Friday 30 October 2015

বেশিরভাগ মানসিক ও মাদক নিরাময় কেন্দ্রই মানহীন

নামের আগে বা পরে জুড়ে দেয়া আছে মানসিক ও মাদকাসক্ত নিরাময় হাসপাতাল। যেখানে মানসিক ও মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের চিকিৎসা সুবিধা বলতে কিছুই নেই। এমনকি একই প্রতিষ্ঠানে মানসিক ও মাদকাসক্তি দুই ধরনের সেবাও দেয়া হচ্ছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের লাইসেন্স নেই, মানা হয় না স্বাস্থ্য অধিদফতরের কোনো নীতিমালা। পর্যাপ্ত ডাক্তার নেই, পর্যাপ্ত নার্স নেই, ওষুধের বক্সে ওষুধের নাম নেই, মাদকাসক্ত ও মানসিক রোগীদের পৃথক থাকার ব্যবস্থা নেই, সেবার মূল্য তালিকা নেই। এমনকি নেই স্বাস্থ্য অধিদফতরের লাইসেন্স ও মানসিক ডাক্তারও। আছে শুধু অভিযোগ আর অভিযোগ। এমন চেহারাই রাজধানীর সিংহভাগ মানসিক ও মাদকাসক্ত হাসপাতাল নামের প্রতিষ্ঠানগুলোর। সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদফতর অভিযান পরিচালনা করে এমন বেশ কিছু হাসপাতাল নামের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করেছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ অব্যাহত থাকবে বলেও নিশ্চিত করা হয়েছে।
অভিযান সংশ্লিষ্টরা জানান, অভিযানে গিয়ে দেখা যায়, এসব নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসার পরিবর্তে রোগীর ওপর করা হয় শারীরিক নির্যাতন। ডিউটি ডাক্তার শুধু রোগের বিবরণ লিখেই খালাস। মাদক নিরাময়ের নামে কোনো
কোনোটাতে চলে মাদকের ব্যবসা। ছোট ছোট কয়েকটি ঘর নিয়ে গড়ে ওঠা এসব ভুয়া নিরাময় কেন্দ্রের ভেতরেই রান্না ও থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা। রয়েছে রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে ইচ্ছামতো অর্থ আদায় করার অভিযোগ। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে মানসিক ও মাদকাসক্ত রোগী একসঙ্গে ভর্তি করে বছরের পর বছর কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের মতো করে সেবা দেয়ার নামে চলে প্রতারণা। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বালাই না থাকায় ছারপোকার কামড়ে অনেক রোগীর হাত-পায়ে চর্মরোগের সৃষ্টি হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্র জানায়, বেসরকারি মাদকাসক্তি নিরাময় ও মাদকাসক্ত পুনর্বাসন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা এবং পরিচালনার জন্য সরকারি শর্তাবলীর মধ্যে রয়েছে- আবাসিক এলাকায় পাকা বাড়ি বা ভবন, পর্যাপ্ত আলো-বাতাস, নিরিবিলি সুন্দর পরিবেশ থাকতে হবে। একজন রোগীর জন্য কমপক্ষে ৮০ বর্গফুট জায়গা ও পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকতে হবে। অন্যদিকে প্রতি ১০ বেডের জন্য পৃথক একটি টয়লেট, বাথরুম, বিশুদ্ধ পানি, অন্যান্য সুব্যবস্থা এবং খণ্ডকালীন বা সার্বক্ষণিক একজন মনোচিকিৎসক, সার্বক্ষণিক একজন ডাক্তার, দুজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্স, একজন সুইপার বা আয়া এবং জীবন রক্ষাকারী উপকরণ ও অত্যাবশ্যক ওষুধ থাকতে হবে। এছাড়া মাদকাসক্ত ব্যক্তির রক্ত, কফ, মলমূত্র ইত্যাদি পরীক্ষার জন্য অনুমোদিত যে কোনো ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সঙ্গে সম্পৃক্ত ও চিকিৎসা সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য সংরক্ষণের সুবিধা থাকতে হবে। কেন্দ্রে একক বা দলগত পরামর্শক এবং মানসিক বিনোদনের জন্য অভ্যন্তরীণ খেলাধুলা, পত্রিকা, ম্যাগাজিন, টেলিভিশন ও কাউন্সেলিংয়ের জন্য ২০ জনের উপযোগী একটি শ্রেণীকক্ষ থাকা প্রয়োজন। কিন্তু অধিদফতরের তথ্য মতে, ঢাকার প্রায় ৯০ শতাংশ নিরাময় কেন্দ্রই মানছে না এ নিয়মগুলো।
এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল) অধ্যাপক ডা. শামিউল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, একশ্রেণীর অসাধু লোক নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে, নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে মানসিক ও মাদক নিরাময় হাসপাতালের নামে রমরমা ব্যবসা করে আসছে। এসব প্রতিষ্ঠানে কোনো রোগী গেলে তিনি আরও অসুস্থ হয়ে পড়বেন। তাছাড়া একই সঙ্গে মাদকাসক্ত এবং মানসিক রোগীর চিকিৎসা দেয়া যায় না। তাদের চিকিৎসা পদ্ধতি ভিন্ন তাই তাদের জন্য পৃথক থাকার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতর এসব নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। তিনি বলেন, যে অভিযান শুরু হয়েছে তা অব্যাহত থাকবে এবং এ ধরনের প্রতিষ্ঠান সব বন্ধ করে দেয়া হবে।
যুগান্তর 
৩১ অক্টোবর, ২০১৫

No comments:

Post a Comment