Tuesday 12 November 2019

ফাইব্রোমায়ালজিয়া

শীত আসছে... আপনার মানসিক চাপের জন্য ফাইব্রোমায়ালজিয়ার ব্যথা বাড়তে পারে
ফাইব্রোমায়ালজিয়া কি?
ফাইব্রোমায়ালজিয়া হচ্ছে শরীরের একটি যন্ত্রণাদায়ক অবস্থা, যার ফলে শরীরের সমস্ত পেশী আক্রান্ত হয়। অনেকেই এই রোগটাকে আরথাইটিস বলে ভুল করেন। আমাদের দেশে প্রচুর মানুষ Image result for ফাইব্রোমায়ালজিয়া
এই রোগে আক্রান্ত। অথচ আমরা এটা বুঝতেই পারিনা। এটি মহিলাদের মধ্যেই সাধারণত লক্ষ্য করা যায়।

ফাইব্রোমায়ালজিয়ার সমস্যার ফলে যে ব্যথার সৃষ্টি হয় তার পিছনে আপাতভাবে কোনও বাহ্যিক কারণ থাকে না এবং এর ফলে সঠিক রোগ নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দেয়। আরো মজার ব্যপার হচ্ছে, এই ব্যথা শরীরের বিভিন্ন জায়গাতে কোন কারণ ছাড়াই শুরু হয়ে, ৩ থেকে ৭ দিন পর্যন্ত অবস্থান করতে পারে, আবার শরীরের অন্য স্থানে কোন কারণ ছাড়াই শুরু হয়ে আবার শেষ হতে পারে।

ফাইব্রোমায়ালজিয়া নামক অসুখের প্রকৃত কারণ এখনও অজানা। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যেসব মানুষ গভীর মানসিক চাপের শিকার হয় তাদের ক্ষেত্রে ফাইব্রোমায়ালজিয়া দেখা যায়। এছাড়া এই সমস্যার ক্ষেত্রে বংশগত বা জিনের ভূমিকাও রয়েছে।

যেসব উপসর্গগুলি বেশিরভাগ হয়, সেগুলি হলো :

✪যন্ত্রণা, সারা শরীরে ব্যথাভাব এবং শরীর আড়ষ্ঠ (শরীরকে নড়ানো বা বাঁকা করা যায় না) হয়ে যায়, বিশেষ করে নির্দিষ্ট কিছু জায়গাতে
আলস্য ভাব
✪ভালো করে ঘুমোতে না পারা
✪প্রচণ্ড যন্ত্রণা
✪প্রচণ্ড মাসিকের ব্যথা
✪হাত পা অসাড় হয়ে যাওয়া এবং ঝিঁঝিঁ ভাব
✪স্মৃতিশক্তির সমস্যা
✪বিষন্ন বোধ করা বা ডিপ্রেশনে চলে যাওয়া

এই সমস্যায় আক্রান্ত মানুষের বন্ধু ও পরিবারের সদস্যরা কিছুতেই বুঝতে পারে না যে কীভাবে একজন স্বাস্থ্যবান মানুষ সাধারণ কাজকর্ম করতে অক্ষম হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষায় প্রায়শই কোনও বাহ্যিক কারণ ধরা পড়ে না। যার ফলে রোগাক্রান্ত মানুষের মেজাজ-মর্জিগত পরিস্থিতি তার চারপাশে থাকা লোকজন বুঝতে
ভুল করে।

ফাইব্রোমায়ালজিয়ার অবশ্যই একটা মানসিক ভিত্তি রয়েছে। কারণ একজন মানুষ ব্যথা অনুভব করছে অথচ পরীক্ষা-নিরীক্ষায় কোনও আঘাত বা ক্ষত ধরা পড়ছে না। সেই সঙ্গে ব্যথাটা প্রকৃত, গুরুতর এবং অনেকসময়ে তা অসহনীয় বোধ হচ্ছে। এমনকী এর ফলে বিছানা ছেড়ে ওঠাটাই কঠিন হয়ে দেখা দেয়।

ফাইব্রোমায়ালজিয়ার সঙ্গে প্রায়শই মানুষের মানসিক চাপের লক্ষণগুলোর মিল দেখতে পাওয়া যায়। অর্থাৎ, চাপের ফলে এই রোগের লক্ষণগুলোর আরও অবনতি হতে দেখা যায়; এবং চাপ নিয়ন্ত্রণের মধ্য দিয়েই লক্ষণগুলোও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভবপর হয়। ফাইব্রোমায়ালজিয়ার ফলে দশজনের মধ্যে ন'জনের ক্ষেত্রে মানসিক অবসাদের লক্ষণ প্রকাশ পায়।

চিকিৎসার পদ্ধতি হিসেবে ব্যথা-নিরোধক এবং সেই সঙ্গে কম মাত্রার অবসাদ-বিরোধী ওষুধ প্রয়োগের ব্যবস্থাও রয়েছে। তবে ব্যথা নিরোধক ঔষধে সাময়িক কাজ করে মাত্র। থেরাপির সাহায্যেও রুগি তার মানসিক চাপের মোকাবিলা ও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়। এছাড়াও প্রয়োজন হয়-

★একজন মানসিক স্বাস্থ্যের বিশেষজ্ঞের সঙ্গে আলোচনা করা এবং নিয়মিত থেরাপি করানো।

★ডাক্তারের সঙ্গে দৈনন্দিন শরীরচর্চাজনিত রুটিন নিয়ে কথাবার্তা বলা এবং সেই রুটিন মেনে চলা। শরীরচর্চা দৈহিক যন্ত্রণা দূর করতে সাহায্য করে। যদি কোনও কারণে কোনও একদিন শরীরচর্চা করা না হয় তাহলে অন্যভাবে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সঞ্চালন এবং বাড়ির চারপাশে হাঁটাহাঁটি করা, সুষম খাবার খাওয়া প্রয়োজন।

★চারপাশের মানুষের সহযোগিতা দরকার। তাই এমন বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের সদস্যের উপস্থিতি দরকার যারা রুগিকে বুঝতে পারে।



★মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। রুগির ডাক্তার তাকে বোঝাতে পারে যে কী পরিস্থিতিতে তার মানসিক চাপ দেখা দিচ্ছে এবং সেই চাপের মোকাবিলা কীভাবে করা যায়।

No comments:

Post a Comment