মহিলাদের কি মানসিক রোগ হয়?
হ্যাঁ, যে কোনো মানসিক রোগই মহিলাদের বেলায় হতে পারে। এমনকি মাদকাসক্তি পর্যন্ত। ইদানীং মহিলাদের মধ্যে মাদকাসক্তির হার ক্রমবর্ধমান, যা একটি জাতির জন্য হুমকিস্বরূপ।
মেয়েদের কী কী মানসিক রোগ হয়
গর্ভাবস্থায় ১০ মাস ও সন্তান প্রসবের পর আরো এক বছর সময়কাল পর্যন্ত মেয়েদের কিছু কিছু মানসিক রোগ দেখা যায়। যা কিনা পুরুষদের কস্মিনকালেও হওয়ার কথা নয়।
এগুলো ছাড়া মেয়েদের মধ্যে টেনশন, অবসেশন, হিস্টিরিয়া, ডিপ্রেশন ও খাদ্যগত রোগগুলো পুরুষদের চেয়ে বেশি মাত্রায় পাওয়া যায়। এ প্রবন্ধে আমরা এগুলো নিয়ে আলোচনা করব।
সৃষ্টির আদিতে
কন্যাসন্তান জন্মগ্রহণ করার পর থেকে ৫ বছর বয়স পর্যন্ত তাদের মনে কতগুলো মানসিক পরিবর্তন হয়। বিভিন্ন মনোবিজ্ঞানী যেমন-ফ্রয়েডসহ অন্যান্য নমস্য ব্যক্তি কতগুলো ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়েছেন। কন্যাসন্তান জন্মের পর ৩ থেকে ৫ বছর বয়সকালে শিশুকন্যার পিতার প্রতি এক আকর্ষণ জন্মায়। কন্যাটি তখন পিতাকে পাওয়ার আশায় মা কে তার প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে। ওই সময়টায় সে মাকে মনে মনে হিংসা করে এবং পিতার প্রতি তার অগাধ ভালোবাসা জন্মে আর মায়ের প্রতি জন্মে হিংসা। সাধারণভাবে বয়স বাড়তে থাকলে এই দ্বন্দ্বগুলো মিলিয়ে যায়। কিন্তু কোনো কারণে যদি দ্বন্দ্বগুলো মনের মাঝে বজায় থাকে তাহলে একটি অসুখের সৃষ্টি হয় তাকে বলে ইলেক্ট্রকমপ্লেক্স। কন্যাশিশু ৫ বছর থেকে আস্তে আস্তে বড় হতে থাকলে সুষম সামাজিক পরিবেশে বড় হতে থাকলে সে পুরুষ শিশুর চেয়ে অধিক ধৈর্যশীল ও অধিক চাপ সহ্য করার শক্তি লাভ করে।
পাঠকগণ! লক্ষ করুন, এখানে একটি বাক্য ব্যবহার করা হয়েছে ‘সুষম পরিবেশ’। এই পরিবেশ সৃষ্টি করার দায়-দায়িত্ব পিতা-মাতার। যা সচরাচর হয়ে ওঠে না বা বিভিন্ন কারণে সম্ভব হয় না। আমাদের সমাজে পুত্রসন্তানের মূল্য অনেক বলে মনে করা হয় কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এ ধারণা এতটা সত্য বলে মনে হয় না। বৃদ্ধ বয়সে পিতা-মাতার সাহায্যে তা দৈহিক কিংবা আর্থিক যাই হোক না কেন, আমি মেয়েদের এগিয়ে আসতে দেখি। সুতরাং কন্যাসন্তান পুত্রসন্তানের চেয়ে মোটেও কম মূল্যের নয়।
দশের পর থেকে মেয়েসন্তানের শরীরে যে পরিবর্তন আসতে থাকে ওই সময়টাতে মানসিকভাবে সহযোগিতা না দিলে মেয়েদের কিছু কিছু মানসিক সমস্যার উদ্ভব হতে পারে।
একটি মেয়ের গল্প
রুনার বয়স ১২ বছর। হাফপ্যান্ট, ফ্রক পরে খেলাধুলা করে। বাসায় আরো দুজন ছোট ভাই-বোন আছে। পিতা রশিদ উদ্দিন আহমেদ বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আর বৈশিষ্ট্যতার জন্যই তিনি বাড়িতে কম থাকেন। মা একজন কর্মজীবী মহিলা, আর্থিক কারণে নয়, জাস্ট অভ্যাসগত তিনি কাজ করেন। আর এই কাজের জন্যই তিনি বাড়িতে কম থাকেন। সংসারটা চলে চাকর-চাকরানির কেয়ার-অফে। একদিন সকালে স্কুলে যাওয়ার সময় ১০টার দিকে বাথরুমে গিয়ে রুনা চিৎকার করে উঠল। স্বভাবতই পিতা-মাতা অনুপস্থিত। কাজের বুয়া দৌড়ে গিয়ে দেখল দরজা ভেতর থেকে বন্ধ, রুনা চিৎকার করছে, অনেকক্ষণ চেঁচামেচির পরে দরজা খুলে কাজের বুয়া জমিরন বিবি যা দেখল তার সারমর্ম হচ্ছে ‘রুনার প্রথম মাসিক হয়েছে। বুয়া তার জ্ঞানে যতটা কুলায় রুনাকে সান্ত্বনা দান করল। পরে পিতা-মাতা ফিরে এলে রুনা আর ওই ঘটনাটি তার বাবা-মাকে জানাল না।’
এই মুহূর্তে রুনার দরকার মাসিকসংক্রান্ত বয়স অনুযায়ী জ্ঞানের ও সহানুভূতি। এই বয়সে কন্যাসন্তানের মধ্যে নানা রকম ভয়-ভীতি, রাগ ও ইনফিরিয়রিটি কমপ্লেক্স তৈরি হতে পারে। পাঠকগণ লক্ষ করুন, ওই ঘটনার পর থেকে রুনার চালচলন, পোশাক-আশাক পাল্টে গেল। সালোয়ার-পায়জামা এলো, বুকে একটা ওড়না জায়গা দখল করে নিল। ছেলেদের সাথে ছোটাছুটি, দৌড়াদৌড়ি বন্ধ হয়ে গেল। যদিও রুনার মনে দৌড়াদৌড়ি করার ইচ্ছা বজায় থাকল।
এখন আর মেহমান এলে সহসা সামনে যেতে পারে না। তার ব্যক্তিস্বাধীনতা কতকাংশে খর্ব করা হলো। এ সময় সে বুঝতে পারল ছেলে এবং মেয়েদের মধ্যে কী তফাৎ। কতক কাজ সে বুঝে নিল শুধু ‘ছেলেদের কাজ’ আর কতক কাজ বুঝে নিল শুধু ‘মেয়েদের কাজ’। যেমন- নাশতা তৈরি করা, বিছানা গুছানো, ঘর গুছানো ইত্যাদি। এই সময়ে যে কোনো কন্যাসন্তানের মনে হীনমমন্যতার সৃষ্টি হতে পারে। নিজেকে একটা ‘অদ্ভুত জীব’ মনে হতে পারে। আরো বড় হয়ে দুবছর পরে সে জানল তার ছোটভাই গিলটু যে জিনসটা করতে পারে বা চাইতে পারে তা তার পক্ষে করা বা চাওয়া সম্ভব নয়।
স্কুলে বা কলেজে যাওয়ার সময় রুনা ‘ইভটিজিং’-এর শিকার হয়। মাথা নিচু করে তা সহ্য করে। আরেকটু বড় হয়ে পিতামাতার দৃষ্টিতে ‘বুদ্ধি কম হতে পারে’ মনে করে তাকে আর্টস পড়তে দেয়া হলো। পাঠকগণ! খেয়াল করুন রুনার পিতামাতা যদি তাকে ‘বুদ্ধিমতী’ মনে করতেন, তাহলে রুনাকে সায়েন্স পড়াতেন, সে মেডিকেলে ভর্তি হতো এবং শেষে ‘স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ’ হতো। ব্যতিক্রম যে নেই তা নয়। তবে খেয়াল করে দেখবেন বেশির ভাগ মহিলা ডাক্তার ‘স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ’ হয়ে যান। যেন এর বাইরে আর কিছু করার নেই। আমার মনে হয় এই সিদ্ধান্তটা কিছু চাপিয়ে দেয়া।
এতক্ষণ আমরা জন্ম থেকে ২৬ বছর বয়স পর্যন্ত একটা মেয়ে কীভাবে সামাজিক চাপের শিকার হয় তার একটি উদাহরণ দেখলাম। মানসিক রোগের কারণ ব্যাখ্যায় সামাজিক ও পারিবারিক চাপ মেয়েদের জন্য একটি অন্যতম কারণ। অনেক কথা আছে যা রুনা ইচ্ছা করলেও বা মন খুলে বলতে পারবে না, প্রকাশ করতে পারবে না, ইচ্ছামতো বন্ধুদের সাথে মেলামেশা করতে পারবে না ইত্যাদি সামাজিক চাপ মানসিক রোগ সৃষ্টিতে সাহায্য করে।
‘মাসিক চক্র’ বা ‘পিরিয়ড’-এটি হরমোন এস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরনের খেলা। এস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরনের চক্র শরীর ভাঙে আবার গড়ে। এ হরমোন দুটো নারীর শরীরে নমনীয়তা ও উষ্ণতা তৈরি করতে সাহায্য করে। এস্ট্রোজেন-প্রজেস্টেরন চক্রের মধ্যে হরমোনের মাত্রা কিছুটা কম-বেশি হলেই দেখা দেয় প্রিমিনিস্ট্রুয়াল সিমটম বা মাসিক-পূর্ব মানসিক চিন্তা। এ সময়টাতে মেজাজ খিটখিটে থাকে, বিরক্তিবোধ হয়, শরীরে ওজন বাড়ে, ঘুমের সমস্যা হয়। চক্রের এ সময়টা মানসিক সমস্যার মধ্যে পড়ে। অনেক মেয়ের মাইগ্রেন বা অর্ধ কপালি মাথাব্যথা দেখা দেয়। সামান্য চিকিৎসাতে এর উপশম হয়। চিকিৎসা ছাড়াও এ ‘পিএমটি’ আপনাআপনি ৫ থেকে ১০ দিনের মধ্যে চলে যায়। তলপেটে ব্যথা হওয়া, মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব, চোখে ঝাপসা লাগা সব ‘পিএমটি’-এর উপসর্গ এবং তা আস্তে আস্তে কমতে থাকে। পাঠকগণ কল্পনা করুন ১৭ বছর বয়সের রুনা এক ক্লাসমেটকে ভালোবাসে। রুনা প্রাইভেট পড়তে গিয়ে কোচিং ক্লাসে ছেলেটির বুদ্ধিমত্তা ও স্মার্টনেস দেখে তাকে মন দিয়ে ফেলে। প্রথমে চলল নোট দেয়া-নেয়া, তারপর বই-এর ভেতর চিঠি আদান-প্রদান, ‘ভুলো না আমায়’, মরে যাওয়া গোলাপ ইত্যাদি। তারপর আরেকটু অগ্রসর হলো রজনীগন্ধার ডাঁটায়। পরে জিয়া মাজার, চন্দ্রিমা উদ্যান ও সব শেষে আরো অনেক কিছু। কোনো একদিন ড্রয়ার পরিষকার করতে গিয়ে বুয়া জমিরন বিবি আবিষকার করেন প্রেম ভালোবাসা মাখানো অনেকগুলো চিঠি। গৃহকর্ত্রী ফিরে এলে অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে বুয়া চিঠিগুলো হস্তান্তর করে গৃহকর্ত্রীর কাছে। আরো পরে গৃহকর্তা ফিরে এলো ‘মাস্টার বেডরুমে শোনা যায় ধমকা-ধমকি, কান্নাকাটির আওয়াজ’। ফলাফলে রুনার স্কুলে যাওয়া বন্ধ। বন্ধ হয় কোচিংয়ে যাওয়াও। মা অফিস ত্যাগ করে রুনাকে বাড়িতে পাহারা দিতে শুরু করে। বিশ্বস্ত বিরহিনীর মতো রুনার খাওয়া-দাওয়া বন্ধ হয়। ঘুম নিদ্রা কমে যায় এবং চেহারা খিটখিটে হতে থাকে। পাহারা দেয়া অবস্থায় মা একদিন দেখতে পায় রুনার শরীরে খিঁচুনির মতো হচ্ছে এবং সে এক হুলস্থূল ব্যাপার। প্রথমে পাড়ার ডাক্তার। তারপর সাত দিন সিরিয়াল দিয়ে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, নার্সিং হোম ইত্যাদি করা অবস্থায় যখন কলকাতায় গিয়ে চিকিৎসা করাবেন ভেবে পাসপোর্ট রেডি করছেন ঠিক তখনই কী করে একজন মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হলেন। সাতদিন অবিরাম চেষ্টার পর বিভিন্ন চিকিৎসা পদ্ধতি খাটিয়ে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ রুনাকে ভালো করে তুললেন। এবার আসুন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের ভাষায় রোগটির বর্ণনা শুনি।
রোগটির নাম ‘হিস্টিরিয়া’। অবিবাহিত কম বয়সের মেয়েদের এটি বেশি হয়। চাওয়া আর পাওয়ার কমতি ঘটলেই অবচেতন মন রোগটি তৈরি করতে সাহায্য করে।
মনে রাখা দরকার এটি কোনো ‘ভান’ নয়। খিঁচুনি প্যারালাইসিস, হঠাৎ অন্ধ হয়ে যাওয়া, হঠাৎ কথা বন্ধ হয়ে যাওয়া, স্মৃতিশক্তি হারানো, শরীরে এলোমেলো ব্যথা ইত্যাদি হিস্টিরিয়া রোগের উপসর্গ হতে পারে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আপনি কিছুই পাবেন না কিন্তু রোগীর ঠিকই কষ্ট হচ্ছে। এই মুহূর্তে দরকার মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কেয়ার ও সাইকোথেরাপি।
রুনার ব্যাপারটা কতকটা এ রকম। দু-এক বছর পরেই প্রেমিককে ভুলে যাওয়ার কারণে (যা কিনা পিতা-মাতার চাপে) রুনার মনে আরেকটি অসুখের উদ্ভব হলো তার নাম অবসেশন।
‘অবসেশন’ রোগটি মেয়েদের মধ্যে বেশি পাওয়া যায়। এটি একটি মৃদু মানসিক রোগ বা নিউরোসিস রোগ। ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সের মহিলাদের এ রোগটি বেশি হয়। পূর্বে ঘটে যাওয়া অপরাধবোধ থেকে এ রোগের সৃষ্টি হতে পারে। অবসেশন রোগের উপসর্গের চরিত্র দুরকম। কিছু উপসর্গ কাজের মাধ্যমে হয়। পাঠকের সুবিধার্থে সাধারণভাবে উপসর্গগুলো আলোচনা করছি। খুঁতখুঁতে ভাব, একই চিন্তা বারবার করা, একই জিনিসের সন্দেহ পোষণ করা, অবিশ্বাস, অতিরিক্ত ঘৃণাবোধ, অতিরিক্ত হিসাবি ইত্যাদি এ রোগের মূল উপসর্গ। সাধারণভাবে আমরা রোগীদের এভাবে পাই- বারবার হাত ধোয়া, হাতে ময়লা আছে ভেবে হাতে সাবান দিয়ে ঘষা, গোসল করতে অতিরিক্ত সময় লাগা, বারবার গোনা, রাগ, সেক্স সম্বন্ধে কাল্পনিক চিন্তা আসা, বারবার নামাজ পড়া ইত্যাদি।
রুনাকে আবারও সেই মনোরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হলো। বলে রাখা ভালো, এর আগে রুনার পিতা মেডিসিন সার্জারি গাইনি রোগের বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখিয়ে ফেলেছেন, যা হোক আবারও মানসিক রোগ চিকিৎসায় আরোগ্য লাভের পর রুনা দুতিন বছর কোনো ওষুধ ছাড়াই কালাতিপাত করল। মেয়ের বয়স যখন ২৫ বছর হলো তখন পিতামাতার ইচ্ছায় বিশিষ্ট শিল্পপতি আবুল হাশেমের সাথে রুনার বিয়ে হয়ে গেল। তিন বছরের মাথায় প্রথম সন্তান হওয়ার পর রুনার কিছু মানসিক পরিবর্তন লক্ষ করা গেল। দুই পরিবারের মধ্যে রুনার সন্তান অত্যন্ত আদরের। কিন্তু সন্তান ছেলে হওয়া সত্ত্বেও রুনার কেন জানি বাচ্চার দিকে নজর নেই, একটু উদাসীন থাকে। রাতে ঘুম কম হয়। বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ায় না। নিজের পোশাক পরিচ্ছদের দিকে খেয়াল নেয় না। আত্মীয়-স্বজনরা ফুল-মিষ্টি নিয়ে হায় হ্যালো বললেও উত্তর দেয় না। মুখ গোমড়া করে রাখে, মনে যেন শান্তি নেই। এই অসুখটির নাম প্রসবোত্তর ডিপ্রেশন। ডিপ্রেশন বা বিষণ্নতার রোগে কোনো কিছু ভালো না লাগা, চুপচাপ বসে থাকা, কান্না পাওয়া, খাদ্যে অনীহা, ওজন কমে যাওয়া, বারবার মৃত্যুর চিন্তা মাথায় আসা, স্বাভাবিক কাজে আগ্রহ না থাকা, পারিপার্শ্বিক কাজ থেকে আনন্দ লাভ না করা ইত্যাদি উপসর্গ থাকে। সন্তান প্রসবের পর বিষণ্নতা-এ ধরনের রোগ বাচ্চা জন্মের চার দিনের মাথা থেকে শুরু হয়। অন্য বিষণ্নতা থেকে এ বিষণ্নতার তফাৎ এতটুকু যে, এখানে শিশুকে মেরে ফেলা বা আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি থাকে।
পাঠকগণ! আমরা রুনার জীবনযাত্রা বিশ্লেষণ এখনো শেষ করিনি। এর পরে সংসার চালিয়ে ওর বয়স যখন ৪৫ বছর হলো তখন আরেকটি সমস্যার মুখোমুখি হলো সে। মাসিক চক্র অনিয়মিত হতে লাগল, দু-এক বছর পর তা নিয়মিতভাবে বন্ধ হয়ে গেল। এ সময়টায় শুরু হলো শরীরের জ্বালাপোড়া, ঘাম, অবসন্নতা, তীক্ষ্ণ মেজাজ ইত্যাদি উপসর্গ। এমনিতেই রুনার দু সন্তানের কেউ দেশে নেই। বাড়িটা কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগে, সন্তানদের জন্য মন যেন কেমন খারাপ লাগে। এ সমস্ত বিষয়ে রুনার স্বামী আবুল হাশেম সাহেব কম খেয়াল করেন। বেশির ভাগ সময় তাকে ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়। ফলে আমাদের গল্পের নায়িকা রুনা হাশেম আরেকটি অসুখে ভুগতে শুরু করেন। তার নামও বিষণ্নতা। নারীর মনের অসুখ-এ প্রবন্ধে রুনা হাশেমের জীবন বৃত্তান্ত অনুসরণে আমরা যেসব অসুখের নাম পেয়েছি তা লিপিবদ্ধ করলে এ রকম দাঁড়াবে-
১. ইলেক্ট্রকমপ্লেক্স-যা কিনা পরবর্তীতে ব্যক্তিত্বের অসামঞ্জস্যতার প্রকাশ পায়।
২. ‘পিএমটি’ বা মাসিক-পূর্ব মানসিক সমস্যা।
৩. হিস্টিরিয়া।
৪. অবসেশন।
৫. সন্তান প্রসবোত্তর বিষণ্নতা।
৬. বৃদ্ধ বয়সের বিষণ্নতা।
আপনারা একটু খেয়াল করলেই দেখবেন যে, কোনো পুরুষের ৭ থেকে ৭০ বছর বয়স পর্যন্ত এতগুলো অসুখে ভোগার প্রবণতা মেয়েদের চেয়ে কম। আমরা কথাটাকে এভাবে বলতে পারি, মেয়েদের মধ্যে মনের অসুখে ভোগার প্রবণতা ছেলেদের চেয়ে বেশি। সম্ভাব্য কারণ নিম্নরূপ-
১. সামাজিক ও পারিপার্শ্বিক মানসিক চাপ।
২. খর্ব স্বাধীনতা ও ব্যক্তিস্বাধীনতা।
৩. সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি।
৪. পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় অবহেলা।
৫. এস্ট্রোজেন-প্রজেস্টেরন হরমোন চক্র।
৬. মাতৃত্ব।
৭. মাতৃত্ব-উত্তর দায়িত্ব।
৮. সংসারের প্রতি নারীর অধিক ভালোবাসা।
৯. মেনোপজ বা নারীত্বের খর্বতা।
১০. অধিক একাকিত্ব।
কারণ যা-ই ঘটুক না কেন মনে রাখতে হবে এ কারণগুলোর জন্য শরীরের বিভিন্ন হরমোনের পরিবর্তন হয় ও ফলাফলে মানসিক রোগের সৃষ্টি হয়। তাই কারণ না বুঝে প্রথমে নারীর মনের অসুখের চিকিৎসা করুন ও পরে কারণ সমাধানের চেষ্টা করুন। তাহলেই রক্ষা পাবে নারীত্ব ও মাতৃত্ব।
বাংলাদেশের বিশিষ্ট মনোশিক্ষাবিদ, মনোবিজ্ঞানী ও মনোচিকিৎসক
অধ্যাপক ডা. এ এইচ মোহামমদ ফিরোজ
খুব ভালো হবে যদি এই সমস্যার জন্য সাধারণ সমাধান করা হয়.
ReplyDeleteএই সমস্যার জন্য পরামর্শ দিন.