Thursday 31 October 2013

বাংলাদেশে মানসিক রোগীর সংখ্যা বাড়ছেই

মানুষ যখন খাওয়া-দাওয়া করে তখন প্লেট-চামচের শব্দ আমার অসহ্য লাগে। গা শিরশির করে, বমি আসে। মাথাব্যথা শুরু হয়। এমনকি আমি খাবার চিবানোর শব্দও শুনতে পারি না। অসুস্থ হয়ে পড়ি। তাই হাসপাতালে এসেছি। কথাগুলো বললেন ২৭ বছরের যুবক আরেফিন। সম্প্রতি ঢাকার মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে আরেফিন এসেছেন চিকিৎসা নিতে। শুধু আরেফিন নয় এমন অনেক রোগীই প্রতিদিন হাসপাতালে আসেন। বাংলাদেশে মানসিক রোগীর মধ্যে তরুণ- তরুণীদের সংখ্যা বাড়ছে। ঢাকার শ্যামলীর মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, দেশে মানসিক রোগীর সংখ্যা আড়াই কোটি, যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৫ শতাংশ। মানসিক রোগে আক্রান্ত মোট রোগীর মধ্যে ‘মেজর ডিপ্রেসিভ ডিজওর্ডারে’ ভোগে ৪৬ দশমিক
১ শতাংশ ও সিজ্রোফেনিয়ায় ভোগে ৬ দশমিক ১ শতাংশ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে  বাংলাদেশে মানসিক রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষতি, কর্মহীনতা ও বেকারত্ব, দুশ্চিন্তা, রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক অব্যবস্থা এবং আর্থিক ক্ষতি, প্রযুক্তির অপব্যবহার, পারিবারিক ও সামাজিক অবহেলা, নির্যাতন, ভীতি ও অজ্ঞানতা ইত্যাদি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডা. এসএসআই মল্লিক বলেন, সামাজিক পরিস্থিতি যত খারাপ হয় মানসিক রোগীর সংখ্যা তত বেশি হয়। এ ছাড়া যারা বেশি চাপে থাকেন, যারা বেশি আবেগপ্রবণ তারা এ রোগে আক্রান্ত হন বেশি। অনেক সময় শৈশব-কৈশোরে মানসিক কষ্ট পেলে বয়ঃপ্রাপ্ত হলে তাদের মানসিক রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। জরিপে দেখা গেছে, সাধারণত মানুষ ১৫ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে মানসিক রোগে বেশি ভোগে। শিশু-কিশোরদের মধ্যে ১৮ দশমিক ৪ শতাংশ মানসিক রোগে আক্রান্ত। এদের মধ্যে অন্যদের সঙ্গে মিশতে চায় না ১ দশমিক ৬ শতাংশ। অন্যান্য বিষয়ে মেয়েরা এগিয়ে থাকলেও এ রোগের ক্ষেত্রে ছেলেদের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ। উচ্চ মাধ্যমিক ও গ্রাজুয়েশন করা ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে এ রোগ বেশি। অবিবাহিতরা বিবাহিতদের চেয়ে মানসিক রোগে বেশি ভোগে। গ্রামের চেয়ে শহরের মানুষ মানসিক রোগগ্রস্ত হয় বেশি। এর প্রধান কারণ, শহরের বাসিন্দারা নানামুখী চাপে থাকেন। চাকরি না পাওয়ায় বেকাদের মধ্যে অবসন্নতা ও হতাশা দেখা যায় বেশি। এক জরিপে দেখা গেছে, খুলনায় মানসিক রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এর পরিমাণ ২২ দশমিক ৪৭ শতাংশ। এরপর রয়েছে বরিশাল। মানসিক রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর আশপাশের মানুষের কাছ থেকে অপ্রত্যাশিত ব্যবহার পেয়েছে ৫১ শতাংশ। এ ধরনের রোগীরা সুচিকিৎসা থেকেও বঞ্চিত। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে তাদের জন্য বেড রয়েছে ৭০০। চিকিৎসকের সংখ্যা ১৩৪ জন। এমনকি বাজেটে মানসিক স্বাস্থ্য খাতের জন্য আলাদা বরাদ্দ নেই। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে স্বাস্থ্য খাতে যে বাজেট বরাদ্দ হয় তার দশমিক চার ভাগ বরাদ্দ হয় মানসিক স্বাস্থ্য খাতে

আফরোজা নাজনীন

No comments:

Post a Comment