Wednesday 30 December 2020

ইন্ট্রোভার্ট বা অন্তর্মুখী

ইন্ট্রোভার্ট শব্দের অর্থ অন্তর্মুখী। ইন্ট্রোভার্ট ব্যক্তি লাজুক হতে পারেন, কিন্তু এই বিশেষ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যটি লাজুকতা নয়। ইন্ট্রোভার্ট ব্যক্তি সম্পর্কে আমরা অনেকেই ভুল জানি। আমরা ভাবি, তারা মানুষের সঙ্গে মিশতে পারে না বা মিশতে পছন্দ করে না, সবার সঙ্গে সময় কাটাতে চায় না ইত্যাদি। কিন্তু অন্যদের মতোই ইন্ট্রোভার্ট মানুষও তাদের পছন্দের মানুষ বা সার্কেলের সঙ্গে থাকতে, কথা বলতে ভালবাসে। ইন্ট্রোভার্টরা ছোট ছোট বিষয় নিয়ে গসিপ করার চেয়ে কোন আইডিয়া বা চিন্তাধারা নিয়ে কথা বলে থাকে। ইন্ট্রোভার্টদের অনেকেই আছেন, যারা ঘরে থাকতেই বেশি পছন্দ করেন। আবার অনেক ইন্ট্রোভার্ট আছেন, যাদের সামাজিক অনুষ্ঠানই বেশি


পছন্দ। আপনি নিজেও হয়ত জানবেন না, আপনার সামনের হাসিখুশি সদালাপি মানুষটি আসলে ইন্ট্রোভার্ট। সত্যি কথা বলতে, ইন্ট্রোভার্ট ব্যক্তিদের সামাজিক দক্ষতা অনেক ভাল হতেই পারে, কিন্তু সেটা আমাদের চোখে পড়ে কম। তার প্রধান কারণ হলো, সামাজিক অনুষ্ঠান বা লোক সমাগমে সময় ব্যয় করার চেয়ে তারা নিজেদের চিন্তা-ভাবনা নিয়ে সময় ব্যয় করতে বেশি পছন্দ করে।


আমাদের সমাজে পঁচিশ থেকে চল্লিশভাগ মানুষই ইন্ট্রোভার্ট। তবে প্রকৃতি প্রদত্ত বিশেষ গুণাবলী সম্পন্ন মানুষ যাদের আমরা ‘গিফটেড পারসন’ বলে থাকি তাদের ৬০ ভাগই ইন্ট্রোভার্ট হয়ে থাকেন। অনেকের বদ্ধমূল ধারণা হলো ইন্ট্রোভার্ট মানুষজন জীবনে উন্নতি করতে পারে না। কিন্তু শুনলে অবাক হতে হয় পৃথিবীর অনেক বড় বড় খ্যাতিনামা লোক ইন্ট্রোভার্ট ছিলেন। জনপ্রিয় চরিত্র ‘হ্যারি পটার’-এর উদ্ভাবক জে. কে. রাওলিং ব্যক্তিগত জীবনে পুরোদস্তুর ইন্ট্রোভার্ট। তার ভাষ্যে- ইন্ট্রোভার্ট ব্যক্তিরা তাদের নিজেদের চিন্তাধারা নিয়ে নিজের মধ্যে থাকে নতুন কিছু তৈরি করার উদ্দেশ্যে। ‘মাইক্রোসফট’ এর প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান বিল গেটসও একজন ইন্ট্রোভার্ট। লেখক এবং ইন্ট্রোভার্ট বিশেষজ্ঞ ‘সুসান কাইন’ বিল গেটসকে ইন্ট্রোভার্ট আখ্যা দিয়েছেন। এ ধরনের ব্যক্তিগত জীবনে সফল আরও কিছু নাম এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায় যেমন- মার্কিন যুক্তরাজ্যের ১৬তম রাষ্ট্রপতি আব্রাহাম লিঙ্কন, বাফেট বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ের প্রধান নির্বাহী ওয়ারেন বাফেট, ফিজিক্সের বিস্ময় আলবার্ট আইন্সটাইন, মহাত্মা গান্ধী, ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা এবং সি.ই.ও মার্ক জাকারবার্গ এবং আরও অনেকে।

ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটির ‘শাইনেস রিসার্চ ইনস্টিটিউট’-এর মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক বার্নার্ডো যে কার্দুসি বলেছেন, “অনেক লাজুক মানুষই সামাজিক হতে চান। কিন্তু নানা রকম দুশ্চিন্তা এবং আত্মবিশ্বাসের অভাব তাদের এই সামাজিক হওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। লাজুক হওয়ার এটাই যন্ত্রণা।”লাজুক মানুষেরা ভেতরে ভেতরে অনেক মানুষের সাথে মিলে মিশে থাকতে চায়, কিন্তু সামাজিক যোগাযোগের অভাবে তারা এক ধরনের অস্বস্তি বোধ করে। এই অস্বস্তি একবার কাটিয়ে উঠতে পারলে দিব্যি এক্সট্রোভার্টের মতো মিশে যেতে পারে যে কারও সাথে।
ইন্ট্রোভার্ট হলেই যে তাকে এক্সট্রোভার্ট হওয়ার চেষ্টা করতে হবে তা কিন্তু নয়। ইন্ট্রোভার্ট হয়েও নিজেকে অনেকের মাঝে তুলে ধরা যায় নিজের কাজ, ক্ষমতা বা মানবীয় গুণাবলীর দ্বারা। তাই কেউ যদি নাক সিটকিয়ে আপনাকে ‘ইন্ট্রোভার্ট’ বলে আখ্যা দেয়, তাহলে মুখ কাচুমাচু করে আরও নিজের মাঝে সিটিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। নিজের সুন্দর দিকগুলো সবার মাঝে ছড়িয়ে দেয়াই হবে সেই ব্যবহারের প্রকৃত জবাব।
roar

No comments:

Post a Comment