমরা সাধারণ বলতে পারি। এ ভয়ের/ভীতির মাত্রা যখন স্বাভাবিকতা বা বাস্তবতাবর্জিত হয় তখনই তাকে আমরা বলি ভয়রোগ/ভীতিরোগ/ভয় অসুখ ইত্যাদি। যেমন মনে করুন, একটি শিশু উচ্চস্তরের শব্দ, আলোক, কখনো কখনো অন্ধকারকে ভয় পায়একে আমরা সাধারণ ভয়/ভীতি বলতে পারি। তবে যদি দেখা যায় এ শিশুটি তার কৈশোরে বা তারুণ্যেও উপরোল্লিখিত অবস্খায় ভয় পায় এবং সে জাতীয় পরিবেশ-পরিস্খিতি সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে চলে বা চলার জন্য নানা রকম বাহানা সৃষ্টি করে তবে তাকে ভয়রোগ/ভীতিরোগ বলতে পারি।
পরীক্ষা
এ ব্যাপারটি মেধার ক্রমবিকাশ, মূল্যায়ন, মানোন্নয়ন এবং স্বীকৃতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। মেধার মননশীলতা, সৃষ্টিশীলতা, চিন্তার গভীরতা, সৃজনশীলতা ইত্যাদিকে বিশ্লেষণের মানদণ্ডই হচ্ছে পরীক্ষা। একজন ছাত্র বা ছাত্রী পরীক্ষাতে মূলত তার মানসিক চিন্তারই বহি:প্রকাশ ঘটায়, মেধার বিকাশ ঘটায় এবং পরীক্ষাই তার মেধাকে স্বীকৃতি দান করে এবং সমাজের মাঝে তার একটা ইমেজ তৈরি করে।
ভয়রোগ বা ভীতিরোগ (ফোবিয়া)
মন ও মানসিক দৃষ্টিকোণ থেকে ভয়রোগের যৌক্তিক ব্যাখ্যা দেয়া যায়। এটাকে আমরা এক ধরনের আতঙ্ক উদ্রেককারী মানসিক অবস্খা বলতে পারি। ভয় যখন এর সাধারণ ও বাস্তবতার সীমা অতিক্রম করে অস্বাভাবিক ও বাস্তবতাবর্জিত মানসিক রূপ ধারণ করে তখনই তাকে আমরা ভয়রোগ বা ভীতিরোগ বলি।
ভয় অসুখ বড় বিচিত্র, এটা স্খান-কাল-পাত্রভেদে বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। তবে কয়েকটা অতি পরিচিত ভয় অসুখের মাঝে রয়েছেএকা থাকার ভয়, অন্ধকারে থাকার ভয়, কোনো নির্দিষ্ট প্রাণীকে ভয় (তেলাপোকা, টিকটিকি, সাপ ইত্যাদি), কোনো নির্দিষ্ট স্খানের প্রতি ভয়, অলৌকিক ও অতিপ্রাকৃতিক ব্যাপারে ভয় ইত্যাদি।
ভয়ের উৎস শনাক্তকরণ
বিভিন্ন সময়ে মনোবিজ্ঞানীরা ভয়কে নানা দিক থেকে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেছেন এবং উৎস সম্পর্কে কিছু কথা বলেছেন, যেমন
(ক) বংশগত কারণ
(খ) মস্তিষ্কের জৈবরাসায়নিক পরিবর্তনজনিত কারণ
(গ) শৈশব পর্যায় থেকে শিশুর মানসিক বিকাশে ত্রুটি, যেমন বিভিন্ন ধরনের অসুখী অভিজ্ঞতা, অভিভাবকের ভালোবাসা, সহযোগিতা ও সহমর্মিতার অভাব, সাহস, শৃঙ্খলাবোধের অভাব ইত্যাদি।
(ঘ) ব্যক্তিত্বের ত্রুটি : ছেলেটি বা মেয়েটির শৈশব থেকেই ব্যক্তিত্বে কিছু ত্রুটি থাকতে পারে, যেমন অবসেশনাল বা হিস্টিরিক্যাল ব্যক্তিত্বের হলেও এ সমস্ত সমস্যা হতে পারে।
(ঙ) আর্থ-সামাজিক কারণ : পিতা-মাতার বারবার ঝগড়া, পরিবারের সদস্যদের মাঝে ভুল বোঝাবুঝি, আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি ইত্যাদি।
(চ) বিভিন্ন প্রকার সামাজিক চাপ : নানা প্রকার মনোসামাজিক চাপ, যেমন প্রিয় কাউকে হারানো, আর্থিক ক্ষতি, দারিদ্র্য, অবিচার, নিরাপত্তাহীনতা, তীব্র প্রতিযোগিতা, সামাজিক অবমূল্যায়ন ইত্যাদি কারণে ভয়রোগের সৃষ্টি হতে পারে।
(ছ) বিভিন্ন প্রকার আসক্তিকর ড্রাগ : বারবিচুরেটস, অ্যামফিটামিন, গাঁজা, হেরোইন, মরফিন, পেথিডিন ইত্যাদি ড্রাগনির্ভরশীলতা গড়ে তুলতে পারে এবং পরবর্তীতে বাস্তবতার সম্মুখীন হতে ভয়ের উদ্রেক করে।
(জ) ব্রেনের (মস্তিষ্কের) বিভিন্ন প্রকার ক্ষয়কারক রোগ : এছাড়া অন্যান্য কিছু গুরুতর মানসিক সমস্যা যেমন সিজোফেন্সনিয়া, বিষণíতা ইত্যাদির সাথে সমন্বিত হয়ে ভয়ের উদ্রেক করতে পারে।
পরীক্ষাসম্পর্কীয় ভয়রোগ বা ভীতিরোগ
সাম্প্রতিককালে একটি উল্লেখযোগ্য ও আলোচিত ভয়রোগ বা ভীতি সম্পর্কে বলতে গেলে প্রথমে যেটা বলতে হয় সেটি হচ্ছে পরীক্ষাসম্পর্কীয় ভয়রোগ বা ভীতিরোগ। পরীক্ষা সম্বন্ধে একটা সাধারণ ভয় বা চিন্তা মনে বিরাজ করতে পারে, যা পরীক্ষার জন্য দরকারি কিন্তু যখন এ ভয় তার স্বাভাবিক স্তর অতিক্রম করে অনেক দূর এগিয়ে যায় এবং পরীক্ষা দেয়াই ছাত্রের জন্য ভীতিকর পরিবেশের সৃষ্টি করে কিংবা পরীক্ষার কথা শুনলেই সে নানা রকম শারীরিক অসুস্খতায় ভুগতে থাকে তখনই তাকে আমরা ভীতিরোগ বা ভয়রোগ বা পরীক্ষাভীতি বলতে পারি। মনে করুন, আপনার ছেলে বা মেয়েটি কোনোভাবে জানতে পারল তার পরীক্ষা অমুক তারিখ থেকে শুরু হবে, সেই ভাবনার পর থেকে সে শারীরিক বা মানসিকভাবে অসুস্খ হয়ে পড়ল। সে বলল যে তার বুক ধড়ফড় করছে, প্রচুর ঘাম হচ্ছে, হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসছে, বমি বমি লাগছে ইত্যাদি। তাহলে একজন সচেতন অভিভাবক হিসেবে ধরে নেবেন আপনার সন্তানটির সমস্যা শরীরে নয়, তার উৎস নি:সন্দেহে মনে এবং এটাই হচ্ছে পরীক্ষা সম্বন্ধীয় অসুখ বা ভীতিরোগ।
পরীক্ষাভীতির কারণে যেসব মনোশারীরিক উপসর্গ
দেখা যায় তা হচ্ছে:
বমি বমি ভাব হওয়া, কোনো কোনো ক্ষেত্রে বমি হয়ে যাওয়া, খাওয়া-দাওয়া করতে না পারা, বুক ধড়ফড় করা, মাথাব্যথা করা, মাথা ভার ভার লাগা, মাথা ঘুরানো, চোখে ঝাপসা দেখা, ঘুম না আসা, বাস্তবের সাথে সামঞ্জস্যহীনতা, হঠাৎ করে হাত-পা প্রচণ্ড ঠান্ডা হয়ে আসা, ঘন ঘন পাতলা পায়খানা হওয়া, মূর্ছা যাওয়া, মনোযোগ দিতে না পারা, অল্পতে একাগ্রতা হারিয়ে ফেলা, স্মৃতিশক্তিতে সাময়িক অমনোযোগিতা। ছেলে বা মেয়েটি যদি পরীক্ষার আগে এ ধরনের উপসর্গের শিকার হয়, তবে আপনার ঘাবড়ানোর কোনো কারণ নেই। কারণ মন ও মানসিক রোগবিজ্ঞানে এর খুব ভালো চিকিৎসা রয়েছে।
শিশু-কিশোরদের মানসিক অবকাঠামোর স্বরূপ এবং
এর সাথে ভীতির সম্পর্ক :
শিশু-কিশোররা মূলত অনুকরণ করতে তীব্র পছন্দ করে। স্বভাবত এবং সঙ্গত কারণে শিশুটির সবচেয়ে অনুকরণযোগ্য ব্যক্তিত্বই তার বাবা-মা। অবশ্য পরিবার-পরিজন ও পারিপার্শ্বিকতাও তার ওপর প্রভাব ফেলে। শিশু-কিশোরদের মানবিক অবকাঠামো নিরূপণে এদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। যদি পরিবার পরিজনের বিভিন্ন সদস্যের মাঝে বিশ্বাসের ঘাটতি, সহযোগিতা, সহমর্মিতা ও আদরের অভাব থাকে, শৃঙ্খলার চর্চা না থাকে তবে আপনার শিশুটি পরবর্তী জীবনে অনেক বড় বড় মানসিক সমস্যায় পড়তে পারে। একটি হচ্ছে পরীক্ষা সম্বন্ধীয় ভয়রোগ।
ভয়রোগ থেকে সৃষ্ট অন্য সমস্যাগুলো হচ্ছে :
অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডার বা অত্যধিক দুশ্চিন্তা, সমাজ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেয়ার প্রবণতা, সিজোফেন্সনিয়া, হিস্টিরিয়া ইত্যাদি রোগ। কাজেই এগুলো দূরীকরণে পরিবার পরিজনদের মাঝে সহযোগিতা, সহমর্মিতা, আদর-ভালোবাসা, নিরাপত্তা ইত্যাদি দিয়ে শিশুকে গড়ে তুলতে হবে।
এবার আসুন কীভাবে পরীক্ষাভীতি দূর করা যায় তা
নিয়ে সামান্য মনোবিশ্লেষণ করি।
পড়াশোনার ধরন
নানা মুনির নানা মত। মানুষ মাত্রই মতের পার্থক্য হয়। পড়াশোনার ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। তবু সামগ্রিক অর্থে মঙ্গলজনক চিন্তা করে পড়াশোনার ক্ষেত্রে এই ধরনের কথা উল্লেখ করা যায়
(ক) বিশ্লেষণমূলক শিক্ষা (খ) পারদর্শিতামূলক শিক্ষা
বিশ্লেষণমূলক শিক্ষা
এটা হচ্ছে পড়াশোনার সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি। এই পদ্ধতির মূল বৈশিষ্ট্য হচ্ছে কোনো বিষয় সম্পর্কে পুরোপুরি তীক্ষîভাবে বিশ্লেষণ করে জানার ইচ্ছা এবং পরীক্ষাতে নিজের মতো করে তার ব্যাখ্যা প্রদান করা বা বহি:প্রকাশ ঘটানো।
পারদর্শিতামূলক শিক্ষা
এটা হচ্ছে পরীক্ষাতে ভালো ফল লাভের একটা উপায়। এতে ছাত্র-ছাত্রীরা সিলেকটিভ কিছু প্রশ্ন বেছে নেয় এবং সেই প্রশ্নগুলোর খুব সুন্দর উত্তর নিজেরা তৈরি করে বা টিউটরকে দিয়ে তৈরি করে নেয় এবং পরীক্ষাতে খুব সুন্দরভাবে তুলে ধরে। ফলে এই ধরনের ছাত্র-ছাত্রীরা পরীক্ষাতে ভালো নম্বর পেলেও তাদের বিশ্লেষণ ক্ষমতা কমে যায়। তাদের চিন্তা-চেতনার গভীরতা এবং মননশীলতা ও সৃজনশীলতাও কমে যায়। কেননা তাদের মূল লক্ষ্য থাকে পরীক্ষাতে ভালো রেজাল্ট করা। কাজেই এ জাতীয় পড়াশোনা হয় মূলত পরীক্ষাকেন্দ্রিক বা সীমাবদ্ধ।
ইচ্ছা, আকাáক্ষা এবং সফলতার সাথে
ভীতির সম্পর্ক :
ইচ্ছা, দক্ষতা, আকাáক্ষা এবং মানসিক চাপের মাঝে সুস্পষ্ট সম্পর্ক বিদ্যমান। গবেষণা করে দেখা গেছে, একটি নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত ইচ্ছা পোষণ দক্ষতার মানকে অনেক বাড়িয়ে দেয়। ইচ্ছার মাত্রা নির্দিষ্ট সীমা অতিক্রম করলে, অনাকাáিক্ষত সীমায় পৌঁছালে দক্ষতা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। ইচ্ছার মাত্রা যখন বাড়ে তখন দক্ষতার মাত্রা কেমন থাকে। নিচের আলোচনাটুকু খেয়াল করলেই বোঝা যাবে
এটা গবেষণা দ্বারা প্রমাণিত যে, ইচ্ছার মাত্রা যদি একটি মাঝামাঝি অবস্খানে থাকে যেমন ৫০-৬৫% তখন দক্ষতার মাত্রা সবচেয়ে ভালো থাকে। এর নিচে বা ওপরে ইচ্ছার মাত্রা যতই হোক দক্ষতার মাত্রা ততই কম।
এবার পরীক্ষাভীতি ও তার ব্যবস্খাপনা নিয়ে
কিছুটা আলোচনা করা হলো :
বড় বড় পাবলিক পরীক্ষা যেমনএসএসসি, এইচএসসি পরীক্ষা ছাড়াও বিভিন্ন ক্লাসে ফাইনাল পরীক্ষা দেয়ার আগে প্রচুর সংখ্যক ছেলেমেয়ের মধ্যে পরীক্ষা নিয়ে এক অহেতুক ভীতির সৃষ্টি হয়। এমনও দেখা গেছে যে, এ সমস্যার কারণে অনেক মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী পরীক্ষা দিতে ভয় পায় কিংবা পরীক্ষার হলে উপস্খিত হয় না। পরীক্ষাভীতি পৃথিবীতে এমন কোনো ছাত্র-ছাত্রী নেই যাদের মধ্যে দেখা যায় না। তবে মাত্রায় কম অথবা বেশি। মাত্রায় বেশি হলে তা ছাত্রজীবনে নেগেটিভ ফলাফল নিয়ে আসে। মাত্রায় কম হলে ছাত্রছাত্রী নিজেরাই তা অতিক্রম করতে পারে। পরীক্ষার ভীতি কাটানো সম্পর্কে এখানে কিছু সহজ আলোচনা করা হলো।
প্রথমে চিন্তা করতে হবে কীভাবে, কতটুকু সময় পড়লে ফল ভালো হবে। এক্ষেত্রে কর্মপন্থা নির্বাচন করতে হলে হাতের কাছে সিলেবাস, নমুনা প্রশ্ন, নোট, গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় এবং সংগ্রহকৃত প্রশ্নগুলো রাখতে হবে। হাতের সামনে পরীক্ষার রুটিন খাতাটা রাখতে ভুলে গেলে চলবে না। টাইমটেবিল ঠিক করে তা অনুসরণ করাটাও পরীক্ষার্থীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
পরীক্ষার্থীর জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস হলো
খাবারের ব্যাপারে গুরুত্ব দাও। আজকাল অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিশেষ করে মেয়েরা খাবারের ব্যাপারে বেশ নাক সিটকায়। এটা খাব না, ওটায় ফ্যাট/চর্বি। পরীক্ষার সময়ে এই ফিগার সচেতনতা পরিহার করাটা খুবই জরুরি। নাওয়া-খাওয়া এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘুম বাদ দিয়ে পড়লে চলবে না। কারণ ঘুম যে কোনো মানুষের জন্য অত্যন্ত জরুরি। অভিভাবক, শিক্ষক এবং ছাত্রের নিজেরও নিজের প্রতি সচেতন দৃষ্টি রাখতে হবে। থাকতে হবে সাবধানে যেন কোনো ধরনের সমস্যা বা দুর্ঘটনায় পরীক্ষার্থী না পড়ে। বাবা-মা ও শিক্ষক হয়তো সচেতন থাকেনই; কিন্তু অসচেতন হয়ে পড়ে শিক্ষার্থী নিজেই। ফলে এটা অবশ্যই তাদের জন্য সাবধানবাণী।
ভয় না পেয়ে পরীক্ষার রুটিন, কোন বিষয়ে দুর্বলতা তা বাছাই করে সিলেবাস, সাজেশন হাতে নিয়ে পড়ার সময় নির্বাচন করো। দেখা যায়, অনেকে খুব ভোরে উঠে পড়তে পছন্দ করে। আবার অনেকে গভীর রাতে। সাধারণত যারা রাতে পড়ে তাদের জন্য আরেকটা ছোট কথা বলে রাখি। রাতটা যেহেতু ঘুমের জন্য তাই ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায় এটা অন্য সময় পুষিয়ে নেয়া ভালো। তবে সকালটা পড়ার জন্য সবচেয়ে ভালো সময়। কারণ রাতে ঘুমটা পরিপূর্ণ হলে সকালে পড়া তাড়াতাড়ি মনে থাকে। আবার সকালের বেশির ভাগ সময় কাজে লাগানো সম্ভব হয়।
ঘন্টার পর ঘন্টা টানা না পড়ে পড়ার সময় মাঝে মাঝে ব্রেক নেয়া যেতে পারে। কারণ অনেকক্ষণ টানা পড়লে একসময় তা বিরক্তিকর হয়ে উঠতে পারে পরীক্ষার্থীর জন্য। এতে দেখা যায়, সে হয়তো টেবিল-চেয়ারে বসে আছে ঠিকই কিন্তু পড়া হচ্ছে না কিছুই।
খাবারের ক্ষেত্রে ডায়েটিংয়ের চিন্তা পরিহার করে ব্যালান্সড ফুড গ্রহণ করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ পড়াশোনা করলে ব্রেনে চাপ পড়ে বেশি। তাই সঠিক খাদ্যতালিকা অনুযায়ী খাদ্য গ্রহণ করা প্রয়োজন।
পরীক্ষাপূর্ব ও পরীক্ষার সময়ে পরীক্ষার্থীর মধ্যে পরীক্ষাভীতি কাজ করে। এ সময় মেডিটেশন করা গেলে ভালো। অথবা ছোটখাটো শারীরিক কিছু ব্যায়াম করা যেতে পারে। মেডিটেশন এক ধরনের ধ্যানমগ্নতা, যার মাধ্যমে মনকে প্রশান্ত করা যেতে পারে। এখানে উল্লেখ্য, যে কোনো ধরনের প্রার্থনা যেমননামাজ এক ধরনের ধ্যানমগ্নতা বা মেডিটেশন, যা মানুষের মনকে স্খির, শান্ত করতে সাহায্য করে। আর ব্যায়াম করার ক্ষেত্রে পরীক্ষার্থীকে একটু সচেতন হতে হবে। কারণ এমন কোনো ব্যায়াম করা উচিত নয়, যাতে আঘাত পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আর ব্যায়ামের জন্য বেশি সময় রাখাও ঠিক হবে না।
প্রতিটি পরীক্ষার্থীরই কিছু শারীরিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকা ভালো। শুধু বসে বসে পড়লে হয়তো মনোযোগ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। আবার বোরড হয়ে যেতে পারে পরীক্ষার্থী।
অনেক সময় দেখা যায়, পরীক্ষার্থীর প্রস্তুতি খুব ভালো, মোটামুটি কোর্স কমপ্লিট হয়ে গেছে। কিন্তু রিভিশন দেয়ার সময় দেখা গেল কোনো কিছুই মনে নেই। ভড়কে যাওয়ার কিছু নেই, যদি আসলেই তাই ঘটে। আবার নতুন করে প্রথম থেকে পড়া শুরু করাও যে গুরুত্বপূর্ণ তাও নয়। শুধু গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে একবার চোখ বুলাও। কারণ এক রাতে তুমি না পারবে তোমার সম্পূর্ণ কোর্স কমপ্লিট করতে এবং সেটার কোনো প্রয়োজনও নেই। কারণ পরীক্ষার হলে লেখার সময় তুমি নিশ্চিন্তে থাকতে পার, তোমার মস্তিষ্ক তোমার সঙ্গে বিট্রেই করবে না।
পরীক্ষার হলে যদি দেখ প্রশ্ন কমন পড়েনি অথবা উত্তরটা সম্পূর্ণভাবে তুমি জান না, তাহলে ভয়ে পরীক্ষাটাই আবার নষ্ট করে ফেলো না। পরীক্ষার প্রশ্নপত্রটি ভালো করে আরেকবার পড়। এবার নিজে একটু চিন্তা করো উত্তরটা কী হলে তা সঠিক হবে, তাড়াহুড়ো কোরো না। নিজেকে কিছুটা সময় দাও। এবার উত্তর লেখা শুরু করো। প্রয়োজনে কিছুটা জায়গা ফাঁকা রাখ, পরে লেখার জন্য। কিন্তু তাড়াহুড়ো কোরো না কিছুতেই। আর ভয়ে যেন হাত-পা ঠান্ডা না হয়ে যায় একটু খেয়াল রেখো।
অভিভাবকদের মধ্যে একটা প্রবণতা লক্ষ করা যায়। তারা প্রতিবেশী বা আত্মীয়ের সন্তানদের ভালো ফলের বিষয় নিয়ে নিজের সন্তানের রেজাল্ট তুলনা করেন এবং সন্তানকে এ নিয়ে ভর্ৎসনা করতেও ছাড়েন না, এটা ভুল। মা-বাবা অবশ্যই সন্তানের সর্বোচ্চ ভালো কামনা করেন, কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু পরীক্ষার ফলাফল তুলনামূলক বিচার করে তাদের বকাঝকা না করে কীভাবে তারা আরো ভালো করতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখাটাই বেশি জরুরি। সন্তান যেন ভাবতে শুরু না করে, তার বাবা-মা তাকে ভালোবাসে না। চেষ্টা করুন আপনার সন্তানের মানসিক শক্তি বাড়াতে। এটা তার জন্য ক্ষতিকর হবে না।
পরীক্ষার্থীর জন্য কঠোর পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই। মানসিক শক্তি বাড়ানোর জন্য মেডিটেশন একটা ভালো পন্থা।
আর নিজের প্রতি নাও সর্বোচ্চ যত্ন, পড়াশোনাটা করো মনোযোগ দিয়ে। ঠিকমতো খাও, ভালো ঘুম দাও। পরীক্ষা দাও নিশ্চিন্তে। ভালো ফল তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।
পরীক্ষার্থী কী খাবে, কী খাবে না
মানসিক চাপের সময় মানুষ বেশি খায়। এটা অনেকের বেলায় যেমন সত্যি, তেমনি অনেকে ভাবতেই পারে না, স্ট্রেসের সময় আবার খায় কী করে। সে যাই হোক, মানসিক চাপ কমাতে খাবার বড় ভূমিকা পালন করে। পরীক্ষার সময় স্ট্রেস বেশি থাকায় অনেকে কিন্তু বেশি খেয়ে ফেলে। যার অনেকটা জুড়ে থাকে জাঙ্ক ফুড। যার পরিণতিতে দেখা যায় পরীক্ষা শেষ হতে হতে অনেকে বেশ নাদুস-নুদুস হয়ে উঠেছে। আসলে পরীক্ষার সময় চাই সুষম খাদ্য, পুষ্টিকর খাবার। পড়তে পড়তে যা ইচ্ছা তাই না খেয়ে প্রয়োজনীয় খাবার কীভাবে খাবে, তা জানতে জানানো হলো কিছু টিপস
অল্প অল্প করে বেশ কয়েকবার খেতে হবে। এতে ব্লাড সুগার এবং এনার্জি লেভেল ঠিক থাকে।
অনেকে পরীক্ষার সময় ভাত খেতে পারে না, ফলে ভরসা বার্গার অথবা অন্য কোনো স্ন্যাক্স। কিন্তু পরীক্ষার সময়ে স্যুপ, পিনাট বাটার, টুনা বা মুরগির সালাদ বাড়তি খাবার হিসেবে স্বস্তি দেবে।
মিষ্টি বা মিষ্টিজাতীয় খাবার এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। চকোলেট খেতে ইচ্ছা করছে খেতে পার তবে তার আগে উপকরণের লেবেলটাও একটু পড়ে নাও। ফ্যাটের পরিমাণ বলে দেবে তোমার জন্য কতটা খাওয়া উচিত।
কার্বোহাইড্রেটের চেয়ে প্রোটিন এ সময় এনার্জি দেবে। ক্র্যাকারের ওপর একটু পনির ছড়িয়ে নাও। প্যাকেটজাত জুসের বদলে দুধ খাও। মুরগির সিদ্ধ টুকরা দিয়ে পাস্তা বা নুডুলস খেতে পার। ভাত না খেয়েও কার্বোহাইড্রেটের সঙ্গে প্রোটিন খাওয়া হয়ে যাবে।
পড়াশোনার ভীষণ চাপ, ক্লান্তি কাটাতে চা খেয়ে ফেলো না যেন। চা-কফির ক্যাফেইনের পরিবর্তে অনেক বেশি প্রাণবন্ত রাখবে পানি। টেবিলে হাতের কাছেই রাখো এক বোতল পানি। অন্তত দুই ঘন্টা পরপর একটু পানি অবশ্যই খেয়ে নেবে।
পড়ার টেবিলে খাবার নিয়ে বসবে না। পড়তে পড়তে বেশি খাওয়া হবে। আর বেখেয়ালে বেশি খেয়ে পরে আয়নায় নিজেকে দেখে হা-পিত্যেশ করে কিন্তু লাভ হবে না।
মা-বাবাকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে পরীক্ষার সময় বাড়িতে যেসব খাবার সাধারণত থাকে সেগুলো যেন স্বাস্খ্যকর হয়। বাদাম, কিসমিস, লো ফ্যাট দই, ছানা, দুধ, তাজা ফল, ওটমিল, চিনি কম আছে এমন কোনো কর্নফ্ল্যাক্স, নানা রকম সবজি বাড়িতে থাকলে তা সন্তানের জন্য অনেক স্বাস্খ্যকর খাবার হবে।
পেট চিনচিন করছে ক্ষুধায়? অনেক সময় ক্ষুধা আর তৃষäা গুলিয়ে যায়। এক গ্লাস পানি খেয়ে দেখ ক্ষুধা ক্ষুধা ভাবটা গেছে কি না। ক্ষুধা ভেবেই ঝট করে কিছু খেয়ে ফেলে শরীরে বাড়তি ক্যালরি জমিয়ে ফেলার দরকার নেই।
পড়াশোনা থেকে ব্রেক নেয়ার জন্য খেতে আরম্ভ করবে না বরং ১০ মিনিট হেঁটে নাও, গল্প করে নাও ভাইবোন বা মায়ের সঙ্গে, এক্সারসাইজও চলতে পারে না। হলে লম্বা একটা আড়মোড়া দিয়ে আবার পড়তে বসে যাও।
পরীক্ষাভীতি হলে কী করা দরকার
সামান্য মাত্রায় দুশ্চিন্তানাশক ওষুধ যেমনইনডেভার, সার্টালিন. অ্যামিট্রিপটাইলিন, ক্লোবাজাম অল্প মাত্রায় ডাক্তারের পরামর্শে সেবন করা যেতে পারে। সাথে কিছু ভিটামিন ওষুধ সাহায্যকারী হতে পারে।
সাইকোলজিক্যাল চিকিৎসা
এই চিকিৎসাটি সাইকিয়াট্রিস্ট অথবা সাইকোলজিস্টের সাহায্যে করা যেতে পারে। পরীক্ষার্থী কল্পনায় সে যে পরীক্ষা দিচ্ছে এ রকম অনুভূতি তৈরি করতে পারে যেমন সে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে পেল, খাতা পেল, লেখা শুরু করল এবং তিন ঘন্টা পর খাতা জমা দিল। এ রকম একটা পরিবেশ কল্পনায় আনতে পারে। এতে করে পরবর্তীতে পরীক্ষার্থী যখন সত্যিকার অর্থে আসল পরীক্ষার সম্মুখীন হবে তখন তার আসল পরিস্খিতি অনেক চেনা বলে মনে হবে এবং এতে পরীক্ষার্থী টেনশন বা ভয় কম অনুভব করবে। এগুলো আসল পরীক্ষার ভীতি কাটাতে সাহায্য করবে।
এছাড়া বিভিন্ন ধরনের যোগাসন যেমন শবাসন, শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম এগুলোও পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষাভীতি কমাতে সাহায্য করবে।
No comments:
Post a Comment