Sunday 27 October 2013

৩জন সাইকিয়াট্রিস্ট দিয়ে চলে পাবনা মানসিক হাসপাতাল: ৫শ' বেডে বছরে ৩০ হাজার রোগীর চিকিত্সা

দেশের বিভিন্ন সেক্টরে উন্নয়ন ঘটলেও দীর্ঘদিনে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি দেশের মানসিক রোগের একমাত্র বিশেষায়িত হাসপাতাল 'পাবনা মানসিক হাসপাতাল'-এ। মাত্র ৯ জন চিকিত্সক দিয়ে চলছে এই হাসপাতালের কার্যক্রম। চিকিত্সক, কর্মকর্তা-কর্মচারী সংকট, যন্ত্রপাতির অভাবসহ নানা কারণে হাসপাতালের চিকিত্সা সেবা ব্যাহত হচ্ছে মারাত্মকভাবে। 

দেশের মানসিক রোগীর চিকিত্সা ও পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ১৯৫৭ সালে 'শীতলাই হাউজে' পাবনা মানসিক হাসপাতাল অস্থায়ীভাবে স্থাপন করা হয়। স্থাপনের ২ বছর পর ১৯৫৯ সালে পাবনা শহরের পশ্চিমে হাসপাতালটি হেমায়েতপুরে ১১১ দশমিক ২৫ একর জায়গার উপরে স্থানান্তর করা হয়।
প্রাথমিক অবস্থায় হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা ছিলো ৬০, যা এখন দাঁড়িয়েছে পাঁচ শ'তে। এই ৫০০ বেডের মধ্যে নন-পেয়িং বেড ৩৮০টি। বাকি ১২০টি পেয়িং বেড। মানসিক রোগের চিকিত্সায় দেশের প্রথম এবং একমাত্র এই হাসপাতালে প্রতি বছর গড়ে ৩০ হাজার রোগীকে চিকিত্সা দেয়া হয়। 

এক, দুই, তিন তলা বিশিষ্ট ৫৩টি ভবন নিয়ে ১৯৫৭ সালে এই হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু। এগুলোর মধ্যে ১২টি ভবন ব্যবহার অনুপযোগী হওয়ায় পরিত্যক্ত। ২০টি ভবন পাবনা মেডিক্যাল কলেজ ব্যবহার করছে। হাসপাতালের কার্যক্রম চলছে বাকি ভবনগুলোতে। নতুন কোন ভবন স্থাপিত হয়নি। হাসপাতালের চিকিত্সকরা জানান, আউটডোরে যেসব রোগী চিকিত্সাসেবা নিতে আসে তাদের অধিকাংশই ভর্তিযোগ্য। কিন্তু বেড স্বল্পতার কারণে তাদের ভর্তি করা সম্ভব হয় না। এর সাথে আছে চিকিত্সক, কর্মকর্তা-কর্মচারী সংকট। হাসপাতাল প্রশাসন জানিয়েছে হাসপাতালের চিকিত্সক-কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ মঞ্জুরিকৃত ৫০৪টি পদের বিপরীতে বর্তমানে কর্মরত আছেন ৩২৩ জন। 
৫০০ রোগীর জন্য মাত্র ৩জন সাইকিয়াট্রিস্ট,একজন ক্লিনিক্যাল সাইকলজিস্ট, সাইকিয়াট্রি সোশাল ওয়ার্কার ৩জন, ৩জন অকুপেশনাল থেরাপিস্ট, নার্স প্রায় ৩০০ জন।কাজ চালানোর জন্য বাধ্য হয়ে পাবনা মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষক চিকিত্সকদের কেউ কেউ এখানে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। মানসিক রোগীদের জন্য বিশেষায়িত এই হাসপাতালের পরিচালক পদে কর্মরত আছেন ডা. কেরামত আলী। 

হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্টের ২টি পদের, ক্লিনিক্যাল সাইকিয়াট্রিস্টের ১টি পদের এবং আবাসিক মেডিক্যাল অফিসারের ১টি পদের বিপরীতে দীর্ঘদিন যাবত্ কেউ যোগদান করেননি। বদলিজনিত কারণে হাসপাতালের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই পদগুলো দীর্ঘদিন খালি। 

অন্যান্য পদের মধ্যে মেডিক্যাল অফিসারের ৭টি পদের বিপরীতে ২টি, সাইকিয়াট্রিক স্যোশাল ওয়ার্কারের ১টি পদ, সহকারী রেজিস্ট্রারের ৩টি পদ, এসএলপিপির ১টি পদ, ডেন্টাল সার্জনের ১টি পদ, আবাসিক সাইকিয়াট্রিস্ট-এর ১টি পদ, ক্লিনিক্যাল প্যথলজিস্ট ১টি পদ দীর্ঘদিন থেকে খালি রয়েছে। চিকিত্সকদের বাইরে সিনিয়র স্টাফ নার্সের ৫৫টি, সহকারী সেবকের ১৬টি, বায়োকেমিস্টের ১টি, স্টাফ নার্সের ২১টি, লন্ড্রি সুপারভাইজার-এর ১টি, ড্রাইভার ১টি, সহকারী থেরাপিস্টের ২টি, স্টেনোগ্রাফারের ১টি, অফিস সহকারী কাম মুদ্রাক্ষরিকের ৩টি, ইমাম ১টি, এমএলএসএস এর ১৩টি, ওয়ার্ড বয় এর ২৪টি, কুক মশালচির ৮টি, মালীর ৩টি, সুইপারের ১৪টি, ইইজি টেকনিশিয়ানের ১টি, টেলিফোন অপারেটরের ১টি পদ খালি রয়েছে। 

হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ কেরামত আলী শেখসহ অন্যরা জানান, বেশিরভাগ চিকিত্সক পাবনার চেয়ে ঢাকাকেই তাদের কর্মস্থল হিসাবে বেশি পছন্দ করায় এই শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে।


রুমী খোন্দকার

No comments:

Post a Comment