Sunday 8 September 2019

বডি ডিস মরফিক ডিসঅর্ডার: নিজেকে কুৎসিত ভাবার মেনিয়া

বডি ডিস মরফিক ডিসঅর্ডার (বিডিডি) এমনই একটি মানসিক রোগ, যে রোগে আক্রান্তদের বিশ্বাস, তাদের শরীরের কোনো একটি অংশ পুরো শরীরের সাপেক্ষে ত্রুটিপূর্ণ। যদিও বাস্তবে তার কোনো অস্তিত্ব নেই বা থাকলেও নগণ্য।
Image may contain: 6 people, people smiling, child and close-up
নিজেদের শরীরের এসব তথাকথিত গঠনগত অস্বাভাবিকতা ও ত্রুটির কারণে রোগী প্রচন্ড হীনম্মন্যতায় ভুগতে শুরু করেন এবং নিজেদের গুটিয়ে নেন। কেউ কেউ এতটাই জেদী হয়ে ওঠেন যে, শল্যচিকিৎসার মাধ্যমে হলেও তাদের চেহারার কাঠামোগত ত্রুটি দূর করতে উঠেপড়ে লাগেন। ত্রুটি সারানোর যতই চেষ্টা তারা করুক না কেন, তাদের মনের ভুল ধারণার কোনো পরিবর্তন হয় না বললেই চলে।
এই রোগে আক্রান্ত রোগীরা বিশ্বাস করেন তাদের শরীরের কোনো একটি অংশ কুৎসিত, আসামঞ্জস্যপূর্ণ, ত্রুটিপূর্ণ যদিও বাস্তবে এদের শরীরে কোনো ত্রুটি নেই বা থাকলেও তা অতি
নগণ্য।
এই কাল্পনিক ত্রুটির জন্য রোগী প্রচণ্ড টেনশন, হতাশায় ভোগেন। এটি দূর করার জন্য পাগল হয়ে ওঠেন। রোগীর পরিবার এই কাজে বাধা দিলে রোগী হিংস্র হয়ে উঠে, আত্মহত্যার হুমকি দেয়।
এই ত্রুটি দূর করার জন্য তারা সাধারণত কসমেটিক সার্জনের কাছে যায়। সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে সাধারণত আসে না আসতে চায়না না। এই রোগীরা বারবার আয়নায় নিজেকে দেখে, অন্যদের সঙ্গে নিজের ত্রুটিযুক্ত (কাল্পনিক) অংশের তুলনা করে।
শরীরের কোন কোন অংশের ত্রুটি রোগী শনাক্ত করে
* ফিগার * নাক * ঠোঁট * মুখ * চোখ * ব্রেস্ট (এসব সাধারণত মেয়েদের ক্ষেত্রে)
*নিতম্ব * পুরুষাঙ্গ (পুরুষদের ক্ষেত্রে)
১৯৮০ সালে রোগটি 'Atypical somatoform disorder' নামে অ্যামেরিকান সাইকিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশনের তৈরি করা মানসিক রোগের শ্রেণীবিন্যাস এর ৩য় সংস্করণে (DSM-II) স্থান পায়। ১৯৮৭ সাল থেকে এটি Body Dysmorphic Disorder নামে পরিচিত হতে থাকে।
বিশ্বখ্যাত পপ গায়ক মাইকেল জ্যাকসন বডি ডিস মরফিক ডিসঅর্ডার রোগে আক্রান্ত ছিলেন। চিকিৎসকদের নিষেধ সত্ত্বেও জীবদ্দশায় তিনি মোট ১১ বার কসমেটিক সার্জারি করিয়েছিলেন।
উপসর্গ
*নিজের ক্রুটিপূর্ণ (!) শরীর ও চেহারার গড়ন নিয়ে মনে বারবার অহেতুক চিন্তার উদয় হওয়া।
*ঘন ঘন আয়নায় নিজেকে দেখার প্রবণতা।
*পরিবারের সদস্য, বন্ধুবান্ধব কিংবা কাছের মানুষের কাছ থেকে শরীরের ত্রুটিযুক্ত অংশ সম্পর্কে নানা প্রশ্ন করে নিজের বদ্ধমূল ধারণা যাচাই করা।
*অন্যের মুখ থেকে সান্ত্বনা ও আশ্বাসের বাণী শুনতে উন্মুখ হয়ে থাকা।
*অন্যদের সঙ্গে নিজের ত্রুটিযুক্ত (কাল্পনিক) অংশের তুলনা করা। যেমন- নাক, ঠোঁট, চোখ, ব্রেস্ট (সাধারণত নারীদের ক্ষেত্রে), নিতম্ব, পুরুষাঙ্গ (পুরুষের ক্ষেত্রে) ইত্যাদি।
*নিজের সম্পর্কে হীনম্মন্যতার বোধ জাগ্রত হওয়া।
*নিজের চেহারার গড়নের জন্য মনে অস্বস্তি এবং ভয়ের জন্ম হওয়া।
জটিলতা
এই রোগের ফলে সৃষ্ট জটিলতাগুলো হলো
ক. বিষণ্ণতা
খ. আত্মহত্যার প্রবণতা
গ. শুচিবাই
ঘ. সোশ্যাল ফোবিয়া
চিকিৎসা
বিডিডির চিকিৎসায় বিভিন্ন পদ্ধতির ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। এসব পদ্ধতিকে মোটা দাগে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়।
১. সাইকোথেরাপি
কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি (সিবিটি): এই দীর্ঘমেয়াদি থেরাপি প্রয়োগের মাধ্যমে বিডিডি রোগীর মনে লুকিয়ে থাকা ত্রুটিপূর্ণ শারীরিক গঠনের বদ্ধমূল বিশ্বাসকে পরিবর্তন করার চেষ্টা করা হয়।
সাইকো এডুকেশন: রোগী ও তার পরিবারকে বিডিডি সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান দেওয়া হয়। পাশাপাশি সাইকোথেরাপি এবং ওষুধের ভূমিকা, উপকারিতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে অবহিত করা হয়।
অন্তর্জাল

No comments:

Post a Comment