Sunday 23 December 2012

মতিভ্রম বা আলঝেইমার

মস্তিষ্কের জটিল সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম। আলঝেইমার ডিজিজ এমন একটি রোগ যার ফলে মানুষের স্মৃতিশক্তি, চিন্তা করার ক্ষমতা, এমনকি দৈনন্দিন কাজ করার ক্ষমতাও হারিয়ে যায়।অধিকাংশ মানুষের ক্ষেত্রে ৬০/৬৫ বছর বয়সে এই রোগটি বেশী দেখা দেয়।একজন জার্মান মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অ্যালোইস আলঝেইমার সর্বপ্রথম ১৯০৬ সালে এই রোগটি বর্ননা করেন, পরবর্তীতে তার নামানুসারে এই রোগের নামকরন করা হয়।সম্প্রতি এক গবেষনায় দেখা গেছে বিশ্বের প্রায় ২৬.৬ মিলিওন
মানুষ এই রোগে ভুগছে, এবং বিজ্ঞানীদের ধারনা আগামী ২০৫০ সালের মধ্যে প্রতি ৮৫ জনে একজন এই রোগে ভুগবে।আলঝেইমার ডিজিজ পড়ন্ত বয়সে দেখা গেলেও ইদানিং ৩০ বা তার আশেপাশেও এ রোগ দেখা যাচ্ছে। যার কারনে নার্ভাস সিস্টেমের এই অসুখ নিয়ে চিকিৎসকরা নতুন করে ভাবতে শুরু করেছেন। 
আলঝেইমার এ আক্রান্ত ব্যাক্তির নিউরনের ছবি। 

লক্ষনঃ
ভয়ঙ্কর এই রোগটির প্রকৃত কারন এখন পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা সঠিকভাবে আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়নি। তবে অনেকের মতে এটি জেনেটিক কারনে হতে পারে।এই রোগের অনেকগুলো উপসর্গের মধ্যে দশটি উপসর্গ বেশী গুরুত্বপুর্ন, যা কোন ব্যাক্তির মধ্যে দেখা দিলে তৎক্ষনাত একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত।লক্ষনগুলো নিম্নরুপ-
১)আলঝেইমারে আক্রান্ত ব্যাক্তিরাকোন জিনিসকে তার সঠিক স্থানে রাখতে পারেনা।যেমন ধরুন বই টেবিলে না রেখে ফ্রিজে রেখে দেয়া এবং পরবর্তীতে ঐ জিনিসটি কোথায় রেখেছে তা মনে করতে না পারা।
২)চিন্তা শক্তি ও বড় কোন সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলা।নিজের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, খাওয়া দাওয়া,টাকা-পয়সা বা ব্যাক্তিগত জীবনের কথা ভুলে অচেনা এক ভুবনে হারিয়ে যাওয়া।
৩)নিজেকে সামাজিক, পারিবারিক কিংবা অন্যান্য শৌখিন কাজকর্ম থেকে সরিয়ে ফেলা,যা সে আগে করতে পছন্দ করতো, যেমন খেলাধুলা, ঘুরে বেড়ানো, আড্ডা দেয়া ইত্যাদি।
৪)মুড বা মানসিক অবস্থার আমূল পরিবর্তন হওয়া,যেমন সর্বদা কনফিউসড,বিষাদগ্রস্থ, আতংকিত, সন্দেহপ্রবন বা দুশ্চিন্তাগ্রস্থ থাকা।
৫)অন্য কোন ব্যাক্তির সাথে স্বাভাবিক কথোপকথন চালিয়ে যেতে না পারা।যেমন মাঝখানে কথা বন্ধ করে দেয়া কিংবা একই কথা বারবার বলা।
৬)লিখতে সমস্যা বা উচ্চারনগত সমস্যা। কোন কিছু বলার সময় সঠিক শব্দ চয়ন করতে না পারা,যেমন ঘড়ি কে watch না বলে hand clock বলা।
৭)সময় ও জায়গা নিয়ে কনফিউসনে ভোগা।গুরুত্বপুর্ন তারিখ,ফোন নম্বর, নিজের বাড়ীর ঠিকানা, পরিবার পরিজনদের নাম মনে না রাখতে পারা।
৮)দৈনন্দিন সাধারন কাজকর্ম করতে না পারা,একই জিনিস বারবার মনে করিয়ে দেয়া সত্বেও ভুলে যাওয়া।
৯)নিচের দিকে ঝুকে ঝুকে হাটা।
১০)কোন কিছুর রঙ নির্ধারন ও দুরত্ব পরিমাপ করতে ব্যররথ হওয়া।কোন কোন ক্ষেত্রে আয়নায় নিজের চেহারা দেখেও বুঝতে না পারা যে আয়নার ঐ ব্যাক্তিটি সে নিজেই।
চিকিতসাঃ
যেহেতু বিজ্ঞানীরা এই রোগের কারন আবিষ্কার করতে পারেনি সেহেতু এই রোগের জন্য নির্ধারিত কোন স্পেসিফিক কোন ঔষধ নেই।অন্যান্য সাধারন মানসিক রোগগুলোর মত বিভিন্ন ধরনের এন্টি সাইকোটিক ড্রাগ চিকিতসার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। তাছাড়া নানা ধরনের বিহেভিয়ারাল থারাপিও প্রয়োগ করা যায়। 


সৌজন্যেঃনীল-পরী

No comments:

Post a Comment