Saturday 25 October 2014

বাংলাদেশে প্রতিদিন ২৯ জন আত্মহত্যা করে

বাংলাদেশে প্রতিদিন গড়ে ২৯ জন আত্মহত্যার অপরাধ করছে। প্রতি বছর গড়ে দশ হাজার আত্মহত্যা করছে। এর চেয়েও বেশি মানুষ প্রতিদিন আত্মহত্যা চেষ্টা করছে। এছাড়া হাসপাতালগুলোর জরুরি বিভাগে আত্মহত্যার চেষ্টা করে ব্যর্থ হওয়া রোগীর সংখ্যাই বেশি। পুলিশ সদর দফতর থেকে প্রাপ্ত পরিসংখানে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
২০১৪ সালের বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্টে বলা হয়েছে, প্রতি বছর আট লাখ মানুষ অর্থাত্ প্রতি ৪০ সেকেন্ডে পৃথিবীর কোথাও একজন আত্মহত্যা করছে। এদের অধিকাংশের বয়স ১৫ থেকে ৫৯ বছরের মধ্যে।
রিপোর্টে আরো বলা হয়েছে, ২০২০ সাল নাগাদ প্রতি বছর সাড়ে ১৫ লাখ

মানুষ আত্মঘাতী হবে। আত্মহত্যার চেষ্টা চালাবে এরও চেয়ে দশগুণ মানুষ।
বিশ্ব আত্মহত্যা দিবস উপলক্ষে ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে অরকিড সাইকোলজি রিসার্চ সেন্টারের উদ্যোগে আয়োজিত ‘আত্মহত্যা প্রতিরোধে বিকল্প চিন্তা ও প্রস্তাবণা’ শীর্ষক সেমিনারে এসব তথ্য জানান, অরকিড সাইকোলজি রিসার্চ সেন্টারের গবেষক ও সাইকোথেরাপিস্ট মনোবিজ্ঞানী উম্মে কুলসুম কলি।
তিনি বলেন, বিশ্বাস ঘাতকতা, মিথ্যা অপবাদ, অপমান, সমাজে সবার সামনে ছোট হওয়া হেরে যাওয়ার মতো ঘটনা অনেকের জীবনেই ঘটে। কিন্তু সবাই খুন বা আত্মহত্যা করে না। নিজেকে বা অন্যকে খুন করা কখনও প্রতিবাদের ভাষা হতে পারে না। এটি কোনো সমস্যার স্থায়ী সমাধান নয় বরং সকল সমস্যাকে আরও শতগুণ বাড়িয়ে তোলে, এতে আরও গভীর জটিলতার সৃষ্টি হয়। আপনজন, কাছের মানুষদের আরও দীর্ঘমেয়াদি কঠিন বিপদে ফেলে।
তিনি বলেন, জীবনের কোনো কঠিন সমস্যার মুখোমুখি হতে না পেরে, মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে শেষ পর্যন্ত যদি আমাদের ছেলেমেয়েরাই আত্মহত্যা করে। তাহলে তাদের জন্য এতটাকা খরচ করে পড়াশোনা শিখিয়ে লাভটা হচ্ছে কি? তার চেয়ে তাদের অশিক্ষিত রাখাই ভালো। এখানে উপস্থিত যে কারও পরিবারে এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটতে পারে। কাজেই আমাদের এ ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে।
আত্মহত্যার কারণ হিসেবে তিনি কুসংস্কার ও বদ্ধমূল ধারণা, চিন্তার বিক্ষিপ্তিতা ও অদূরদর্শিতা, নিয়ন্ত্রহীন রাগ জিদ ক্ষোভ ভয়, ধৈর্য ও সহ্য শক্তির অভাব, অতি উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও অতিমাত্রায় আত্মমর্যাদাবোধ, অজুহাত প্রদান এছাড়াও মিডিয়াতে ফলাও করে প্রতিদিন আত্মহত্যার খবর প্রচার করা এসবগুলোকে উল্লেখ করেন।
আত্মহত্যা বন্ধের বিকল্প চিন্তা হিসেবে তিনি বলেন, নিরাপত্তাবোধই ব্যক্তির মনে শক্তি, সাহস ও আনন্দ জোগায়। আত্মবিশ্বাসের অভাবই মানুষের মনে ভয় সৃষ্টি করে। তাই আত্মহত্যা প্রতিরোধে পারস্পরিক সম্পর্ক, খেলাধুলা, শৈশবকালীন শিক্ষা, জ্ঞানার্জনের উদ্দেশে লেখাপড়া, নিজেকে চেনার চর্চা করা, সমস্যার সঠিক ব্যাখ্যা, ক্ষমা করার চেষ্টা, নিজেকে পরিবর্তনের চেষ্টা, পজেটিভ চিন্তা, স্রষ্টার প্রতি আস্থা বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে।
এছাড়াও তিনি কয়েকটি প্রস্তাবনার কথা বলেন, সরকারি উদ্যোগে কাউন্সিলিং প্রদান, পক্ষ সমর্থন নয় এবং গণমাধ্যমের সহযোগিতা কামনা করেন। প্রাইমারি স্কুলের পাঠ্যসূচিতে মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতার বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করতে হবে এবং মিডিয়াতে আত্মহত্যার খবরগুলো প্রচার বন্ধ করতে হবে। 

কৃতজ্ঞতাঃ আমার দেশ

No comments:

Post a Comment