হিকিকোমরি রোগ কি? যখন কোন ব্যক্তি দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, এমনকি বছরের পর বছর ঘর থেকে বের হয় না, তখন এ রোগকে হিকিকোমোরি রোগ বলে। জাপানে এমন লাখো তরুন আছে যারা বছর , ৫/১০ বছর ঘর থেকে বের হয় না।
বাইরের জগৎ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে একা ঘরে আটকে ফেলেছেন নিজেদের। সারা সকাল ঘুমিয়ে জেগে উঠছেন রাতে। এর পর গোটা রাত চোখ আটকে কম্পিউটারের পর্দায়!
পরিবার, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়স্বজন যোগাযোগ তো দূরের কথা, কারো সাথে কারো পর্যন্ত নেই। কেউ ছয় মাস, কেউ আবার ৩০ বছর নিজের ঘরের বাইরে পা রাখেননি।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যুবকরাই হিকিকোমরি রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। কেউ সদ্য কলেজ পেরিয়েছেন। কেউ এখনো কলেজের চৌকাঠও পেরোননি। এবং এটাই বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কার সবচেয়ে বড় কারণ। তারা মনে করছেন, মেধাবী এবং কর্মঠ তরুণ-তরুণীরা নিজেদের সমাজ থেকে আলাদা করে নিলে তার মারাত্মক প্রভাব পরতে পারে দেশের অর্থনৈতিক পরিকাঠামোর উপরে। আক্রান্তের তালিকায় অবশ্য রয়েছেন মধ্যবয়সীরাও। যাদের অনেকেই ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে স্বেচ্ছা-বন্দি।
ছাত্রাবস্থায় এই জটিলতার শিকার হয়েছিলেন তাকাহিরো কাটো। এখন তিনি হিকিকোমরি বিশেষজ্ঞ। কাটোর কথায়, ‘‘জাপানের জনসংখ্যার এক শতাংশ হিকিকোমরি বা এই জাতীয় মানসিক জটিলতার শিকার। এটা অত্যন্ত দুশ্চিন্তার বিষয়। আক্রান্তরা অধিকাংশই বিশ্ববিদ্যালয় পেরনো। অনেকেই নামী প্রতিষ্ঠান থেকে পাশ করেছেন। এভাবে তরুণ প্রজন্ম সমাজ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলে দেশের অর্থনীতির উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। কিন্তু উঠতি প্রজন্মের মধ্যেই এর বিস্তার বাড়ছে ক্রমশ।”
যার নজির ১৮ বছরের ইউতো ওনিশি। তিন মাস হলো চিকিৎসা শুরু হয়েছে ইউতোর। তার আগের তিন বছর শোয়ার ঘরের চৌকাঠ পেরোননি তিনি। সারা সকাল ঘর বন্ধ করে ঘুমোতেন। আর সারা রাত বসে থাকতেন কম্পিউটারের সামনে। ওনিশির নিজেই বলছেন, ‘‘আমি জানি এটা অস্বাভাবিক। কিন্তু আমি এভাবেই থাকতে চাই। একবার এভাবে থাকতে শুরু করলে বাস্তব জগত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় মানুষ।”
জাপানি বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, হিকিকোমরি শব্দটা অসুখ এবং আক্রান্ত দুই ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
জাপানের স্বাস্থ্য, শ্রম এবং উন্নয়ন মন্ত্রীর মতে, হিকিকোমরিরা সমাজ থেকে সম্পূর্ণ সরিয়ে ফেলেন নিজেদের। কোনো কাজ বা লেখা পড়ায় যাবতীয় আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। পরিবারের ঘনিষ্ঠদের সাথেও সম্পর্ক রাখেন না। কখনো ছয়মাস, কখনো আবার বছরের পর বছর ধরে চলে এই অবস্থা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মধ্যবিত্ত পরিবারের তরুণ-তরুণীরাই এই রোগে আক্রান্ত হন। নিম্নবিত্তদের মধ্যে এর নজির প্রায় নেই বললেই চলে। তার মতে, মধ্যবিত্ত পরিবার, পরিবেশেই এই জটিলতার ঝুঁকি বেশি।
কিন্তু কেন? সঠিক জবাব নেই। তবে একটা সম্ভাব্য কারণ তুলে ধরছেন তিনি। জাপানে ছেলেমেয়েদের মধ্যে, বিশেষত ছেলেদের মধ্যে সেরা কলেজে সুযোগ পাওয়া, ভালো নম্বর পাওয়া এবং পরবর্তীতে ভালো সংস্থায় চাকরি পাওয়ার চাপ থাকে অত্যন্ত বেশি। সেই মানসিক চাপ সহ্য করতে না পেরে, একপ্রকার গা বাঁচাতেই সমাজ-বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন তারা।
অনেক সময় দেখা যাচ্ছে, ছেলে-মেয়েদের এই অস্বাভাবিক আচরণ সমর্থন করছেন বাবা-মায়েরাই। তবে এটা একটা সম্ভাবনা মাত্র। আর তাই তিনি বলছেন, ‘‘চিকিৎসা নয়, এ রোগের কারণ খুঁজে বার করতে হবে আগে।”
ইন্টারনেট
*** আমার কথা
আমাদের দেশে উচ্চবিত্তের ছেলে-মেয়েদের ইদানীং এই বাহিরে না যাবার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। সারাদিন তারা ঘরে, বেডে, টয়লেটে কম্পিউটার, মোবাইলে ব্যস্ত থাকে। এখনই উদ্যোগ না নিলে অদূর ভবিষতে হয়তো আমাদের এই ছেলে-মেয়েরাও হিকিকোমরি রোগে আক্রান্ত হবেন।
No comments:
Post a Comment